পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ পরকালে জবাবদিহির চিন্তা চিরজাগ্রত রাখার তাগিদ দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক আগামীকালের জন্য সে কী অগ্রিম পাঠিয়েছে। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় করো; তোমরা যা কোরো আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত।’ (সুরা হাশর, আয়াত : ১৮)
এ বিষয়ে হাদিসেও মানুষকে সতর্ক করা হয়েছে। রাসলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন পাঁচটি প্রশ্নের জবাব না দিয়ে মানুষ আল্লাহর সামনে এক পা অগ্রসর হতে পারবে না। তা হলো : জীবন কোথায় নিঃশেষ করেছ?, যৌবন কোথায় ব্যয় করেছ?, সম্পদ কোথা থেকে অর্জন করেছ? তা কোথায় ব্যয় করেছ? যা জেনেছ তার কতটা আমল করেছ?’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৪১৬)
মহান আল্লাহর কাছে মানুষের কোন কিছু গোপন থাকে না। তিনি পৃথিবীর সবকিছুর সদা খবর রাখেন। তাঁর অজ্ঞাতে কোন গাছের পাতাও পতিত হয় না। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর নিকটে জমিন ও আসমানের কোনো কিছু গোপন থাকে না।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৫)
তিনি আরো বলেন, ‘তিনি মানুষের চোখের চোরা চাহনি এবং তাদের বুকে যা লুকিয়ে থাকে, সবই (আল্লাহ) জানেন।’ (সুরা মুমিন, আয়াত : ১৯)
গায়েবের চাবিকাঠি আছে মহান আল্লাহর হাতে। আল্লাহ বলেন, ‘আর গায়েবের চাবিকাঠি তাঁর কাছেই রয়েছে। তিনি ব্যতীত কেউই তা জানে না। স্থলে ও সমুদ্রে যা কিছু আছে, সবই তিনি জানেন। গাছের একটি পাতা ঝরলেও সেটা তিনি জানেন। মাটির নীচে অন্ধকারে লুক্কায়িত এমন কোন শস্যবীজ নেই বা সেখানে পতিত এমন কোনো সরস বা নীরস বস্তু নেই, যা (আল্লাহর) সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ নেই।’ (সুরা আনআম, আয়াত : ৫৯)
বান্দার ভালো–মন্দ কাজ–কর্ম তার আমলনামায় সুস্পষ্টরূপে লিপিবদ্ধ থাকবে। এই আমলনামা অনুযায়ী তার হিসাব হবে। কোনো কিছু গোপন করার সুযোগ কোন মানুষের থাকবে না। বান্দাকে স্বীয় আমলনামা পড়ার জন্য বলা হবে। আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেক মানুষের কৃতকর্মকে আমরা তার গ্রীবালগ্ন করে রেখেছি। আর কিয়ামতের দিন আমরা তাকে বের করে দেখাব একটি আমলনামা, যা সে খোলা অবস্থায় পাবে। (সেদিন আমরা বলব,) তুমি তোমার আমলনামা পাঠ করো। আজ তুমি নিজেই নিজের হিসাবের জন্য যথেষ্ট। যে ব্যক্তি সত্পথ অবলম্বন করে, সে তার নিজের মঙ্গলের জন্যেই সেটা করে। আর যে ব্যক্তি পথভ্রষ্ট হয়, সে তার নিজের ধ্বংসের জন্যেই সেটা হয়। আসলে একের বোঝা অন্যে বহন করে না। আর আমরা রাসুল না পাঠানো পর্যন্ত কাউকে শাস্তি দিই না।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ১৩–১৫)
কোনো পাপী ব্যক্তি যদি চিন্তা করে, আমি যে পাপাচারে লিপ্ত, কিয়ামতের দিন তো আল্লাহ আমাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করবেন যে বান্দা! এগুলো কেন করলে? নির্জনে লোকচক্ষুর অন্তরালে গিয়ে পাপগুলো করেছিলে। তুমি কি ভেবেছিলে যে তোমাকে কেউ দেখিনি? তোমার স্রষ্টা ও রব সর্বশক্তিমান আল্লাহ আমিও কি দেখিনি? হাশরের ময়দানে বান্দার সাথে আল্লাহ কথা বলবেন। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেকের সঙ্গে শিগগির তার রব কথা বলবেন, তখন রব ও তার মাঝে কোনো অনুবাদক থাকবে না এবং আড়াল করে এমন কোন পর্দা থাকবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ৭৪৪৩)