গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, ‘আগামী নির্বাচন হবে নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্তের, গণতান্ত্রিক সংবিধান প্রতিষ্ঠার, রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের সংস্কার ও জনগণের পক্ষের আইন তৈরির নির্বাচন। আগামীর সংসদ আমাদের লড়াইয়ের জায়গা। আমরা সেই লড়াই চালিয়ে যাব।
বৃহস্পতিবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলায় ছয়ফুল্লাকান্দি ইউনিয়নে শাহ রাহাত আলী মাজার প্রাঙ্গণে ‘নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত’ শীর্ষক গণসংলাপ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথাগুলো বলেন। ছয়ফুল্লাকান্দি ইউনিয়ন গণসংহতি আন্দোলন এই গণসংলাপের আয়োজন করে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ দীর্ঘ ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রাম করেছেন। বর্তমান রাজনৈতিক বন্দোবস্ত আমাদের সংকট–সংঘাত ছাড়া আর কিছুই দিতে পারে নাই। তার বিরুদ্ধেই ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে। জনতার স্পষ্ট বার্তা, এই বন্দোবস্ত আর চলবে না। আমাদের নতুন বন্দোবস্ত লাগবে।
আরও পড়ুন: ভালুকায় ইউনিয়ন ক্রিকেট টুর্নামেন্টের উদ্বোধন
নতুন বন্দোবস্তের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে জোনায়েদ সাকি আরও বলেন, ‘নতুন বন্দোবস্ত তৈরি করতে হয়। এটার মানে কী? এটার মানে হচ্ছে ক্ষমতা কীভাবে চলবে। ক্ষমতা চালানোর নিয়মটা কী? ক্ষমতা কি জমিদারি করে, নাকি ক্ষমতার কেন্দ্র হচ্ছে জনগণ। ক্ষমতাকে অবশ্যই জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হবে। কোনটা চাই, ওই জমিদারি নাকি জবাবদিহি? আগামী দিনের ক্ষমতা হবে জবাবদিহির ক্ষমতা। আর সেটাই নতুন বন্দোবস্ত।’
জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘যারা ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়, তাদের পরিণতি হবে শেখ হাসিনার মতো। কৃষক, শ্রমিক, ছাত্র ও জনতা এ দেশটাকে স্বাধীন করেছে। সবাইকে সঠিকভাবে মূল্যায়ন করতে হবে। এ সরকার রক্তের ওপর দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। আমরা এ সরকারকে মূল্যায়ন করব।
আরও পড়ুন: নির্বাচিত সরকার ছাড়া কোনো সংস্কারের বৈধতা আমরা দিতে পারব না: ফখরুল
গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের মানুষ নানাভাবে অত্যাচারিত হয়েছে উল্লেখ করে গণসংহতি আন্দোলনের এই নেতা আরও বলেন, ‘আমরা লড়াই করেছি গত ১৫ বছর এই ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে। যত রকম ভয়ের রাজত্ব তারা তৈরি করতে চেষ্টা করেছে, হামলা করেছে, মেরেছে, মামলা দিয়েছে। জেল-জুলুম করে কীভাবে সারা দেশে বিরোধী দল বিএনপিসহ অনেক দলের নেতা–কর্মী, হাজার হাজার, লক্ষ নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে। গুম করেছে, খুন করেছে। কীভাবে ক্রসফায়ার করে তারা মানুষ মেরেছে, আমরা দেখেছি। এই ভয়ের রাজত্ব সত্ত্বেও আমরা সেই ভয়ের রাজত্ব ভেঙে দিয়েছি। ভয় আমরা পাইনি। বাংলাদেশের মানুষ নানাভাবে অত্যাচারিত হয়েছে। গুম হয়েছে, খুন হয়েছে। মানুষ ভয় পায়নি।’
মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর পথ ধরে গণসংহতি আন্দোলন বাংলাদেশের খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে লড়াই করছে উল্লেখ করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘আমাদের দল এখন আকারে ছোট। কিন্তু আমরা মানুষের মধ্যে বিশ্বাস স্থাপন করতে পেরেছি যে আমরা মানুষের পক্ষে লড়ব, কোনো আপস করব না, মাথা নত করব না।
আরও পড়ুন: হজ ব্যবস্থাপনা নিয়ে বাংলাদেশের ওপর বিরক্ত সৌদি সরকার: ধর্ম উপদেষ্টা
সংলাপে বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ বলেন, ‘জুলাইয়ে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের স্পষ্ট বার্তা ছিল ছাত্র-জনতা শুধুমাত্র হাসিনার পতন না; এই ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ চেয়েছে, বৈষম্যমুক্ত বাংলাদেশ চেয়েছে। যার জন্য নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত লাগবে। নতুন সেই বন্দোবস্তে সব শিশুর জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে, সব জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রকে নিতে হবে। শ্রমিক-কৃষকের সম্মানজনক জীবন নিশ্চিত করতে হবে। রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠানের সংস্কার লাগবে, তা ছাড়া এই গণ–অভ্যুত্থান ব্যর্থ হবে। আমরা এই অভ্যুত্থানকে ব্যর্থ হতে দেব না।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. শাজাহানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণসংলাপে বিশেষ অতিথি ছিলেন গণসংহতি আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, বাঞ্ছারামপুর প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শামীম শিবলী। স্বাগত বক্তব্য দেন ছয়ফুল্লাহকান্দি ইউনিয়ন গণসংহতি আন্দোলনের সংগঠক রকিব উদ্দিন, মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন আল আমিন।
আরও পড়ুন: শমী কায়সারের ব্যবসায়িক তথ্য তলব