প্রত্যেক দিনের মতো সেদিনও ক্যামেরা হাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পাখির ছবি তুলতে বের হয়েছি। পরিবহন চত্বর সংলগ্ন লেকের পাশে বসে অপেক্ষা করছিলাম একটা বিশেষ মুহূর্তের।
ছবিতে থাকা মেটেমাথা কুড়া ঈগলটি কখন উড়ে এসে মাছ ধরবে তার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকা। পরপর টানা দুইবার চেষ্টা করেও লেকের জলে মাছ পেলো না হতভাগা কুড়া ঈগলটি। অবশেষে তার বড় ডানা দুটো মেলে ঝাঁপিয়ে পড়ল লেকের পাড়ে জমে থাকা কচুরিপানায়। ক্যামেরার ভিউফাইন্ডারে দেখি মেটেমাথা কুড়া ঈগলটি একটি মাইট্টা সাপ ধরে ফেলেছে তার ধারালো নখ দিয়ে। ওদিকে সাপটিও তার জীবন বাঁচাতে ঈগলের পা পেঁচিয়ে ধরেছে। এদিকে আমি এই অভূতপূর্ব দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করতে ব্যস্ত। লেকের জল থেকে উঠে একটা চক্কর দিয়ে ঈগলটি তার শিকার নিয়ে উড়ে গেলো তার নীড়ের দিকে।
Grey headed fish eagle বা বাংলায় মেটেমাথা কুড়া ঈগল দক্ষিণ এশিয়ার একটি আবাসিক পাখি। পাখিটির বৈজ্ঞানিক নাম Ichthyophaga ichyeatus। পাখিটি মাছমুরাল নামেও পরিচিত। বাংলাদেশ ছাড়াও উত্তর-পূর্ব ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, লাওস, পশ্চিম ইন্দোনেশিয়ায় পাখিটিকে দেখা যায়। সাধারণত মিঠা জলের জলাশয়ে এদের বিচরণ। শিকারের খোঁজে জলাশয়ের ওপর ডানা মেলে উড়তে থাকে। শিকারের দেখা পেলে ঝাঁপিয়ে পড়ে শিকারের ওপর। এদের প্রধান খাবার মূলত মাছ। মাছ ছাড়াও সাপ, ব্যাঙ, ইঁদুর, খরগোশসহ বিভিন্ন ধরনের সরীসৃপ শিকার করে এই পাখি।
মেটেমাথা কুড়া ঈগলের দেহের তুলনায় মাথা বেশ খাটো। মাথা বাদামি ধূসর। ঘাড় ও গলা লালচে বাদামি। পিঠ কালচে-বাদামি। বুক লালচে-বাদামি। নখর কালো, ঠোঁটে ধূসর আভা। পাখিটির দেহের দৈর্ঘ্য ৬১-৭৫ সেন্টিমিটার। পুরুষ পাখির তুলনায় স্ত্রী পাখির আকার ও ওজন বেশি। পুরুষ পাখির প্রসারিত ডানার দৈর্ঘ্য ৪২-৪৫.৫ সেন্টিমিটার। ওজন সাধারনত ১.৬ কেজি হয়। স্ত্রী পাখির প্রসারিত ডানার দৈর্ঘ্য ৪৪.৫-৫১.৮ সেন্টিমিটার। ওজন হয় ২.৩-২.৭ কেজি।
মেটেমাথা কুড়া ঈগলের প্রজনন মৌসুম নভেম্বর থেকে মে। জলাশয়সংলগ্ন উঁচু গাছের ডালে সরু ডালপালা দিয়ে মস্তবড় বাসা বাঁধে। ডিম দেয় এক থেকে তিনটি। ডিম ফোটে ৩০-৩৫ দিনে। ডিম ফোটার ৪০-৫০ দিন পর বাচ্চারা উড়তে পারে।
আই.ইউ.সি.এন রেড লিস্ট অনুযায়ী প্রজাতিটি ন্যূনতম বিপদগ্রস্ত এবং বাংলাদেশে বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন ২০১২ অনুসারে প্রজাতিটি সংরক্ষিত।