গাইবান্ধা জেলার সাত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় কৃষি জমি থেকে উর্বর মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। এসব জমির টপ সয়েল (ভূমির ওপরে মাটি) ট্রাক্টর ও ড্রাম ট্রাক দিয়ে বহন করে শতাধিক ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্পটে বিক্রির হিড়িক পড়েছে। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় প্রশাসনের কতিপয় দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের সঙ্গে গোপন চুক্তিতে মাটি দস্যুরা অবৈধ এই ব্যবসায় হাতিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ফলে কৃষি জমি উর্বরতা শক্তি কমে উৎপাদন শক্তি হারাচ্ছে। কৃষক হচ্ছেন ক্ষতিগ্রস্ত।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জেলার সদর, গোবিন্দগঞ্জ, পলাশবাড়ী, সাদুল্লাপুর, সুন্দরগঞ্জ, সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলার বিভিন্ন কৃষিমাঠে জমির টপ সয়েল কাটার মহোৎসব মেতে ওঠেছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা। জেলায় অন্তত শতাধিক ব্যক্তি এই ব্যবসায় আঙুল ফলে কলাগাছ হয়েছেন। এতে করে যেমন ক্ষতি হচ্ছে কৃষকের, তেমনি নষ্ট হচ্ছে কাঁচা-পাকা রাস্তা ও ধুলাবালিতে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ।
সাদুল্লাপুর উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের গয়েশপুর গ্রামে গিয়ে দেখা গেলো, সেখানে ১০ থেকে ১২টি ট্রাক্টরে করে জমির টপ সয়েল কেটে আশপাশের ভাটায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
ওই গ্রামের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অন্তত ৮ জন কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের অভিযোগ, মাটি ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে দীর্ঘদিন ধরে কৃষি জমি থেকে মাটি তুলে ইটভাটাসহ অন্যত্র বিক্রি করছে। প্রশাসনের তদারকির অভাবে দিনরাত সমান তালে চলছে কৃষি জমির টপ সয়েল কাটার মহোৎসব। জমির ১ থেকে ২ ফুট গভীর করে ফসলি জমির মাটি কাটা হচ্ছে।
জেলা কৃষি বিভাগ জানায়, এ সংক্রান্ত আইনি বিধিনিষেধ থাকলেও কেউই তা মানছে না। ফলে প্রতিদিন একরের পর একর কৃষি জমির টপ সয়েল চলে যাচ্ছে ইটভাটাসহ অন্যত্র। এতে করে যেমন জমি উর্বরাশক্তি হারাচ্ছে তেমনি ফসল উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। তারা এমন কাণ্ডে লিপ্ত থাকলেও প্রশাসন নিরবতা পালন করছে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. খোরশেদ আলম বলেন, কৃষি জমির মাটির উপরিভাগের ৮ থেকে ১০ ইঞ্চি অংশকে টপ সয়েল বলা হয়। এই অংশে মাটির মূল উর্বরাশক্তি থাকে। এগুলো কেটে উঠানো হলে ফসল উৎপাদন শক্তি হারিয়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, টপ সয়েল না কাটার জন্য আমরা জেলা সমন্বয় সভায় ইট ভাটা মালিকদের নিষেধ করেছি। তাদের অনুর্বর জমি থেকে মাটি সংগ্রহের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তারপরও অনেকেই উর্বর জমির টপ সয়েল কেটে নিচ্ছেন। এ ব্যাপারে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
গাইবান্ধা জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ফসলি উর্বর কৃষি জমি থেকে মাটি তোলা দণ্ডনীয় অপরাধ। এ বিষয়ে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।