সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ আইনে বিদ্যমান জটিলতা দূর করে সংশোধনী আনতে সরকারকে প্রস্তাব পাঠাবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু করতে তারা নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ ও সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করবে। এ ছাড়া ভোটার তালিকা আইন, আন্তর্জাতিক ও দেশি পর্যবেক্ষক নীতিমালা ও নির্বাচনের সময় সংবাদ সংগ্রহে সাংবাদিকদের জন্য নীতিমালা আরও পর্যালোচনা করা হবে। এ জন্য এগুলো ইসির সংশ্লিষ্ট কমিটিতে পাঠানো হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার নির্বাচন ভবনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত নির্বাচন কমিশনের সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়। সভা শেষে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান। ১২টি আলোচ্যসূচি নিয়ে সকাল থেকে প্রায় তিন ঘণ্টা বৈঠক করে ইসি।
নির্বাচন কমিশনের সভায় যে চারটি আইন ও নীতিমালা পর্যালোচনা করা হয়েছে, একই বিষয় নিয়ে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ আছে। তাদের সে সুপারিশ এখনো বিস্তারিত প্রকাশ করা হয়নি। এর মধ্যে ইসির এই উদ্যোগের ফলে একটি সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হতে পারে, এমন আলোচনা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে আবুল ফজল বলেন, এটা ইসির নিজস্ব চর্চা। এটি সহায়ক হিসেবে কাজ করবে। এখানে সাংঘর্ষিক হওয়ার সুযোগ নেই। সংস্কার কমিশনের বিস্তারিত প্রতিবেদন এখনো ইসি দেখেনি। সব বিষয় ইসি পর্যালোচনার জন্য বিভিন্ন কমিটিতে দিয়েছে। যাতে ইসি প্রস্তুত থাকতে পারে এবং কোনো মতামত দেওয়ার প্রয়োজন হলে তাৎক্ষণিকভাবে তা দিতে পারে।
সীমানা নির্ধারণ আইনের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল বলেন, বিদ্যমান আইনে দুটি বিষয়ে সমস্যা সৃষ্টি করছে। মূলত জনসংখ্যাকে গুরুত্ব দিয়ে সীমানা নির্ধারণ করা হয়। ইসি ভৌগোলিক আয়তন, অবস্থান, সর্বশেষ জনশুমারি প্রতিবেদন ইত্যাদির ভিত্তিতে সীমানা নির্ধারণ করতে চায়। দেশের জনসাধারণের শহরমুখী প্রবণতা রয়েছে। শুধু জনসংখ্যার ভিত্তিতে করলে শহরের দিকে আসনসংখ্যা বাড়বে, অন্য এলাকায় কমে যাবে। এতে সঠিক প্রতিনিধিত্ব হবে না বলে কমিশন মনে করে। এ ছাড়া বিদ্যমান আইনের একটি উপধারায় একটি ছাপার ভুল আছে। ইসি এটি সংশোধনের প্রস্তাব পাঠাবে।
এখন পর্যন্ত ৪১টি সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ নিয়ে ২৪৮টি আবেদন পাওয়ার কথা জানিয়ে আবুল ফজল বলেন, এসব নিষ্পত্তিতে সীমানা নির্ধারণ-সংক্রান্ত বিষয়ে কী ধরনের সিদ্ধান্ত আসে, তার অপেক্ষায় আছে ইসি। এ বিষয়ে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ আছে। তাই ইসিকে অপেক্ষা করতে হবে।
সংস্কার কমিশনও সীমানা নির্ধারণ আইনের একটি খসড়া করেছে। ইসিও সংশোধন করছে। দুটির মধ্যে পার্থক্য থাকলে ইসি কোনটা গ্রহণ করবে—এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল বলেন, এখানে কোনো পার্থক্য হওয়ার সুযোগ আছে বলে তাঁরা মনে করেন না। কারণ, কতগুলো বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে সীমানা নির্ধারণ করা হয়।
আইন-বিধিগুলো পর্যালোচনা শেষে সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠানো হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, কমিশনে প্রতিবেদন আসার পর কমিশন যদি মনে করে তাহলে পাঠানো হবে। সংস্কার কমিশনের সুপারিশের কারণে ইসির কাজ বিলম্বিত হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে আবুল ফজল বলেন, ‘আমরা পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে আছি। এটা ন্যাশনাল ডিমান্ড, সংস্কারটা। আমরা তো এর বাইরে নই।’
সম্প্রতি সিইসি বলেছেন, সংস্কার কমিশনের অনেকগুলো সুপারিশ বাস্তবায়িত হলে ইসির স্বাধীনতা খর্ব হবে। বিষয়টি সরকারকে ইসি জানিয়েছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল বলেন, সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ইসি তাদের পর্যবেক্ষণ সরকারকে জানাবে।
এ ছাড়া সভায় প্রবাসী বাংলাদেশিদের জাতীয় পরিচয়পত্র দেওয়ার বিষয়টি আরও সহজ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। প্রবাসী ভোটারদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে তিনটি বিকল্প নিয়ে ভাবছে ইসি। সেগুলো হলো পোস্টাল ব্যালট, প্রক্সি ভোটিং এবং অনলাইন ভোটিং।