রাজশাহী মহানগরীর চন্দ্রিমা থানার ভেতর দুই পুলিশ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে মারপিট করে জখম করার অভিযোগে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী সামিনা খানম এবং আব্দুর রাফিক খান শান্ত নামের ভাইবোন। রোববার দুপুরে রাজশাহী প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলন এ অভিযোগ করা হয়।
লিখিত বক্তব্যে সামিনা খানম বলেন, ছোটবনগ্রাম উত্তরপাড়া এলাকার আমাদের জমিতে ২০২৩ সালে জোরপূর্বক বখাটে সন্ত্রাসী জিসান এবং তার পিতা লাইবুর রহমান গাছ লাগিয়ে দেন। বিষয়টি নিয়ে আমাদের মধ্যে মনোমালিন্যের সৃষ্টি হয়। জমি বুঝে পেতে তাদের তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বিভিন্ন সময় বখাটে জিসানসহ তার মা কনক এবং তার স্ত্রী জেসিকা আমাদের গালাগাল করে। এমনকি আমাদের রাস্তাঘাটে হেঁটে যাওয়া বা বাড়িতে অবস্থানরত অবস্থায় তারা বিভিন্ন রকম মানসিক নির্যাতন চালাতে থাকেন।
এ ঘটনার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে আমাদের হয়রানি ও বিপদে ফেলার জন্য গত ২৮ জানুয়ারি সন্ধ্যায় বখাটে জিসান চন্দ্রিমা থানায় অভিযোগ করেন, আমার ভাই শান্ত জিসানের স্ত্রী জেসিকাকে ঢিল মেরেছেন। এ অভিযোগে ৩০ জানুয়ারি সন্ধ্যায় চন্দ্রিমা থানায় আমাদের ডাকা হয়। বিষয়টি মীমাংসার জন্য আমাদের দুপক্ষকে নিয়ে থানায় বসেন এএসআই রুহুল আমিন এবং সোহেল রানা। এ সময় আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য সাদা পোশাকে সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করে সামিনা খানম বলেন, আমার ভাই শান্ত ঘটনার বিষয়ে বর্ণনা শুরু করলে জিসান মারমুখী হয়ে ওঠেন। এ সময় পুলিশের সামনেই জিসান শান্তকে মেরে জখম করেন। এতে শান্তর ঠোঁট কেটে যায় এবং মুখ থেঁতলে যাওয়াসহ মাথায় আঘাত প্রাপ্ত হয়। এ ঘটনায় থানায় মামলা করতে চাইলে উপস্থিত দুই পুলিশ কর্মকর্তা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে বলেন। পরে এসআই রুহুল আমিন বলেন, ওসি সাহেব বিষয়টি অন্যভাবে মীমাংসা করবেন। আপনারা বাড়ি চলে যান।
রোববার দুপুর পর্যন্ত আমাদের সঙ্গে থানা থেকে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। বরং আমরা যোগাযোগ করলে বলা হয়, উভয়পক্ষকে আবারও থানায় ডাকা হবে। আমরা জিডির নম্বর চাইলে ডিউটি অফিসার কোনো তথ্য দিতে পারেননি। আমাদের ঘটনাটি জিডি হিসেবেও অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।
ভুক্তভোগী সামিনা খানম আরও বলেন, পুলিশের সামনে এবং নিরাপত্তাস্থলে ভাইকে মেরে জখম করা হয়েছে। অথচ পুলিশ সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার করা তো দূরের কথা, বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছে। বর্তমানে আমরা চরম নিরাপত্তহীনতায় ভুগছি। এমতাবস্থায় আমরা দোষীদের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে মামলা গ্রহণসহ আমাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং দোষীদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য পুলিশ কমিশনারসহ সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
সংবাদ সম্মেলনে সামিনা খানম ছাড়াও তার মা শামীম আরা এবং ভাই আব্দুর রাফিক খান শান্ত উপস্থিত ছিলেন।
দুই পুলিশ কর্মকর্তার সামনে মারধরের বিষয়ে জানার জন্য এএসআই রুহুল আমিনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়; কিন্তু তিনি ফোন ধরেননি।
তবে মীমাংসার সময় সেখানে উপস্থিত থানার আরেক এএসআই সোহেল রানা বলেন, উভয়পক্ষ প্রতিবেশী। বিষয়টি নিয়ে কথা বলার সময় তর্কবিতর্ক এবং মারধরের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি আমরা ওসি স্যারকে জানিয়েছি। তিনি এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ নেবেন।
এ বিষয়ে চন্দ্রিমা থানার ওসি মতিউর রহমান থানার ভেতর মারপিটের ঘটনাটির বিষয়ে বলেন, আমি এ বিষয়ে আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেছি। ভুক্তভোগীরা মামলা করলে আমরা সেটি গ্রহণ করব। বিষয়টি তদন্ত করা হবে।