গরমকালের চরম অবস্থার মধ্যে পরম পাওয়া হলো এ সময়ের নরম ফল। মধুমাসের এ সময়ে গাছে পাকে ফল। বাজারে পসার জমে অনেক বিচিত্র ধরনের ফলের সমাহারে। চারিদিকে হরেক রকমের ফলের মৌ মৌ মিষ্টি গন্ধে মাতোয়ারা হয়ে থাকে পরিবেশটা। বলাবাহুল্য, সবরকম ফলের মধ্যে আল্লাহ পাক কিছু না কিছু উপকারিতা তো রেখেছেনই। আবার কোন মৌসুমে শরীরের জন্য কোন ফলের দরকার তাও তিনি ঠিক করে দিয়েছেন। যেমন- গ্রীষ্মকালে দারুণ গরমে যখন সবাই তৃষ্ণার্ত থাকে ও পানিশূন্যতায় শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে। আর ঠিক সেই সময়টাতেই প্রকৃতি ভরে ওঠে নানারকম পানিসমৃদ্ধ বৈচিত্র্যময় ফলমূলে। তাই গরমকালের এই মৌসুমি ফলগুলোর স্বাদটা উপভোগ করা চাই ষোলআনাভাবে। কিশোর বয়সীদের জন্য উপযোগী ফল কোনগুলো? সেটার উপকারিতাইবা কী? এসব নিয়েই এবারের আয়োজন।
গরমকালের ফলমূলের মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টিগুণ যা শরীরের জন্য খুবই উপকারি। আম, জাম, লিচু, আনারস, বাঙ্গি, শসা, বেল ইত্যাদি ফল শরীরে খনিজ লবণের ঘাটতি পূরণ করে। সাধারণত ‘ফলের রাজা’ বলা হয় আমকে যা এ সময়ের প্রধান আকর্ষণ। মূলত আমে থাকে ক্যারোটিনয়েড, পলিফেনল, ওমেগা-৩ ও ৬, পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি এসিড যা ক্যান্সার, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। তরমুজে আছে লাইকোপেন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, উচ্চমাত্রার ভিটামিন, এমাইনো এসিড ইত্যাদি যা এ সময়ে অতিরিক্ত পানিশূন্যতা ও জরুরি লবণের ঘাটতি পূরণ তথা শারীরিক দুর্বলতা ও ক্লান্তি দূর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। এ ছাড়া কিডনি, লিভার, ফুসফুসকে সতেজ ও কর্মক্ষম রাখে তরমুজ। পেয়ারা হার্ট ও চোখ ভালো রাখতে ও মানসিক সুস্থতার জন্য বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ফ্রুটি বা বাঙ্গি জ্বরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া শরীরে পানির ভারসাম্য রক্ষা, বমি নিয়ন্ত্রণে, পেটের সমস্যার সমাধানে ও হজমে সহায়তা করে। আনারসে থাকে ব্রোমেলিয়ান যা পেটের চর্বি তথা ওজন কমাতে সাহায্য করে। এ ছাড়া রয়েছে প্রচুর খনিজ লবণ যা শ্বাসতন্ত্রের ইনফেকশনকে প্রতিহত করে। সফেদায় প্রচুর পরিমাণে গ্লুকোজ ও অ্যান্টি অক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীরে শক্তি জোগায় ও প্রাণচাঞ্চল্য বৃদ্ধি করে। আরেকটি উপকারি ফল হলো বেল। এতে প্রচুর পরিমাণে বিভিন্ন প্রকার মিনেরাল থাকে যা হজমশক্তি বৃদ্ধিসহ শরীরের অন্যান্য রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। পেঁপের ভেতরে ভিটামিন-এ এবং সি ছাড়াও ফাইটোকেমিক্যাল, পেপাইন, বিটা ক্যারোটিন ইত্যাদির উপস্থিতির কারণে ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগের নিরাময়কারী হিসেবে কাজ করে। আমাদের জাতীয় ফল কাঁঠাল একটি ফাইবারসমৃদ্ধ ফল বিধায় হজমশক্তি বাড়ায় ও পেট পরিষ্কার রাখে। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন যা চোখ, ত্বক ও হার্টকে সুস্থ রাখে, রক্তশূন্যতা দূর করে। কালোজামে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম থাকায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে দারুণ ভূমিকা পালন করে। আতা প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসহ ভিটামিন ও মিনেরালসমৃদ্ধ একটি ফল যা দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিসহ হজমশক্তি বৃদ্ধি ও হাড়ের গঠন ভালো রাখতে সহায়তা করে।
আমাদের অনেকের মাঝে একটা ভুল ধারণা আছে যে, বিদেশী দামি ফলের মধ্যেই বুঝি বেশি পরিমাণ পুষ্টি রয়েছে। এ ধারণাটা একেবারেই ভুল। আমাদের দেশী ফলের মধ্যে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন এবং শরীরের জন্য দরকারি পুষ্টিগুণ সম্পন্ন উপদানসমূহ। তাই এই ফলের মৌসুমে আমাদের সবাইকেই প্রচুর পরিমাণে ফল খাওয়া উচিত, বিশেষ করে কিশোরবেলার বাড়ন্ত বয়সে মৌসুমি ফল খাওয়াটা খুবই প্রয়োজন।
সবশেষে ছোট্ট করে বলি, গরমকালে সাধারণত নানান ধরনের রোগবালাই হয়ে থাকে। সেসব ব্যাপারে আমাদের ধারণা যেমন রাখতে হবে, পাশাপাশি সচেতনও থাকতে হবে এসব অনাকাক্সিক্ষত রোগ থেকে দূরে থাকার জন্য। এ বিষয়টা নিয়ে অন্য আরেক সংখ্যায় আলোচনা করা হবে ইনশাআল্লাহ।