সর্বশেষ
বোরো ধানের নমুনা শস্য কর্তন শুরু
ওটিটিতে মুক্তি পেল তাসনিয়া ফারিণের প্রথম সিনেমা
ভিসা ইস্যু নিয়ে যে বার্তা দিল ঢাকার মার্কিন দূতাবাস
নিজেদের ভুল বোঝাবুঝিতে ফ্যাসিবাদ সুযোগ নেবে: রিজভী
কাতার সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গী হচ্ছেন চার নারী ক্রীড়াবিদ
হিন্দু নেতাকে অপহরণের পর হত্যা, যা বলল ভারত
আওয়ামী লীগের মিছিল নিয়ে কড়া বার্তা হাসনাতের
এক ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়: নাহিদ ইসলাম
দেরি করে পৌঁছানোয় স্বপ্নভঙ্গ ওদের
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার তাগিদ
নির্বাচনের জন্য এখনই আন্দোলনের প্রয়োজন দেখছে না বিএনপি
বিলাসবহুল অফিস ও বন্দর কমিটি নিয়ে যা বললেন হান্নান মাসউদ
শাহজাদপুরে যুবদল কর্মীকে হত্যার অভিযোগ
ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া প্রমাণ করে ভারত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়: দুদু
‘শুভ কাজে সবার পাশে’ স্লোগানে বসুন্ধরা শুভসংঘের মনপুরা উপজেলা কমিটি গঠিত

ব্ল্যাড ক্যান্সার কী? জেনে নিন

অনলাইন ডেস্ক

বিশ্ব ক্যান্সার দিবস ৪ ফেব্রুয়ারি। এবারের প্রতিপাদ্য  “united by unique” একেকজন ক্যান্সার রোগীর অভিজ্ঞতা একেকরকম। ক্যান্সার রোগীর, পরিবারের ও সমাজের এই ভিন্ন ভিন্ন অভিজ্ঞতাকে সমন্বিত করে নতুনভাবে চিকিৎসা দেওয়াই এবারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

সাধারনের বুঝার সুবিধার্থে ক্যান্সার মূলত দুইভাগে ভাগ করা যায়। যেমন :-

১). সলিড ক্যান্সার যেমন লাং ক্যান্সার, ব্রেস্ট ক্যান্সার, পাকস্থলির ক্যান্সার, প্রস্টেট ক্যান্সার, লিভার ক্যান্সার ইত্যাদি এবং

২). ব্লাড ক্যান্সার যেমন লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা, মায়েলোমা ইত্যাদি যা হেমাটোলজিষ্ট বা রক্তরোগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।

বয়স্কদের শরীরে যত ধরনের ক্যান্সার হয় তার প্রায় ৬.৫ থেকে ১০ ভাগ ব্লাড ক্যান্সার। আর বাচ্চাদের শরীরে যত ধরনের ক্যান্সার হয় তার প্রায় ২৫ ভাগ ব্লাড ক্যান্সার। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, গত দশ বছরে ব্লাড ক্যান্সারের হার ৪৭ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

ব্লাড ক্যান্সার কী?

রক্তের তিন ধরনের কনিকা থাকে যেমনঃ রেড ব্লাড সেল (আরবিসি) বা লোহিত রক্ত কনিকা, হোয়াইট ব্লাড সেল (ডব্লিউ বি সি) বা স্বেত রক্ত কনিকা এবং প্লেটলেট (অণুচক্রিকা)। অস্থিমজ্জার ভিতরে এই রক্ত কনিকাগুলো তৈরি হয়ে শিরা উপশিরার মাধ্যমে সমস্ত শরীরে প্রবাহিত হয়। মোটা দাগে ব্লাড ক্যান্সার হলো লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা, মায়েলোমা।

লিউকেমিয়া কী?
লিউকেমিয়া  হলো রক্ত বা অস্থিমজ্জার ভিতর স্বেত রক্ত কনিকার (হোয়াইট ব্লাড সেল/ডব্লিউ বি সি) অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। লিউকেমিয়া কয়েক ধরনের যেমন : একিউট লিম্ফোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া, একিউট মায়েলোব্লাস্টিক লিউকেমিয়া, ক্রনিক লিম্ফোসাইটিক লিউকেমিয়া, ক্রনিক মায়েলোসাইটিক লিউকেমিয়া। এগুলো ছাড়াও আরও অনেক প্রকারভেদ আছে।

লিম্ফোমা কী?

ডব্লিউবিসি বা স্বেত রক্তকনিকার মধ্যে লিম্ফোসাইট নামক রক্তকনিকার ক্যান্সার যেখানে লিম্ফোয়েড অরগান যেমন লিম্ফনোড বা গ্লান্ড ফুলে যেতে পারে, প্লীহা ও লিভার বড় হতে পারে। দীর্ঘদিন বা ঘনঘন জ্বর আসে, রাতে ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে, ওজন কমে যায়, খাবারে অরুচি থাকে। লিম্ফোমা কয়েক ধরনের যেমন হপকিনস লিম্ফোমা, নন হপকিনস লিম্ফোমা। এগুলোর মধ্যেও আরও অনেক প্রকারভেদ আছে।

মায়েলোমা কী?

ডব্লিউবিসি বা স্বেত রক্তকনিকার মধ্যে বি লিম্ফোসাইট নামক রক্তকনিকা থেকে প্লাজমা সেল তৈরি হয় যা এন্টিবডি তৈরি করে রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা রাখে। হাড় ক্ষয় হতে বাধা দেয়। এই প্লাজমা সেল অস্বাভাবিক হলে মাল্টিপল মায়েলোমা নামক ক্যান্সার হয় যেখানে দীর্ঘদিন বা ঘনঘন জ্বর, রক্তস্বল্পতা, হাড় ক্ষয় হয়ে কোমর ব্যথা, প্যারালাইজড এবং  কিডনিও বিকল হতে পারে।

ব্লাড ক্যান্সারের কারণ কী?

এর প্রকৃত কারণ জানা নাই। তবে রেডিয়েশন, ইন্ডাস্ট্রিয়াল কেমিক্যাল, কীটনাশক বা পেস্টিসাইড, ভেজাল খাবার, হেয়ার ডাই, লুব্রিকেন্টস, বার্ণিশ, কেমোথেরাপি ড্রাগস ও কিছু জেনেটিক অসুখ দায়ী থাকতে পারে।

উপরোক্ত যে কোন কারনে অস্থিমজ্জার ভিতরের স্টিমসেল (মাদার সেল) এর মিউটেশন বা অন্য কোনো পরিবর্তন হলে ক্যান্সার সেল (ব্লাস্ট) বা অপরিপক্ক কোষ তৈরি হয় যা অস্থিমজ্জার ভিতরে অতিদ্রুত বৃদ্ধি হয়।

যেকোনো বয়সে, যেকোনো জেন্ডারেরই লিউকেমিয়া, লিম্ফোমা হতে পারে।

ব্লাড ক্যান্সারের উপসর্গ লক্ষণ কি কি

১). রক্তের হিমোগ্লোবিন কমে যাওয়ার কারনে রক্তস্বল্পতা দেখা দেয় ফলে দূর্বলতা, খাবারের অরুচি, বুকধড়ফড়, পায়ে পানি জমে যাওয়া, ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া যায়।

২). যেহেতু ডব্লিউবিসি স্বেত রক্ত কনিকা অস্বাভাবিক তাই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায় ফলে দীর্ঘদিনের জ্বর বা ঘন ঘন জ্বর হয়।

৩). রক্তের প্লেটলেট কাউন্ট কমে যায় ফলে অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ (শরীরে র‍্যাশ, দাতের গোড়া – প্রসাব – পায়খানা- কাশির সাথে রক্ত পড়া, মাসিক বেশি হওয়া ইত্যাদি দেখা দেয়)।

৪). গ্লান্ড ফুলে যাওয়া, লিভার – প্লীহা বড় হতে পারে।

৫). হাড়ে ব্যথা।

উপসর্গ লক্ষণগুলো কেমন?

লোহিত রক্ত কনিকার ঘাটতিতে রক্তস্বল্পতা, অস্বাভাবিক স্বেত রক্ত কনিকার কারনে ইনফেকশন বা জ্বর এবং প্লেটলেট (অণুচক্রিকার) ঘাটতিতে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। অস্বাভাবিক রক্ত কনিকা (ক্যান্সার সেল) গ্লান্ড-লিভার- প্লীহায় জমতে বা ভাংতে থাকলে গ্লান্ড-লিভার-প্লীহা বড় হয়।

অস্থিমজ্জার ভিতর ক্যান্সার সেল (ব্লাস্ট) এত বেশি বেড়ে যায় যে লোহিত রক্তকনিকা ও অণুচক্রিকা বৃদ্ধি হওয়ার মতো জায়গা পায় না ফলে ঘাটতি দেখা দেয়। ক্যান্সার সেল অস্থিমজ্জার ধারণ ক্ষমতার বাহিরে চলে যায়। ফলে হাড্ডির ভিতর প্রচন্ড ব্যথা শুরু হয়।

  1. ব্লাড ক্যান্সার কি ছোয়াচে রোগ?

না, ব্লাড ক্যান্সার কোনো ছোয়াচে রোগ নয়।

কিভাবে ব্লাড ক্যান্সার নির্ণয় করা হয়

ব্লাড ক্যান্সারের উপসর্গ ও লক্ষণ গুলোর সাথে সাথে রক্তের সিবিসি পরীক্ষায় অস্বাভাবিকতা দেখা যায় যেমনঃ হিমোগ্লোবিন ও প্লেটলেট কমে যাওয়া, ডব্লিউ বি সি বেড়ে যাওয়া অথবা হিমোগ্লোবিন, প্লেটলেট ও ডব্লিউ বি সি কমে যাওয়া। ব্লাড ফিল্ম, বোনম্যারো টেস্ট, ফ্লোসাইটোমেট্রি, সাইটোজেনেটিক স্টাডি করে ব্লাড ক্যান্সার নির্ণয় করা হয়ে থাকে। কিছু ক্যান্সারের ক্ষেত্রে গ্লান্ড বা টিস্যু বায়োপসি এবং পরবর্তীতে  ইমিউনোহিস্টোকেমিস্ট্রি করা লাগে।

ব্লাড ক্যান্সারের রোগী কি ভালো হয়?

মলিকুলার টার্গেটেড থেরাপি, ইমিউনোথেরাপি আবিষ্কার হওয়ায় বেশ কিছু ব্লাড ক্যান্সার পুরোপুরি ভালো হয়। ব্লাড ক্যান্সার বিভিন্ন ধরনের তাই ক্যান্সারের চিকিৎসায় ও ফলাফলের ভিন্নতা আছে। ব্লাড ক্যান্সার চিকিৎসায় কারো কারো অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপন (বিএমটি) লাগে।

ব্লাড ক্যান্সার মানেই মৃত্যু নয়। ক্যান্সার, নো এনছার। উন্নত চিকিৎসা আবিষ্কার হওয়ায় এই কথাটি এখন সত্য নয়।

তাই আতংক নয়, সচেতন হই। সঠিক সময়ে সঠিক রোগ নির্ণয় করে সঠিক চিকিৎসা নিলে অনেক ব্লাড ক্যান্সারও ভালো হয়।

এখন দেশেই ব্লাড ক্যান্সারের ঔষধ তৈরি হয় এবং বিদেশে রপ্তানি হয়। দেশেই ব্লাড ক্যান্সারের সুচিকিৎসা হয়।

ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আমিন।

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ