সর্বশেষ
বোরো ধানের নমুনা শস্য কর্তন শুরু
ওটিটিতে মুক্তি পেল তাসনিয়া ফারিণের প্রথম সিনেমা
ভিসা ইস্যু নিয়ে যে বার্তা দিল ঢাকার মার্কিন দূতাবাস
নিজেদের ভুল বোঝাবুঝিতে ফ্যাসিবাদ সুযোগ নেবে: রিজভী
কাতার সফরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গী হচ্ছেন চার নারী ক্রীড়াবিদ
হিন্দু নেতাকে অপহরণের পর হত্যা, যা বলল ভারত
আওয়ামী লীগের মিছিল নিয়ে কড়া বার্তা হাসনাতের
এক ব্যক্তি দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী নয়: নাহিদ ইসলাম
দেরি করে পৌঁছানোয় স্বপ্নভঙ্গ ওদের
নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রধান উপদেষ্টার তাগিদ
নির্বাচনের জন্য এখনই আন্দোলনের প্রয়োজন দেখছে না বিএনপি
বিলাসবহুল অফিস ও বন্দর কমিটি নিয়ে যা বললেন হান্নান মাসউদ
শাহজাদপুরে যুবদল কর্মীকে হত্যার অভিযোগ
ফ্যাসিস্ট হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়া প্রমাণ করে ভারত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নয়: দুদু
‘শুভ কাজে সবার পাশে’ স্লোগানে বসুন্ধরা শুভসংঘের মনপুরা উপজেলা কমিটি গঠিত

নারীর মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন

অনলাইন ডেস্ক

কয়েক বছর ধরে বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে, নারীদের মানসিক স্বাস্থ্য ক্রমাগত খারাপের দিকে যাচ্ছে। দেশের ৬০ শতাংশের বেশি নারী বিভিন্ন ধরনের মানসিক সমস্যায় ভুগছেন। এখনই সচেতন না হলে ভয়াবহ রূপ নিতে  পারে নারীর বিষণ্নতা। বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার কারণ ও সমাধান খুঁজতে চেষ্টা করেছেন মারজান ইমু।

নানা রকম হরমোনের প্রভাবে নারীর মানসিক স্বাস্থ্য বিভিন্ন সময় নাজুক অবস্থায় থাকে। বয়ঃসন্ধি থেকে শুরু হয়ে প্রতি মাসের ঋতুচক্র, গর্ভাবস্থা, সন্তান প্রসবের পর কিংবা মেনোপজের সময় নারীদের মন-মেজাজ নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কমে যায়। পাশাপাশি আধুনিক জীবন ব্যবস্থায় সঠিক খাদ্যাভ্যাস, শরীরচর্চার অভাব এবং সফল হওয়ার ইঁদুর দৌড়ে ক্লান্ত হওয়ার কারণে মেয়েরা মানসিকভাবে বিপর্যয়ের সম্মুখীন হচ্ছেন। শহুরে একক পরিবারের একা হাতে সন্তান পালন, সংসার সামলানো, কর্মজীবী নারীদের ক্ষেত্রে বাড়তি যোগ হয় কর্মস্থলের মানসিক চাপ ও ক্লান্তি। এসব কারণে সহজেই তৈরি হয় মানসিক চাপ ও অবসাদ। ক্রমাগত হরমোনের ভারসাম্যহীনতা হতে থাকলে তা থেকে তৈরি হয় উদ্বেগ, স্থায়ী বিষণ্নতা, প্যানিক ডিজঅর্ডার, স্ট্রেস ডিজঅর্ডার, পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার, আত্মহত্যার প্রবণতার মতো কঠিন সমস্যা।

ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট জিয়ানুর কবির নারীর বিষণ্নতা নিয়ে জানান, প্রাকৃতিক কারণেই নারীরা পুরুষদের চেয়ে বেশি মানসিক জটিলতায় ভোগেন। বাংলাদেশের সর্বশেষ মানসিক স্বাস্থ্য জরিপে (২০১৮-১৯) শুধু নারীদের মধ্যে মানসিক সমস্যার হার পাওয়া গিয়েছিল ১৭ শতাংশ, যেখানে পুরুষদের মধ্যে এ হার ছিল ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ। এই গবেষণায় ৬ দশমিক ৫ শতাংশ নারীর মধ্যে ডিপ্রেশন পাওয়া যায়। করোনা-পরবর্তী সময়ে এই সংখ্যা আরও বেড়েছে।

ডিপ্রেশনের ক্ষেত্রে নারীদের ঝুঁকির কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে- কন্যাসন্তান হিসেবে জন্ম নেওয়া, নারীদের পিরিয়ড, গর্ভধারণ প্রসবোত্তর অবস্থা ও মাতৃত্ব ইত্যাদি কারণে খুব বেশি হরমোনাল পরিবর্তন, বাচ্চাদের ও পরিবারের অন্য সদস্যদের যত্ন নিতে গিয়ে নিজের প্রতি উদাসীন থাকেন। নারীরা পুরুষদের তুলনায় কম আয় করেন, যৌতুক, পারিবারিক নির্যাতন ও অবহেলা।

প্রায় তিনজনের মধ্যে একজন নারী যৌনসহিংসতা, শারীরিক সহিংসতা এমনকি তাদের জীবদ্দশায় অন্তরঙ্গ সঙ্গীর দ্বারা সহিংসতার শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতা থাকে। নারীরা সঙ্গীর ভালো পরিচর্যা করলেও পুরুষদের কাছ থেকে কম যত্ন পান। সমাজ ও পরিবারের সদস্যরা নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি নিচু মনোভাব পোষণ করেন। এমনকি বিভিন্ন শারীরিক রোগ থাইরয়েড সমস্যা, স্থূলতা ও ভিটামিন ‘ডি’ এর ঘাটতি ইত্যাদি কারণে মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। বিষণ্নতা ছাড়াও স্ট্রেস ডিজঅর্ডার, প্রসবোত্তর বিষণ্নতা, উদ্বেগ, প্যানিক অ্যাটাক, অহেতুক ভীতি, সামাজিক ভীতি, অবসেসিভ কম্পালসিভ ডিজঅর্ডার, আত্মহত্যা প্রবণতা ইত্যাদি সমস্যাগুলোও নারীদের বেশি হয়।

পরিসংখ্যান বলছে, ৭৫ শতাংশ নারীর মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয় ২৪ বছর বয়সের আগেই। প্রতি পাঁচজনে একজন নারী মানসিক অস্থিরতা কিংবা বিষণ্নতায় ভুগছেন। ইউনিভার্সিটি অব ম্যানচেস্টারের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১০ থেকে ১৯ বছর বয়সীদের মধ্যে যারা একবার হলেও নিজের ক্ষতি করার চেষ্টা করেছেন তাদের ৭৩ শতাংশ নারী। বিশেষ করে তরুণীদের মধ্যে নিজের ক্ষতি করার প্রবণতা দ্রুত বাড়ছে। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ২০১৮ সালের জরিপ অনুযায়ী ১০ থেকে ২৪ বছর বয়সী মানুষের প্রায় ৫ শতাংশ মানুষ একবার হলেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন এবং ১ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ একবার হলেও আত্মহত্যার পরিকল্পনা করেছেন। এই পরিসংখ্যানে আরও দেখা গেছে, নারীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা পুরুষদের তুলনায় প্রায় তিন গুণ বেশি। দেশের ২৬ শতাংশ তরুণী উদ্বেগ ও বিষণ্নতার মতো মানসিক অসুখ নিয়ে দিনপাত করেন।

পুরুষের তুলনায় নারীর মানসিক সমস্যা এত বেশি কেন এ প্রসঙ্গে সিলেট মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক এবং ব্রেইন ও স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. সাঈদ এনাম বলেন, ‘মেয়েদের মানসিক অস্থিরতা শুরু হয় কিশোরী বয়স থেকেই। তখন থেকেই মেয়েদের শরীরে হরমোনের নানা প্রভাব শুরু হয়। এই হরমোনজনিত কারণে মেয়েদের মানসিক সমস্যার সূচনা হয়। বিশেষ করে মেয়েদের মাসিক ঋতুচক্রের আগে হরমোনাল কারণে মানসিক অবস্থা বেশি নাজুক থাকে। যাকে আমরা বলি মুড সুইং অর্থাৎ আবেগের অসামঞ্জস্যতা। আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে বেশির ভাগ কিশোরী এই সময় আবেগের ওঠানামা সামলাতে পরিবার থেকে কোনো সাহায্য পায় না।

বাবা-মাসহ পরিবারের সদস্যরা কিশোরীর আবেগ না বুঝে তাকে বকাঝকা এমনকি মারধর করে মানসিক চাপ আরও বাড়িয়ে দেয়। তখন সে নিজেকে খুব একা ও অসহায় ভাবতে শুরু করে। নিজের আবেগের সঙ্গে নিজেই তাল মেলাতে না পেরে দিন দিন বিষণ্নতার দিকে এগিয়ে চলে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মেয়েদের ব্যক্তিগত জীবনের বোঝাপড়া, সম্পর্কের জটিলতা আরও বাড়তে থাকে। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের জীবন ঘরকেন্দ্রিক হওয়ায় তাদের স্ট্রেস রিলিজ বা মানসিক চাপ মুক্তির জায়গাও কম থাকে। মানসিক ক্লান্তি ধীরে ধীরে শারীরিক ক্লান্তিতে পরিণত হয়। গর্ভকালীনও শরীরে দেখা দেয় নানা পরিবর্তন। এ সময় শরীরে ঘন ঘন হরমোন পরিবর্তন ঘটে ফলে বারবার মুড চেঞ্জ হয়। ফলে শারীরিক ও মানসিক নানা সমস্যা দেখা দেয়।

সমস্যা থাকলে তার সমাধানও আছে। সাইকো থেরাপিস্ট ডা. জারিন আররোজ বলেন, জীবনে দুঃখ-হতাশা থাকবেই। আমাদের মেয়েদের প্রথম থেকেই খারাপ সময় বা কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মতো মানসিকভাবে শক্তিশালী করে গড়ে তুলতে হবে। পরিবারের সবাইকে কিশোরীর মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি সতর্ক ও যত্নবান থাকা খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের পরিবারের একটি সাধারণ সমস্যা হচ্ছে তারা মেয়েদের যাবতীয় সমস্যা থেকে দূরে রাখতে ঘরবন্দি করে। অথচ এতে হিতে বিপরীতটাই বেশি হয়। মেয়েদের স্বাধীন ও স্বনির্ভর করে গড়ে তুলতে হবে। তাদের শেখাতে হবে জীবনে ভুল হবে, সেই ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে হবে। তুমি ভুল করলেও মা-বাবা কিংবা পরিবার তোমার পাশে থাকবে। নিজের দুর্বলতাগুলো মেনে নিয়ে নিজের ক্ষমতার ওপর বিশ্বাস রাখলে জীবনে এগিয়ে চলার সাহস পাওয়া যায়।

সর্বোপরি মানসিক স্বাস্থ্য ভালো রাখতে নারীদের আরও বেশি স্বনির্ভর হতে হবে। ঘরবন্দি না থেকে ইতিবাচক দৃষ্টি ভঙ্গিতে মুক্ত পৃথিবীর স্বাদ নিতে হবে। নিজের মতো করে জীবন উপভোগ করতে হবে। নিজের যত্ন নেওয়া খুব জরুরি। নিজের জন্য কিছুটা সময় আলাদা রাখা যেতে পারে। নিজের মনের কথা শোনা, বই পড়া, গান শোনা। তবেই মনের স্বাস্থ্য ভালো থাকবে। আর অবশ্যই যেকোনো মানসিক চাপ বা বিষণ্নতার মতো সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ