বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ আত্মপ্রকাশের একদিনের মাথায় এবার পদত্যাগ করেছেন শ্যামলী সুলতানা জেদনী। তিনি সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির ‘সংগঠক’ পদে ছিলেন। ‘বিশেষ কারণে সবকিছু থেকে আজ ইস্তফা দিতে হচ্ছে’ উল্লেখ করে পদত্যাগের ঘোষণায় জেদনী বলেন, ‘আরেকটি বিষয় উল্লেখ করে দেওয়া ভালো, আমার এই পুরো জার্নিতে কিংবা কাজে আমি সংগঠন থেকে কোনো প্রকার অর্থ গ্রহণ করিনি।’ এই জেদনী জুলাই গণঅভ্যুত্থানে রাজপথে গুরুত্ব ভূমিকা রাখেন এবং মিডিয়ায় সাহসী বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় আসেন।
বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাত ১১টা ৫৬ মিনিটে সোশ্যাল মিডিয়া ফেসবুকে পোস্ট করে এ তথ্য জানান তিনি। পাঠকের জন্য তার পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো—
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের কেন্দ্রীয় কমিটির “সংগঠক” পদ থেকে স্বেচ্ছায় ও সজ্ঞানে পদত্যাগ করলাম।
গত ৭/৮ মাস ছিলো আমার জীবনের অন্যতম অভিজ্ঞতার সময়কাল। পুরো সময়জুড়ে অনেক কিছু বুঝেছি , জেনেছি , শিখেছি। নানা রকম চিন্তাভাবনার মানুষের সাথে মিশতে পারা এবং তাদের সাথে গল্প করতে পারা নিঃসন্দেহে আমার জীবনের অন্যতম অধ্যায়। জুলাই/অগাস্টের পর আর সবার মতো আমার মনেও নানা আশা-আকাঙ্ক্ষার উদয় হয়েছে যার পুরোটা জুড়ে ছিলো দেশের মানুষের জন্য কিছু করা এবং গতানুগতিক রাজনৈতিক ধারার পরিবর্তন। কাজেই গণঅভ্যূত্থানের স্পিরিটকে ধারণ করে এর ভীতকে মজবুত করার জন্য দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে ছুটে বেড়িয়েছি। যখন মনে হয়েছে , হাতে সময় কম তবে কাজ অনেক ; ঠিক তখনই সেমিস্টার ড্রপ দিয়ে এই জায়গাকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছি। চলমান সেমিস্টারেও বেশিরভাগ ক্লাস করার সুযোগ হয়ে ওঠে নি। তবে বিশেষ কারণে সবকিছু থেকে আজ ইস্তফা দিতে হচ্ছে।
গত ৬ মাসে বোধহয় ১২০ দিনও বাসায় থাকতে পারি নি , মায়ের হাতের রান্না খেতে পারি নি। কারণ দেশের নানা প্রান্তের মানুষকে পড়ার জন্য , বোঝার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছি। আমাদের সমাজে মেয়েদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির ইতিবাচক পরিবর্তন এখনও আসে নি। কাজেই যখন রাত ২/৩ টায় বাসায় ফিরতাম , গলির মোড়ের দোকানদার থেকে শুরু করে অনেকে আড়চোখে তাকাতো। এইসব উপেক্ষা করে চলার দারুণ ক্ষমতা সৃষ্টিকর্তা অবশ্য আমাকে দিয়েছে। পড়াশোনা/ নিজের শখ / যত্ন বিসর্জন দেয়া বা কারো কোনো ভাবনা নিয়ে আমার কোনো মাথাব্যথা নেই কিংবা কোনো অনুশোচনা কাজ করছে না। তবে আজ খারাপ লাগছে এই ভেবে যে , গত ৬ মাস আমার মা-কে আমি ঠিকঠাক সময় দিতে পারি নি বরং বেশিরভাগ সময় উপেক্ষা করে গেছি। আমার এইটুকু জার্নিতে আমার মা সবচেয়ে বেশি সাপোর্টিভ ছিলো , কি কি করেছে আমার জন্য সেগুলো বলা এখানে মূখ্য বিষয়ও নয় অবশ্য। সবকিছু বাদ দিয়ে এই জায়গাকে আপন করে নেয়ার ফলে যা কিছু হারিয়েছি, তা নিয়ে মা মাঝেমধ্যে বকা দিলেও আজ যখন আমি এখান থেকে বেরিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছি ; ঠিক তখনই আমার মা’র চোখেও পানি দেখেছি!
বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের জন্য শুভকামনা রইলো। ৫৪ বছরের কুৎসিত ছাত্র রাজনীতির অবসান এই প্লাটফর্মের হাত ধরে হোক, এই প্রত্যাশা! আপনারা সুস্থ ছাত্র রাজনীতির ধারা প্রতিষ্ঠা করুন , স্বজনপ্রীতির অবসান ঘটিয়ে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করার দিকে অগ্রসর হোন। যোগ্য নেতৃত্বকে প্রাধান্য দেয়া এবং মানুষকে মর্যাদা দেয়ার বিষয়ে সচেতন হয়ে উঠুন, মানুষের অধিকারের কথা বলুন।
যাদের সাথে এতদিন কাজ করেছি কিংবা গল্প করেছি , তাদের জন্যও শুভকামনা রইলো। আপনারা এগিয়ে যান, সাংগঠনিকভাবে আপনাদের সাথে না থাকলেও অন্যায়ের বিরুদ্ধে যেকোনো প্রতিবাদে আমি আপনাদের সাথে থাকব , অনিয়মের বিরুদ্ধে আমার লড়াই আজীবন চলবে। আজকের সিদ্ধান্ত আমার জীবনের অন্যতম কঠিন এবং কষ্টের সিদ্ধান্ত তবে আবুল মনসুর আহমেদ এর একটা লাইনকে আমি ধারণ করি বলে এখানে থাকা আমার পক্ষে আর সম্ভব হয়ে উঠছে না।
আরেকটি বিষয় উল্লেখ করে দেয়া ভালো, আমার এই পুরো জার্নিতে কিংবা কাজে আমি সংগঠন থেকে কোনো প্রকার অর্থ গ্রহণ করি নি।