যাঁরা হাঁপানির সমস্যায় ভুক্তভোগী, একমাত্র তাঁরাই বোঝেন এর কষ্ট। এখন যে হারে বায়ুদূষণ বেড়ে চলেছে, তাতে প্রায় ঘরে ঘরেই হাঁপানির রোগী। কাশি না কমা, বুকে চাপ অনুভূত হওয়া, বুকে ঘড়ঘড় শব্দ হওয়া, লাগামছাড়া হাঁচি, টান, অ্যালার্জি—এমন নানা উপসর্গ দেখা দেয়। কিন্তু আজও মানুষের মধ্যে অ্যাস্থমা বা হাঁপানি নিয়ে নানা ভুল ধারণা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে সরাসরি কথা বলেছেন কলকাতা অ্যাপোলো হাসপাতালের পালমোনারি মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক সমরজিৎ দাস। ভারতে প্রতি বছর প্রায় ২ লক্ষ মানুষের মৃত্যু হয় হাঁপানির জেরে। তাই সতর্ক ও সচেতন থাকা জরুরি।
ধারণা: হাঁপানি গুরুতর রোগ নয়
সত্য: হাঁপানির জেরে মৃত্যুর ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে। শারীরিক প্রদাহ কমাতে এবং কোনও জটিলতা এড়াতে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে চলা জরুরি।
ধারণা: হাঁপানি নিরাময় করা যায়
সত্য: হাঁপানি ক্রনিক অসুখ, অর্থাৎ, এই রোগের হাত থেকে পিছু ছাড়ানো যায় না। শুধু হাঁপানির উপসর্গকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। চিকিৎসাধীন থাকতে হয় সারাজীবন।
ধারণা: শ্বাসকষ্ট না হলে হাঁপানি নয়
সত্য: এই ধারণা সম্পূর্ণরূপে ভুল। শ্বাসকষ্ট হাঁপানির উপসর্গ মাত্র। ব্যক্তি বিশেষে হাঁপানির উপসর্গ আলাদাও হতে পারে। অনেক সময় শুধু স্টেথোস্কোপ দিয়ে যাচাই করলেই এই রোগ ধরা পড়ে। যদি ফ্লেয়ার–আপ মারাত্মক হয়, সেক্ষেত্রে ফুসফুসের কিছু অংশে বায়ু চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর জেরে কোনও ঘ্রাণ পাওয়া যায় না। সুতরাং, এটা এমন একটি রোগ যা সঠিক পরীক্ষার মাধ্যমে নির্ণয় করা দরকার।
ধারণা: হাঁপানি শুধুমাত্র ছোট বয়সের রোগ
সত্য: অনেক বাচ্চার ছোট বয়সেই হাঁপানি ধরা পড়ে। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে এই রোগের উপসর্গও কমে যায়। কিন্তু সবসময় এমনটা হয় না। হতেই পারে, বয়স বৃদ্ধির পরেও হাঁপানি একইভাবে ভোগায়। অনিয়ন্ত্রিত হাঁপানি ফুসফুসের মারাত্মক ক্ষতি হয়। তবে স্বাস্থ্যকর লাইফস্টাইল ও চিকিৎসার মাধ্যমে আপনি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেন।
ধারণা: হাঁপানি হল উদ্বেগজনিত ব্যাধি
সত্য: এটি ভুল ধারণা। হাঁপানি একটি দীর্ঘস্থায়ী ফুসফুসের অবস্থা যা শ্বাসনালীতে প্রদাহ এবং সংকীর্ণতা দ্বারা চিহ্নিত করা হয়। এটি শারীরিক পরিশ্রম, অ্যালার্জেন, সংক্রমণ ও মানসিক চাপ সহ বিভিন্ন কারণের দ্বারা ট্রিগার হয়। কিন্তু হাঁপানি কোনও মানসিক সমস্যা নয়–এটি ফুসফুসের একটি শারীরিক অসুস্থতা। হাঁপানি প্রাথমিকভাবে একটি শারীরিক অবস্থা যা ফুসফুসকে প্রভাবিত করে ঠিকই, তবে মানসিক চাপে থাকা কিছু ব্যক্তির মধ্যে এর লক্ষণগুলিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে। স্ট্রেস লেভেল কমালে সামগ্রিক ভাবে হাঁপানির লক্ষণও কমানো যায়।