সর্বশেষ
ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে প্যারোডি পোস্টারে হলিউড অভিনেতা ভিন্স ভন
চাঁনখারপুলে হত্যাকাণ্ড : ৮ জনকে অভিযুক্ত করে ট্রাইব্যুনালে প্রতিবেদন দাখিল
পেস তাণ্ডবে টাইগারদের স্বস্তির সকাল
বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাব সোনায়, দামে নতুন রেকর্ড
দেশে তিন স্তরে কমছে ইন্টারনেটের দাম
ভারতে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট ভ্যান্স, আজই মোদির সঙ্গে বৈঠক
প্রাইমএশিয়া বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পারভেজ হত্যায় আটক ৩
সংস্কারের মূল উদ্দেশ্য ফ্যাসিবাদ যেন প্রতিষ্ঠা না পায় : আলী রীয়াজ
ফ্যাসিবাদী শক্তি রুখে দেওয়ার ব্যাপারে আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ: নাহিদ
তারল্য সংকটে ব্যাংক খাত, বাজেট ঘাটতি মেটাতে বেকায়দায় সরকার
জামায়াত নেতা আজহারের আপিল শুনানি মঙ্গলবার
প্রধান উপদেষ্টার কাতার সফরে জনশক্তি রপ্তানি ছাড়াও যেসব বিষয় গুরুত্ব পাবে
সোমবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ
মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তন, চেয়ারম্যান ও মেয়র পদে সরাসরি ভোট না করার সুপারিশ
কানাডায় এক দিনে রেকর্ড ২০ লাখ আগাম ভোট

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর রাজধানীতে যত আন্দোলন

অনলাইন ডেস্ক

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতন ঘটে। ৮ আগস্ট গঠন করা হয় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করা হয় নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে।

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই শুরু হয় একের পর এক আন্দোলন। এতে এক রকম বিব্রতকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছে বর্তমান সরকার। এসব আন্দোলনের মধ্যে ৭৬ শতাংশই হয়েছে বিভিন্ন পেশাজীবীর ব্যানারে। শিক্ষাসংশ্লিষ্ট আন্দোলন আছে ৩২ ভাগ।

এছাড়া শ্রমিক আন্দোলন আট ভাগ এবং অন্যান্য ব্যানারের আন্দোলন ১০ ভাগ। এর মধ্যেই বন্ধ হয়েছে ৯০ ভাগ আন্দোলন। ১০ ভাগ আন্দোলন এখনো চলমান। ৫ আগস্টের পর থেকে গত ৩০ জানুয়ারি পর্যন্ত ১২৬টি (কর্মসূচি) আন্দোলনের বৈশিষ্ট্য বিশ্লেষণ করে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

এছাড়া খুন, ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের প্রতিবাদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সব শিক্ষার্থীর আবাসন নিশ্চিত এবং চা শ্রমিকদের মজুরি বাড়ানোসহ বেশকিছু দাবিতে আরও কয়েকটি আন্দোলন চলমান বলে যুগান্তরের অনুসন্ধানে জানা গেছে।

আন্দোলনসংশ্লিষ্ট অনেক বাহারি নামের সংগঠনের তৎপরতার বিষয়েও তথ্য পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, গত সাত মাসে আন্দোলনের হটস্পট হিসাবে ব্যবহার করা হয়েছে-জাতীয় প্রেস ক্লাব, বাংলাদেশ সবিচালয়, রেলভবন ও কমলাপুর রেলস্টেশন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ মোড় এবং জাতীয় জাদুঘর প্রাঙ্গণ। সবচেয়ে বেশি আন্দোলন হয়েছে জাতীয় প্রেস ক্লাবে। বেসরকারি শিক্ষকসহ একাধিক সংগঠন বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে এখনো আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন প্রেস ক্লাবের সামনের রাস্তায়। সরকারি কর্মচারীদের আন্দোলনের প্রধান স্থান হিসাবে পরিচিতি পেয়েছে সচিবালয়।

রেলওয়ে কর্মচারীদের আন্দোলনের কেন্দ্রস্থল হলো-রেলভবন ও কমালপুর রেলওয়ে স্টেশন। আর শিক্ষার্থীদর আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ মোড় ও জাতীয় জাদুঘর প্রাঙ্গণ।

এছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে গত সাত মাসে যেসব দাবিতে আন্দোলন হয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ হলো- চাকরিচ্যুত ও পুনর্বহালের আন্দোলন, গণঅভ্যুত্থানে হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও বিচার, শহিদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের উন্নত চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত, সরকারি চাকরিজীবীদের বিভিন্ন দাবি, শ্রমিক স্বার্থ, শিক্ষাসংশ্লিষ্ট আন্দোলন, সংখ্যালঘু ও ধর্মীয় সংগঠনগুলোর আন্দোলন এবং পরিবহণ ও যানবাহনসংশ্লিষ্ট।

জানতে চাইলে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শেখ সাজ্জাত আলী যুগান্তরকে বলেন, যে কোনো সংগঠন তাদের অধিকার আদায়ের জন্য দাবি জানতেই পারে। তবে কয়েক মাস ধরে যে প্রক্রিয়ায় দাবি জানানো হচ্ছে সেটা যথাযথ নয়। কিছু হলেই আন্দোলন শুরু হচ্ছে। দখল করা হচ্ছে রাজপথ। এতে মানুষের ভোগান্তি বাড়ছে। আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে আমি বলব-দাবি আদায়ের জন্য আপনারা রাস্তা নয়, আলোচনার টেবিলে বসে সমস্যার সমাধান করুন।

গতিপথ ও ধারাবাহিকতা পর্যালোচনায় দেখা যায়, আন্দোলনের সংখ্যা দ্রুত বেড়েছে গত আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরপরই।

গত বছরের ১৩ থেকে ২৫ আগস্টের মধ্যে পালিত হয়েছে সবচেয়ে বেশি কর্মসূচি। ওই বছরের সেপ্টেম্বর মাসে আন্দোলনের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। একই মাসের ১০ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে আন্দোলন চালিয়েছে সরকারি চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থীরা। অক্টোবর মাসে ফের আন্দোলনের চাপ বাড়ে। পুরো মাসব্যাপী আন্দোলন চালায় সরকারি কর্মচারী ও শিক্ষা খাতসংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো। নভেম্বর মাসে আন্দোলন কিছুটা হ্রাস পেলেও ৭ থেকে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত কিছু বড় কর্মসূচি ছিল।

গত ডিসেম্বরে তিতুমীর কলেজ ও শিক্ষক সংগঠনের আন্দোলনে উত্তাল ছিল রাজপথ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে আবারও আন্দোলনের সংখ্যা বাড়তে থাকে। ২৫ থেকে ৩০ জানুয়ারির মধ্যে অনেকগুলো কর্মসূচি চোখে পড়ে। ফেব্রুয়ারিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির মাধ্যমে সরকারকে বড় ধাক্কা দিতে চেয়েছিল একটি পরাজিত রাজনৈতিক শক্তি। চলতি মাসের শুরু থেকে নারী ও শিশু নির্যাতন-হয়রানি এবং ধর্ষণের বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে।

এসবের প্রতিবাদের রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে আন্দোলন চলছে। এছাড়া বনানীতে সড়ক দুর্ঘটনায় পোশাক শ্রমিক নিহতের ঘটনায় সড়ক অবরোধে সোমবার অচল হয়ে পড়ে পুরো রাজধানী।

চাকরি পুনর্বহালের আন্দোলনের মধ্যে আছে চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য, সেনা সদস্য ও বিজিবি ৭৬তম ব্যাচ, ব্যাটালিয়ন আনসার ও সাধারণ আনসার, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও আইএফআইসি ব্যাংকের কর্মকর্তা-কর্মচারী, গ্রামীণফোন ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের আন্দোলন।

সরকারি চাকরিজীবী আন্দোলনসংক্রান্ত দাবির মধ্যে আছে-চাকরিতে প্রবেশের বয়সসীমা ৩৫ বছর, ১১-২০ গ্রেডের সরকারি কর্মচারীদের বেতন বৈষম্য নিরসন ও পদোন্নতি, উপসচিব পদে ক্যাডারদের সমান সুযোগের দাবি ও কর্মকর্তাদের বদলি নীতি সংস্কার।

শ্রমিক আন্দোলনের দাবিগুলোর মধ্যে আছে-নির্মাণ শ্রমিকের নিরাপত্তা, বাসস্থান ও রেশনিং ব্যবস্থা চালু; রিকশা-ভান-ইজিবাইক শ্রমিকদের লাইসেন্স ও রুট পারমিট এবং সেবরকারি প্রতিষ্ঠানের শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি।

শিক্ষাসংশ্লিষ্ট আন্দোলনের দাবিগুলোর মধ্যে আছে-মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ, প্রাথমিক শিক্ষকদের বেতন বৈষম্য নিরসন ও চাকরি স্থায়ীকরণ, মেডিকেল টেকনোলজি ও ফার্মেসি শিক্ষার্থীদের বৈষম্য দূরীকরণ, ৪৬তম বিসিএসের প্রিলিতে উত্তীর্ণদের লিখিত পরীক্ষায় অংশগ্রহণ নিশ্চিত, সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের স্বতন্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি এবং শিক্ষার কারিকুলাম পরিবর্তন।

সংখ্যালঘু ও ধর্মীয় সংগঠনসংক্রান্ত আন্দোলনের দাবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন ও সংখ্যালঘুবিষয়ক মন্ত্রণালয় গঠন, হিন্দুধর্মীয় গুরু চিন্ময় দাসের মুক্তির দাবি বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ মঞ্চের এবং বৈষম্য দূরীকরণের দাবি ইসকন ও সনাতন ধর্মীয় সংগঠনগুলোর। পরিবহণ ও যানবাহনসংশ্লিষ্ট আন্দোলনগুলোর দাবির মধ্যে আছে-ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালু রাখা, হালকা মোটরযান চালকদের জন্য সাদা প্লেট সংযুক্ত গাড়ি ভাড়ায় চালানোর অনুমতির দাবি এবং সিএনজিচালকদের রেজিস্ট্রেশন ও পুলিশের হয়রানি বন্ধের দাবি।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত ৫ আগস্টের পর থেকে পেশাজীবী যেসব সংগঠনের ব্যানারে আন্দোলন হয়েছে সেগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো-চাকরিচ্যুত পুলিশ সদস্য, ১৩ থেকে ২২তম ব্যাচের উপসচিব, চাকরিচ্যুত ব্যাটালিয়ন আনসার, বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ও বাংলাদেশ কলেজ সমিতি, স্বাধীনতা আউটসোর্সিং কর্মচারী কল্যাণ পরিষদ, বিডিআর ৭৬তম ব্যাচের সৈনিক, বেতন বৈষম্যবিরোধী গ্রাম পুলিশ সমন্বয় কমিটি এবং বাংলাদেশ পরিবার পরিকল্পনা স্বেচ্ছাসেবী (মহিলা) দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ।

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ