সুরার শুরুতে কোরআনের কসম করে বলা হয়েছে যে, মহানবী (সা.) অবশ্যই আল্লাহর রাসুল। তিনি সঠিক পথে সুপ্রতিষ্ঠিত। তাঁকে পাঠানো হয়েছে এমন একটি সম্প্রদায়কে ঈমানের দাওয়াত দেওয়ার জন্য যাদের পূর্বসূরিদের সতর্ক করা হয়নি। এরপর মক্কার কাফিরদের ঈমান না আনার কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে যে, তাদের অন্তর তালাবদ্ধ। পরে কিয়ামত সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা আনা হয়েছে। কিয়ামতের দিন জাহান্নামবাসীদের পৃথক করা হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি জান্নাতবাসীদের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এরপর বলা হয়েছে যে, মহানবী (সা.) কবি নন, বরং তিনি স্পষ্ট কোরআনের মাধ্যমে সতর্ককারী। গাছ থেকে আগুন সৃষ্টির তত্ত্ব বর্ণনা করা হয়েছে।
আদেশ-নিষেধ-হেদায়েত
১. আলেমদের কাজ পৌঁছে দেওয়া। (আয়াত : ১৬-১৭)
২. মানুষ নিজের অমঙ্গল নিজে ডেকে আনে। (আয়াত : ১৯)
৩. মানুষের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কাজ কোরো। (আয়াত : ২১)
৪. দ্বিন নিয়ে উপহাসকারীদের জন্য আফসোস। (আয়াত : ৩০)
৫. শস্য উত্পাদন আল্লাহর দান। (আয়াত : ৩৩)
৬. আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় কোরো। (আয়াত : ৩৪-৩৫)
৭. আল্লাহর নিদর্শন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিও না। (আয়াত : ৪৬)
৮. জান্নাতে মুমিনে সব প্রত্যাশা পূরণ হবে। (আয়াত : ৫৭-৫৮)
৯. শারীরিক সুস্থতা আল্লাহর ইচ্ছাধীন। (আয়াত : ৬৬)
১০. কোরআন কোনো কাব্য নয় এবং আলেমদের জন্য কাব্যচর্চা শোভনীয় নয়। (আয়াত : ৬৯)
১১. পাপীদের কথায় ব্যথিত হয়ো না। (আয়াত : ৭৬)
১২. নিজের অস্তিত্বের কথা ভুলে যেও না। (আয়াত : ৭৭)
১৩. আল্লাহর উপমা সৃষ্টি কোরো না। (আয়াত : ৭৮)
১৪. সর্বময় ক্ষমতা আল্লাহর জন্য। (আয়াত : ৮৩)
সুরা সাফফাত
সুরা সাফফাতের মধ্যে প্রধাণত তিনটি গায়েবি বিষয় যথা—ফেরেশতা, জিন ও পরকাল সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। শুরুতেই ফেরেশতাদের শক্তিমত্তা এবং আল্লাহর হুকুম পালনে একনিষ্ঠতা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। এরপর জিনদের বিষয় আনা হয়েছে। জিনদের একটি দল ফেরেশতাদের পারস্পরিক কথাবার্তা জানার জন্য আকাশে উঠার চেষ্টা করে। আর তখনি জ্বলন্ত উল্কা তাদের ধাওয়া করে। এই সুরায় কাফিরদের কিয়ামতের দিনের করুণ পরিণতির কথা বর্ণনা করা হয়েছে। উপদেশের জন্য নুহ, ইবরাহিম, ইসমাইল, হারম্নন, ইলিয়াস, লুত ও ইউনুস (আ.)-এর ঘটনার কিছু অংশ আনা হয়েছে। ফেরেশতাদের প্রশংসা করে সুরাটি শেষ করা হয়েছে।
আদেশ-নিষেধ-হেদায়েত
১. মন্দ লোকেরাই উপদেশ গ্রহণ করে না। (আয়াত : ১৩)
২. আল্লাহর নিদর্শন নিয়ে উপহাস কোরো না। (আয়াত : ১৪-১৫)
৩. আল্লাহ একনিষ্ঠ বান্দাদের সম্মানিত করবেন। (আয়াত : ৪০-৪১)
৪. পূর্বসূরীদের ভ্রান্তপথ পরিহার করো। (আয়াত : ৬৯-৭০)
৫. আল্লাহর কাছে বিশুদ্ধ মনে উপস্থিত হও। (আয়াত : ৮৪)
৬. সুসন্তান লাভের জন্য প্রার্থনা করো। (আয়াত : ১০০)
৭. আল্লাহর সাহায্যেই মানুষ বিজয়ী হয়। (আয়াত : ১১৬)
সুরা সাদ
এই সুরায় দাউদ, সুলায়মান, আইয়ুব ও আদম (আ.)-এর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। অন্যান্য মাক্কি সুরার মতো এই সুরায়ও তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাত সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। মুশরিকদের ভ্রান্ত আকিদা খণ্ডন করা হয়েছে। জান্নাতের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য ও জাহান্নামের আজাবের ভয়াবহতা সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। নুহ (আ.)-এর জাতি, ফেরাউনের জাতি, আদ জাতি, সামুদ জাতি, লুত (আ.)-এর জাতি ও মাদিয়ানবাসীদের ধ্বংসের ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। আনা হয়েছে ইয়াকুব, ইসমাঈল, ইয়াসআ ও জুলকিফল (আ.)-এর ঘটনা। একেবারে শেষের দিকে আদম (আ.)-এর ঘটনা আনা হয়েছে।
আদেশ-নিষেধ-হেদায়েত
১. কোরআন উপদেশপূর্ণ কিতাব। (আয়াত : ১)
২. কোরআন অবিশ্বাসকারীদের জন্য রয়েছে শাস্তি। (আয়াত : ৮)
৩. সৃষ্টিজগত আপন কাজের মাধ্যমে আল্লাহর ইবাদত করে। (আয়াত : ১৮)
৪. ইসলামী রাষ্ট্রের রাষ্ট্রনায়ক জ্ঞানী ও বাগ্মী হবে। (আয়াত : ২০)
৫. শরিকদের প্রতি অবিচার কোরো না। (আয়াত : ২৪)
৬. মুমিন ভুল স্বীকার করে অনুতপ্ত হয়। (আয়াত : ২৪)
৭. খেয়াল-খুশির অনুসরণ মানুষকে সত্যচ্যূত করে। (আয়াত : ২৬)
৮. আল্লাহর কোন সৃষ্টিই অনর্থক নয়। (আয়াত : ২৭)
৯. কোরআন নিয়ে চিন্তা ও গবেষণা করো এবং অনুধাবন করার চেষ্টা করো। (আয়াত : ২৯)
১০. আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে দান করো। (আয়াত : ৩৯)
১১. বিপদে আল্লাহকে স্মরণ করো। (আয়াত : ৪১)
১২. পাপের উপলক্ষ হইয়ো না। (আয়াত : ৬১)
১৩. নিষ্ঠবানরাই শয়তানের ধোঁকা থেকে বাঁচতে পারে। (আয়াত : ৮২-৮৩)
সুরা ঝুমার
আলোচ্য সুরায় মানবসৃষ্টির সূচনা থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত বর্ণনা করা হয়েছে। এই সুরার প্রধান আলোচ্য বিষয় আল্লাহর একত্ববাদ, আল্লাহর অস্তিত্বের প্রমাণ, কোরআন ও ওহি। কোরআন এসেছে আল্লাহর পক্ষ থেকে—এ কথার মাধ্যমে সুরাটি শুরু হয়েছে। এরপর আল্লাহর সত্তা ও গুণাবলিতে শিরকের সম্ভাবনা নাকচ করা হয়েছে। আসমান-জমিনের সৃষ্টি, রাত-দিন, চন্দ্র-সূর্য, মাটির বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি বর্ণনা করে আল্লাহর অসীম কুদরতের কথা জানানো হয়েছে। মুমিন ও কাফিরের মধ্যে তুলনামূলক পর্যালোচনা করা হয়েছে। সুরাটি শেষ হয়েছে মানুষকে দুইভাগে ভাগ করার মাধ্যমে। একদল মুমিন আর অন্যদল কাফির।
আদেশ-নিষেধ-হেদায়েত
১. আল্লাহ কৃতজ্ঞ বান্দাদের পছন্দ করেন। (আয়াত : ৭)
২. কেউ কারো পাপের বোঝা বহন করবে না। (আয়াত : ৭)
৩. আল্লাহকে ভুলে যেও না। (আয়াত : ৮)
৪. তাহাজ্জুদ আদায় করো। (আয়াত : ৯)
৫. আল্লাহকে ভয় করো। (আয়াত : ১০)
৬. আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করো। (আয়াত : ১২)
৭. পরিবারে ধর্মহীনতার চর্চা করো না। (আয়াত : ১৫)
৮. উত্তম কথা গ্রহণ করো। (আয়াত : ১৮)
৯. মানুষের প্রতি কঠোরহূদয় হয়ো না। (আয়াত : ২২)
১০. কোরআন পাঠে মুমিন হূদয় বিগলিত হয়। (আয়াত : ২৩)
১১. কোরআন সহজ ও সাবলীল। (আয়াত : ২৮)
১২. আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় করো না। (আয়াত : ৩৬)
১৩. মানবীয় জ্ঞান মুক্তির জন্য যথেষ্ট নয়। (আয়াত : ৪৯)
১৪. আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। (আয়াত : ৫৩)
১৫. মুত্তাকিদের আল্লাহ রক্ষা করেন। (আয়াত : ৬১)