গ্রামভর্তি (Noiva Do Cordeiro) হেসেখেলে বেড়াচ্ছেন কয়েকশো মহিলা। সকলেই সুন্দরী, যুবতী। তবে তাঁদের কারও না হয় প্রেম, না হয় বিয়ে! হবে কী করে, গ্রামে তো কোনও পুরুষই নেই। সকলেই বিদেশে চলে যান কাজ করতে। এমনকি কোনও পুরুষ রাজিও হন না এই গ্রামে এসে কাউকে বিয়ে করতে। কারণ এক অদ্ভুত নিয়ম। এই গ্রামের কোনও মেয়েকে বিয়ে করলে থেকে যেতে হবে মেয়েটির ঘরেই এবং চাকরিবাকরি ছেড়ে করতে হবে ঘরকন্নারই কাজ। এই অদ্ভুত শর্তই মেনে নেন না কেউ। তাই এই গ্রামের তরুণীরা কার্যত হাঁ করে থাকেন, যদি কোনও পুরুষ এসে তাঁদের বিয়ে করেন!
রূপকথার গল্প নয়, ব্রাজিলের ছোট্ট গ্রাম ‘নয়ভা ডো করডেইরো‘ (Noiva Do Cordeiro) গ্রামে ঠিক এমনটাই ঘটে বাস্তবে। ছবির মতো সুন্দর সে গ্রামে বসবাস করেন প্রায় ৬০০ মহিলা। তাঁদের মধ্যে ৩০০ জনই যুবতী এবং বিবাহযোগ্যা। তাঁদের রূপের বাহারে যেন আরও খুলেছে গ্রামের সৌন্দর্য। তার উপরে মহিলারা অসম্ভব সুন্দর করে সাজিয়েগুছিয়ে রাখেন গোটা গ্রাম। সব মিলিয়ে যেন ‘সাত সাগর আর তেরো নদীর পারে‘ থাকেন ‘স্বপ্নে দেখা রাজকন্যে‘রা। এ যেন সেই স্বপ্নের দেশ, যেখানে ফাগুন কভু শেষ হয় না!
গ্রামের জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ— সবটাই মেয়েদের দায়িত্বে। গ্রামের বাড়িগুলি গোলাপি রঙে রাঙানো। গাছপালা সুন্দর করে ছেঁটে রঙিন ফিতে দিয়ে সাজানো। ঘরের কাজ, বাইরের কাজ, দোকান, বাজার, অফিস সবই চালাচ্ছেন ফিটফাট, সুন্দরী এবং আকর্ষণীয় মেয়েরা।
কিন্তু এই এত সুন্দর গ্রামের খামতি একটাই। সুন্দরী মেয়েদেরও জীবনের কমতি একটাই। পুরুষ নেই তাঁদের জীবনে। তাঁরা কিন্তু প্রেমে পড়তেও রাজি, বিয়ে করতেও। স্বপ্নের পুরুষ কেমন হবেন, তা নিয়ে ফ্যান্টাসিরও শেষ নেই। কিন্তু ওই পর্যন্তই। একটা চুমুও যেন জুটতে নেই তাঁদের কপালে।
এই অদ্ভুত পরিস্থিতির কারণ জানতে ফিরে যেতে হবে অনেকদিন আগে। সালটা ১৮৯১। ব্রাজিলের একটি গ্রামে মারিয়া সেনহোরিনা ডি লিমা নামে এক তরুণীকে জোর করে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তিনি স্বামীকে ছেড়ে বাপের বাড়ি ফিরে চলে আসেন। কিন্তু মারিয়ার এই বিদ্রোহ সে যুগে মেনে নেয়নি সমাজ। আপত্তি জানায় চার্চও। গ্রাম থেকে তাড়িয়েই দেওয়া হয় তরুণীকে। মেয়েটি তখন নয়ভা ডো করডেইরো গ্রামে চলে আসেন এবং সেখানে মহিলাদের নিয়েই একটি সম্প্রদায় গড়ে তোলেন। নতুন নিয়ম করেন, এই সম্প্রদায়ের মেয়েরা বিয়ের পরে কেউ শ্বশুরবাড়ি যাবেন না, স্বামীকে স্ত্রীর বাড়িতে এসে থাকতে হবে।
সেই থেকে এই নিয়ম। এমনটাই লোকমুখে ফেরে।
এই কাহিনি ছাড়াও আরও এক কিংবদন্তি রয়েছে, ১৯৪০ সাল নাগাদ এই নয়ভা গ্রামের এক ষোলো বছরের কিশোরীকে বিয়ে করে এক যুবক। তার পরে গ্রামের মধ্যে একটি গির্জা প্রতিষ্ঠা করে মহিলাদের জন্য একাধিক কঠোর নিয়ম জারি করে। মহিলাদের জন্য মদ্যপান, গান শোনা, লম্বা চুল রাখা, গর্ভনিরোধক গ্রহণ করা— সবই নিষিদ্ধ করে দেয় সে। নিয়মের জেরে গ্রামের মহিলাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। এর পরে সেই যুবকের মৃত্যুর পর মহিলারাই স্থির করেন, গ্রামে আর কোনও পুরুষের শাসন চলতে দেওয়া হবে না। নারীরাই হবেন শাসনকর্তা।
সেই থেকে গ্রামে শুরু হয় নারীদের নিজস্ব শাসন। গ্রামে নিয়ম করা হয়, বিয়ে করে স্ত্রীর কাছেই থাকতে হবে স্বামীদের। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই নিয়ম আর অনেকেই মানতে চান না স্বাভাবিকভাবেই। ফলে মেয়েদেরও আর বিয়ে হয় না ওই গ্রামে। তবে বিয়ের জন্য তাঁরা সবসময় তৈরি। কেউ যদি বাইরে থেকে এসে তাঁদের সঙ্গে থাকতে রাজি হন, বিয়ে করতে চান, তাহলে সুন্দরীরা তা তখনই মেনে নেবেন। বিবাহ করতে রাজি হওয়া যুবকরা রাজকন্যার সঙ্গে পাবেন রাজত্বও। শর্ত একটাই, স্ত্রীর বাড়িতে থেকে যেতে হবে। ঘরকন্নার কাজও করতে হবে। সর্বোপরি, পুরুষ–অহং বিসর্জন দিয়ে মেনে নিতে হবে স্ত্রীদের আধিপত্য।
সূত্র: দ্য ওয়াল