বর্তমানের ব্যস্ততম জীবনে ল্যাপটপ আমাদের সবচেয়ে বড় সঙ্গী। তবে ল্যাপটপ কেবল থাকলেই হয় না, কাজকে আরও সহজ ও আরামদায়ক করতে দরকার হয় প্রয়োজনীয় কিছু অ্যাকসেসরির। সঠিক অ্যাকসেসরি ব্যবহারে কাজের গতি যেমন বাড়ে, তেমনি শরীরের ওপর চাপ কমে।
প্রোডাক্টিভিটি হলো নির্দিষ্ট সময়ে কাজের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষমতা। বর্তমান প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর এই প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানোর কাজটি ল্যাপটপের বিভিন্ন অ্যাকসেসরি আরও সহজ তুলছে। পড়ালেখা, চাকরি, ব্যবসা থেকে শুরু করে যেকোনো কাজে আমরা সবাই ভালো ফলাফলেরই প্রত্যাশা করে থাকি। সব মানুষের জন্যই প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টা সময় বরাদ্দ থাকে।
একটু খেয়াল করলে দেখবেন, সবাই কিন্তু এক রকমভাবে সফলতা অর্জন করতে পারে না! একই সময়ে কেউ একজন অনেক বেশি কাজ করে ফেলে, আবার কেউ কেউ কোনো উন্নতিই সাধন করতে পারে না। এর মূল কারণ, প্রোডাক্টিভিটির পার্থক্য। বিশ্বজুড়ে বাড়তে থাকা রিমোট ওয়ার্কিং কালচারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবার ল্যাপটপ অ্যাকসেসরির বাজারও ব্যাপকভাবে প্রসারিত হচ্ছে। তাই একটি প্রোডাক্টিভ ওয়ার্কস্পেস গড়ে তুলতে সঠিক অ্যাকসেসরিগুলোর ব্যবহার ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
যাঁরা ল্যাপটপকে তাঁদের কাজের গতি বাড়ানোর প্রধান টুল হিসেবে ব্যবহার করতে চান, তাঁদের জন্য কিছু নির্দিষ্ট অ্যাকসেসরির ব্যবহার শুধু তাঁদের কাজের গতি বাড়িয়েই দেবে এমন নয়, বরং সেগুলো তাঁদের ক্লান্তি কমানো থেকে শুরু করে ডিভাইসকে টেকসই করাটাও নিশ্চিত করবে। জেনে নেওয়া যাক সেই ১০টি কার্যকরী ল্যাপটপ অ্যাকসেসরির কথা:
নয়েজ–ক্যানসেলিং হেডফোন
কাজের সময় মনোযোগ ধরে রাখার সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় আশপাশের শব্দ। বাড়ি, অফিস কিংবা ক্যাফে—যেখানেই থাকুন না কেন, বাইরের শব্দের কারণে মনোযোগ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এ সমস্যার সহজ সমাধান হলো একটি ভালো মানের নয়েজ–ক্যানসেলিং হেডফোন ব্যবহার করা। এটির ব্যবহার আপনার কাজের মনোযোগ ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
ল্যাপটপ স্ট্যান্ড
দীর্ঘক্ষণ ল্যাপটপ ব্যবহারের ফলে অনেকেই ঘাড় ও পিঠে ব্যথার শিকার হন। এ ক্ষেত্রে ল্যাপটপ স্ট্যান্ড ব্যবহার করলে স্ক্রিনের উচ্চতা চোখের সমান লেভেলে থাকে, যার ফলে শরীরের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে না। এ ছাড়া ল্যাপটপ স্ট্যান্ড ব্যবহার করলে আপনার ডিভাইসটি ঠান্ডা থাকে এবং এয়ার সার্কুলেশন সঠিকভাবে হয়।
স্ট্রিম ডেক
আপনি যদি কনটেন্ট ক্রিয়েটর হন কিংবা ভিডিও এডিটিংয়ের কাজ দ্রুতগতিতে করতে চান, তাহলে স্ট্রিম ডেক আপনার একটি দরকারি গ্যাজেট হতে পারে। এটি কি–বোর্ডের একটি এক্সটেনশন যা সহজেই কাস্টমাইজ করা যায়, ফলে এটি দিয়ে এক ক্লিকেই নানা কাজ করা যায় অতি সহজেই।
এক্সটার্নাল মনিটর
আপনার সামনে একটি বড় স্ক্রিন থাকা মানেই বেশি স্পেস, বেশি কাজের সুযোগ। বড় স্ক্রিনে একাধিক উইন্ডো খুলে রাখা যায়, ফলে একই সঙ্গে একাধিক কাজ সহজেই সম্পন্ন করা যায়। এ ছাড়া এটি চোখের জন্যও বেশ আরামদায়ক।
ডকিং স্টেশন
আপনি যদি বাড়তি তারের ঝামেলা ছাড়াই একটি গোছানো ওয়ার্কপ্লেস তৈরি করতে চান, তাহলে একটি ভালো মানের ডকিং স্টেশন এ ক্ষেত্রে আপনার ভালো বন্ধু হতে পারে। এটি একই সঙ্গে একাধিক মনিটর, ইউএসবি, মাউস, কি–বোর্ড ইত্যাদি ডিভাইসগুলোকে সংযোগ করতে পারে, যা আপনার কাজের গতি বাড়াতে সাহায্য করে।
USB-C হাব
যাঁদের ল্যাপটপে পর্যাপ্ত পোর্ট নেই, তাঁদের জন্য USB-C হাব একটি কার্যকরী সমাধান হতে পারে। আজকাল নতুন ল্যাপটপগুলোতে অনেক সময় পর্যাপ্ত পোর্ট থাকে না। এটি একাধিক ডিভাইস সংযুক্ত করতে সাহায্য করে। বিশেষ করে যাঁরা ভ্রমণ করেন, তাঁদের জন্য এটি বেশ কার্যকর।
পাওয়ার ব্যাংক
অনেক সময় বাইরে থাকলে ল্যাপটপের চার্জ ফুরিয়ে যায়। তখন উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন একটি পাওয়ার ব্যাংক খুব কাজে দেয়। বিশেষ করে যাঁরা রিমোট ওয়ার্কার, তাঁদের জন্য এটি খুবই প্রয়োজনীয় অ্যাকসেসরি।
এক্সটার্নাল SSD
যাঁদের ল্যাপটপে কাজ করতে গিয়ে প্রচুর ফাইল স্টোর বা দ্রুত ডেটা ট্রান্সফারের দরকার হয়, তাঁদের জন্য এক্সটার্নাল SSD আদর্শ সমাধান হতে পারে। এটি হার্ডড্রাইভের তুলনায় দ্রুত কাজ করে ও একই সঙ্গে এর নির্ভরযোগ্যতাও বেশি।
টাচস্ক্রিন স্টাইলাস
আপনার ল্যাপটপ টাচস্ক্রিনের হলে স্টাইলাস পেন ব্যবহার করে আরও স্বাচ্ছন্দ্যে ও সহজেই আপনি ডিজাইন ও নোট নেওয়ার কাজ করতে পারবেন। ডিজাইনার, কনটেন্ট ক্রিয়েটর কিংবা ল্যাপটপে নোট নিতে যাঁরা পছন্দ করেন, তাঁদের জন্য স্টাইলাস পেন দারুণ কার্যকর অ্যাকসেসরি হতে পারে।
ব্লু লাইট স্ক্রিন ফিল্টার
দীর্ঘ সময় ধরে ল্যাপটপের স্ক্রিনের সামনে বসে কাজ করলে চোখের ওপর প্রচণ্ড চাপ পড়ে এবং সেখান থেকে চোখব্যথা, মাথাব্যথার মতো সমস্যা হতে পারে। এ ক্ষেত্রে ব্লু লাইট ফিল্টার ব্যবহার করলে এ সমস্যা অনেকটাই কমানো সম্ভব। এটি ক্ষতিকর আলোর বিকিরণ কমিয়ে চোখকে সুরক্ষা প্রদান করে থাকে।
পরিশেষে একটি স্মার্ট ওয়ার্কস্পেস তৈরি করা মানেই শুধু কাজের গতি বাড়ানো নয়, বরং একই সঙ্গে নিজের আরাম ও স্বাচ্ছন্দ্যের বিষয়টাকেও নিশ্চিত করা জরুরি। সঠিক অ্যাকসেসরি ব্যবহার করলে আপনার কাজ যেমন সহজ হবে, তেমনি শরীরের ওপর চাপ কমবে এবং আপনার ল্যাপটপও দীর্ঘদিন ভালো থাকবে।
প্রযুক্তির এই যুগে আপনার দক্ষতা বাড়াতে চাইলে নিজের ল্যাপটপ সেটআপেও আনতে হবে আধুনিকতার ছোঁয়া। তাই আর দেরি না করে আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী সেরা অ্যাকসেসরিগুলো বেছে নিন ও নিজের কাজ করার প্রোডাক্টিভিটিকে নিয়ে যান নতুন এক চূড়ায়।
তথ্যসূত্র: স্লাশগিয়ার