সর্বশেষ
পর্যাপ্ত সংস্কার ও বিচারের আগে কোনো নির্বাচন নয়: গোলাম পরওয়ার
কর্মীদের বিদেশ পাঠানোর ক্ষেত্রে ৮০ ভাগ সমস্যা দেশ থেকেই তৈরি: পররাষ্ট্র উপদেষ্টা
ওজন কমায় ও ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় তরমুজ
হৃতিকের চেয়েও নাগা স্মার্ট—সামান্থার মন্তব্যে নেটিজেনরা অবাক
বাংলাদেশকে ‘নিরাপদ’ ঘোষণা, কঠিন হতে পারে ইউরোপে আশ্রয়
আইপিএলে হঠাৎ ব্যাট মাপা শুরু হলো কেন?
অভিনয় নয়, শিল্পার কোটি কোটি টাকা আসে যে কাজ করে
ক্ষমতার অপব্যবহার করে জোরপূর্বক বোট ক্লাবের সভাপতি হন বেনজীর
শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরে বড় নিয়োগ, করুন আবেদন, পদ ১৮৭
বিশ্বকাপের টিকিট পেল পাকিস্তান
চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের মধ্যে ভারত যাচ্ছেন জেডি ভ্যান্স
মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিসহ অবৈধ ৫০৬ শ্রমিক আটক
কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকায় খোঁজ নিতে সহকর্মীরা গেলেন বাড়িতে, অতঃপর…
মৌসুম শেষ না হতেই পেঁয়াজসহ কয়েকটি পণ্যের দাম বাড়লো
জুমার দিন যে আমলে ৮০ বছরের গুনাহ মাফ হয়

সন্তানের সুঅভ্যাস কীভাবে গড়ে তুলবেন? রইল বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

অনলাইন ডেস্ক

শিশুর জীবনে স্বাস্থ্যকর রুটিন আর শৃঙ্খলার গুরুত্ব অপরিসীম। একেবারে ছোট থেকে কীভাবে সুঅভ্যাস গড়ে তুলবেন, জানালেন ডা: জোনাকি মুখোপাধ্যায় (ক্যাম্পাস এনরিচমেন্ট অ্যান্ড কমিউনিটি রিলেশন ডিরেক্টর, টেকনো ইন্ডিয়া)

কাদামাটি দিয়ে কিছু গড়েছেন কখনও? একতাল নরম মাটি, হাতের চাপে যাকে যেমন খুশি আকার দেওয়া যায়। শিশুরা আসলে একদম সেই কাদামাটির মতো। কোমল তো বটেই, সঙ্গে তাদের গড়েপিটে নেওয়া যায় যেমন খুশি। সঠিক যত্ন, দিশা আর কাঠামো পেলে তারাই বড় হয়ে উঠবে শক্তপোক্ত, আত্মবিশ্বাসী মানুষ হয়ে। তবে তার নেপথ্যে থাকে স্বাস্থ্যকর রুটিন আর শৃঙ্খলা, যার হাত ধরে শুধু বর্তমানটাই নয়, সুন্দর হয়ে উঠবে তাদের ভবিষ্যৎ জীবনও।

পথ দেখাক শৃঙ্খলা: কেউ কেউ ভাবেন শৃঙ্খলা মানেই কড়া শাসন। তা নয় কিন্তু। বরং কিছুটা নিয়মে বেঁধে, কিছুটা বুঝিয়ে ছোটদের শিখিয়ে দেওয়া আত্মনিয়ন্ত্রণ আর ভারসাম্যের গুরুত্ব। যখন তারা বুঝতে পারে প্রতিটি কাজের ফল আছে, তখনই তারা সচেতন ভাবে ভাল সিদ্ধান্ত নিতে শেখে। বলা যায়, শৃঙ্খলা এক রকমের কম্পাস, যা তাদের জীবনের সঠিক পথ দেখায় আর কোনটা গুরুত্বপূর্ণ, তা বুঝতে শেখায়।

শৃঙ্খলার একটা বড় অংশ হল রোজকার রুটিন। দিনটা যদি আগেভাগে গোছানো থাকে, তবে বিভিন্ন কাজে সময় ভাগ করা বা দায়িত্ববোধ দুটোই শিখে ফেলা যায়। প্রতিদিন ঠিক সময়ে খাওয়াঘুমোনো, পড়াশোনার জন্য একটা নির্দিষ্ট সময় রাখা, এবং খেলা আর বিশ্রাম দুয়ের জন্যই সময় বার করাএই নিয়মগুলো ছোটদের জীবনে স্থিরতা আর স্বস্তি নিয়ে আসে।

শৃঙ্খলা থাক খাবারে: সব মাবাবাই চান তাঁদের সন্তান বেড়ে উঠুক এক স্বাস্থ্যকর জীবনধারায়। তাদের শুধু যে ছোটদের রোগবালাই থেকে দূরে রাখা যাবে তা নয়, শরীরও থাকবে তরতাজা। সেই স্বাস্থ্যকর রুটিনের এক গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল পুষ্টিকর খাবারদাবার, যা স্রেফ শরীর নয়, মস্তিষ্ককেও খোরাক জোগায়। তাজা ফল, শাকসবজি, অন্যান্য পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার অভ্যাসও একটা শৃঙ্খলা, যা শরীরকে শক্তিশালী, সতেজ আর মস্তিষ্ককে তীক্ষ্ণ করে তোলে।

জাঙ্ক ফুড হয়তো খেতে মুখরোচক, কিন্তু তা উপভোগের আনন্দ ক্ষণিকের। বরং লাগাতার, বেশি মাত্রায় চিনি বা ভাজাভুজি খাওয়া রোগ ডেকে আনতে পারে, মনোযোগ কমায় এবং এনার্জি নষ্ট করে। তার বদলে শিশুদের স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে শেখানো মানে তাদের উপরে নিষেধের বেড়াজাল তৈরি করে দেওয়া নয়। বরং ওদের বোঝান, পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। ছোটরা যখন তারা বুঝতে পারে পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস তাদের স্কুলের পড়া, খেলাধুলাসহ সবেতেই সহায়ক হয়ে উঠছে, তখনই তারা সঠিক অভ্যাস গড়ে তোলে।

মনোযোগই চাবিকাঠি: যে কোনও কাজে মনোযোগ একাগ্রতা ব্যস্ত জীবনে নিঃশ্বাস নেওয়ার মতোই জরুরি। নিয়মিত রুটিন শিশুদের মনোযোগ ধরে রাখতে শেখায়। এই একাগ্রতাই কিন্তু ভবিষ্যতে তাদের সবচেয়ে বড় শক্তি হয়ে উঠতে পারে। নতুন বিষয় দ্রুত শিখতে বা পরীক্ষায় ভাল ফল করতে যেমন পড়াশোনায় মনোযোগের কোনও বিকল্প নেই। সম্পর্কের ক্ষেত্রেও মনোযোগ একে অন্যকে ভালভাবে শুনতে, বুঝতে আর সহানুভূতিশীল হতে শেখায়। ধৈর্য আর দৃঢ়তার হাত ধরে সমস্যার সমাধান করতে সাহায্য করে। একাগ্র মানসিকতা মানেই আত্মবিশ্বাসী মানসিকতা, যা জীবনের ছোটদের প্রতিটা সুযোগ আর চ্যালেঞ্জকে গ্রহণ করতে শেখায়।

অতিরিক্ত আদরেই কাঁটা: শিশুদের আদর করা স্বাভাবিক। তবে অতিরিক্ত আদর কিন্তু ভালর চেয়ে অনেক সময়ে তাদের ক্ষতিও করতে পারে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত আদর তাদের জীবনের বাস্তবতা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। বদলে এমন একটা ভ্রান্ত স্বস্তির ভাবনা তৈরি করে, যা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার ক্ষমতা নষ্ট করে দিতে পারে। ছোটখাটো সমস্যায় যারা বারবার সাহায্য পায়, তারা ভবিষ্যতে দৃঢ় হতে না পারার আশঙ্কাই বেশি।

আত্মবিশ্বাস তৈরি হয় স্বাধীনভাবে জীবন সামলানোর ক্ষমতা থেকে। যখন শিশুদের দায়িত্ব দেওয়া হয় আর তারা নিজেদের কাজের জন্য জবাবদিহি করতে শেখে, তখনই তারা নিজের ওপর ভরসা রাখতে শেখে। বাবামায়েরা ভালোবাসা দিয়ে পথ দেখাতে পারেন, কিন্তু ভুল করতে দেওয়া আর সেই ভুল থেকে শেখার সুযোগ দেওয়া তাদের ভবিষ্যতের জন্য খুবই জরুরি। যে শিশু কখনও ব্যর্থ হয়নি, সে জীবনের ছোটবড় ধাক্কাগুলো সামলাতে পারবে না।

রুটিনে বাঁধা শৃঙ্খলা: শৃঙ্খলা আর রুটিনের প্রভাব যে শুধু শৈশবেই থাকে, এমনটা নয়।  পুরো জীবন জুড়েই তার কার্যকলাপ। এই মূল্যবোধ নিয়ে বড় হলে সময় ঠিকমতো কাজে লাগিয়ে জীবনের ভারসাম্য বজায় রাখাটাও সহজ হয়ে যায়। মনোযোগ আর যে কোনও প্রতিকূলতায় দৃঢ় থাকতেও অসুবিধে হয়না। শুধু পড়াশোনা নয়,  শৃঙ্খলা আর স্বাস্থ্যকর রুটিন শিশুদের মানসিক আর সামাজিক ভাবে সফল হওয়ার পথ খুলে দেয়। তাদের এমনভাবেই তৈরি করা হয় যাতে দৃঢ়তা আর সাহসে ভর করে তারা জীবনে এগিয়ে যেতে পারে অনেকটাই।

বাঁধা থাক, বাধা নয়: শৃঙ্খলা আর স্বাস্থ্যকর রুটিন ছোটদের আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে ফেলে না মোটেই। বরং তাদের সম্ভাবনাকে চিনে নিয়ে আরও এগিয়ে দেয় সাফল্যের দিকে। মাবাবারা যদি পুষ্টিকর খাওয়াদাওয়া, একাগ্র মনোযোগ এবং আত্মনির্ভরতার গুরুত্ব বুঝিয়ে তাদের অভ্যস্ত করে তুলতে পারেন, তাতেই গড়ে উঠবে আগামীর আত্মবিশ্বাসী, সুদক্ষ এবং সফল প্রজন্ম।

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ