স্টুডিও জিবলি-স্টাইল অ্যানিমে ছবিতে নিজেকে রূপান্তর করতে গিয়ে হয়তো অনেকেই মজা পাচ্ছেন। আপনিও কি চ্যাটজিপিটি আর গ্রক থ্রি- দিয়ে এভাবে ছবি তৈরি করছেন। এই নতুন ট্রেন্ড সবাইকে মুগ্ধ করলেও, প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর পেছনে লুকিয়ে আছে নিরাপত্তা ঝুঁকি। মিন্টের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিষয়টি।
গত সপ্তাহে ওপেনএআই চ্যাটজিপিটি ফোর ও ইমেজ জেনারেশন মডেল চালু করে। এর স্টুডিও জিবলি-স্টাইলের ছবি মুহূর্তের মধ্যে ভাইরাল হয়ে যায়। গত ১ এপ্রিল স্যাম অল্টম্যান বলেন, মাত্র এক ঘণ্টায় ১০ লাখ নতুন ব্যবহারকারী যোগ হয়েছে। এই ট্রেন্ড ইন্টারনেটে ঝড় তুলেছে। সোশ্যাল মিডিয়া এখন জিবলি-স্টাইলের ছবিতে ভরে গেছে। কিন্তু এর পেছনে লুকিয়ে রয়েছে ভয়াবত নিরাপত্তা ঝুঁকি। বর্তমান সময়ে এই ঝুঁকি নিয়ে ভাবতে হবে।
ছবি আপলোড করা কি নিরাপদ: চ্যাটজিপিটিতে ছবি আপলোড করে জিবলি-স্টাইলের ছবি বানানো কি সত্যিই নিরাপদ, এই প্রশ্ন উঠছে।কপিরাইট নিয়ে মতভেদ থাকলেও, ডিজিটাল বিশেষজ্ঞরা গোপনীয়তা আর নিরাপত্তার ঝুঁকির কথা বলছেন। অনেকে চ্যাটজিপিটি আর গ্রক থ্রিতে নিজেদের ছবি আপলোড করে জিবলি-স্টাইলের অ্যানিমেট বানাচ্ছেন। কিন্তু প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলছেন, এই ছবি দিয়ে ওপেনএআই আর গ্রক তাদের এআই মডেলকে ট্রেনিং দিতে পারে। ব্যবহারকারীরা নিজে থেকে ছবি দিচ্ছেন বলে, ওয়েব থেকে ডেটা সংগ্রহের আইনি বাধা এড়িয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তিভিত্তিক প্রতিষ্ঠানগুলো। এছাড়াও হ্যাকাররা এই ছবি ব্যবহার করে আপনার ক্ষতিও করতে পারে।
অন্যদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিডিপিআর আইন অনুযায়ী, ওয়েব থেকে ছবি সংগ্রহ করতে হলে ‘বৈধ কারণ’ দেখাতে হয় এবং গোপনীয়তা নিশ্চিত করতে হয়। কিন্তু আপনি নিজে ছবি আপলোড করলে, ব্যবহারের শর্তে এই সুরক্ষা এড়ানো যায়। এক্স (সাবেক টুইটার)-এ ‘হিমাচল সাইবার ওয়ারিয়র্স’ নামের একটি সাইবার সিকিউরিটি অ্যাকাউন্ট সতর্ক করে বলেছে, জিবলি করার আগে ভাবুন। একটি সুন্দর সেলফি আপনার ভাবনার কারণ হতে পারে।
জালিয়াতি ও পরিচয়ের ঝুঁকি: এআই টেক প্রাইভেসির সহ-প্রতিষ্ঠাতা লুইজা জারভস্কি এক্স-এ সতর্ক করে বলেছেন, এই ইমেজ জেনারেটর ব্যক্তিগত ডেটা সংগ্রহের জন্য ব্যবহার হতে পারে। এটা পরিচয় নিশ্চিতকরণে সমস্যা তৈরি করতে পারে। তিনি বলেন, এই ছবি দিয়ে জাল নথি বানানো যায়। আমি চ্যাটজিপিটি দিয়ে একটা জাল রেস্তোরাঁর বিল বানিয়েছি। আরও প্রম্পট দিয়ে এটাকে আরও বাস্তবসম্মত সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, ওপেনএআই-এর মতো এআই ইমেজ জেনারেটর জাল প্রমাণ তৈরি করা সহজ, সস্তা আর সবার জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। খারাপ উদ্দেশ্য নিয়ে যে কেউ মিনিটের মধ্যে এটা বানাতে পারে।
নিজেকে সুরক্ষিত রাখার উপায়: প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা বলছেন অজানা প্ল্যাটফর্মে ছবি আপলোডের আগে দুবার ভাবুন। যদি আপনি সময়ের সঙ্গে জিবলি ট্রেন্ড ফলো করতে চান তাহলে এই কৌশলগুলো মানতে পারেন। এগুলো হলো:
**হাই-রেজোলিউশন ছবি দেবেন না, যা এআই ট্রেনিং-এ ব্যবহার হতে পারে।
**প্ল্যাটফর্মের গোপনীয়তা নীতি ভালোভাবে দেখুন।
**এমন প্ল্যাটফর্ম বেছে নিন যারা আপনার ডেটা সংরক্ষণ করে না।
**অ্যাপ ডাউনলোড করলে ক্যামেরা ও গ্যালারির অ্যাক্সেস বন্ধ করুন।
**রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখুন আপনার ছবি অপব্যবহার হচ্ছে কিনা।
**এই নতুন ট্রেন্ডে যোগ দেয়ার আগে গোপনীয়তার কথা মাথায় রাখুন। সতর্ক থাকলে মজাও করা যায়, ঝুঁকিও এড়ানো যায়।