কুমিল্লায় এ হালখাতা তৈরির দোকানের কর্মীরা এখন বেশ ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। পুরোনোকে ঝেড়ে ফেলে নতুন বছরে নতুন হিসাব লিপিবদ্ধে প্রয়োজন হয় লাল মলাটের হালখাতা। জাবেদা, খতিয়ান, টালিখাতা, বনবুকসহ নানা ধরনের খাতা তৈরিতে তাদের নিঃশ্বাস ফেলার যেন সময় নাই। হিসাব রাখার আধুনিক মাধ্যম এলেও এবারের নববর্ষকে ঘিরে কয়েক লাখ হালখাতার বাজার রয়েছে কুমিল্লায়।
সরেজমিন দেখা যায়, বাইন্ডিং প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মীরা কেউ কাগজ কাটছেন, কেউ সেলাইতে ব্যস্ত, কেউ আবার আঠা দিয়ে হালখাতায় লাল মলাটের কাপড় লাগাচ্ছেন। কুমিল্লার রাজগঞ্জের আনোয়ার অ্যান্ড সন্সের মালিক মো. সাজিদুল আরিফসহ বাইন্ডিং প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়ীরা বলছেন, চৈত্রের শুরু থেকেই হালখাতা তৈরি করতে দিনরাত ব্যস্ত সময় পার করছেন। তাদের তৈরি এসব হালখাতা বিভিন্ন আড়ত, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান ছাড়াও যাবে আশপাশের জেলা চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নোয়াখালীতেও।
এদিকে হালখাতা উদযাপন ব্যবসায়ীদের একটি পুরোনো রীতি। ১ বৈশাখে নানা আনুষ্ঠানিকতার মধ্যদিয়ে হালখাতা লিপিবদ্ধের সূচনা হয়। পুরোনো বছরের দেনাপাওনা মিটিয়ে হিসাবের নতুন খাতা খোলাই হালখাতার উদ্দেশ্য। এ কারণে কুমিল্লা নগরীর চকবাজার, রাজগঞ্জ, রাণীর বাজার ও নিমসার থেকে শুরু করে জেলার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজন পড়ে লালশালুতে বাঁধা হালখাতার। তবে আগের মতো নতুন হিসাব লিপিবদ্ধে আচার-অনুষ্ঠান বা ধর্মীয় রীতিনীতিতে জৌলুশ কমলেও হালখাতার প্রচলনটা ধরে রেখেছেন এখানকার ব্যবসায়ীরা।
নববর্ষে পুরাতনকে বিদায় এবং নতুন হিসাব লিপিবদ্ধে হালখাতা ব্যবহারের বিষয়ে কুমিল্লার চকবাজারের শাহ পরান ট্রেডার্সের উজ্জ্বল সাহা এবং বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলেন, যুগের পালাবদলে জৌলুশ হারিয়েছে হালখাতার আয়োজন। এখন শুধু নতুন খাতায় নতুন হিসাব লিপিবদ্ধের মধ্যেই বাঙালির ঐতিহ্য টিকে আছে। তবে এটিও গুরুত্ব হারিয়েছে কিছু কিছু ব্যবসায়ীর কাছে। আগে বৈশাখের প্রথমদিন ঢাকঢোল পিটিয়ে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানকে নানাভাবে সাজিয়ে নিজ নিজ ধর্মের রীতিনীতি আনুযায়ী বেচাবিক্রি শুরু করতেন। ক্রেতাদের আপ্যায়ন করা হতো মিষ্টান্ন দিয়ে। ক্রেতাদের দাওয়াতও করা হতো আমন্ত্রণপত্রের মাধ্যমে।
অন্যদিকে এবার হালখাতার সঙ্গে আমন্ত্রণপত্র তৈরিতেও প্রিন্টিং দোকানে ব্যস্ততা দেখা গেছে। ব্যবসায়ী মহলে বকেয়ার লেনদেন চলে সারা বছরই। তবে বৈশাখে হালখাতার আনুষ্ঠানিকতা কেবল বকেয়া আদায় উদ্দেশ্য থাকে না। মহাজনের সঙ্গে দেনাদার, বিক্রেতার সঙ্গে ক্রেতার দেখা-সাক্ষাৎ হয় এ আমন্ত্রণপত্রে।
কুমিল্লার চান্দিনা প্লাজার ডিজাইন অ্যান্ড প্রিন্টের ব্যবসায়ী তাজুল ইসলাম বলেন, যুগের সঙ্গে হালখাতার আমন্ত্রণপত্রের প্রচলন কমে গেলেও এখনো গ্রামগঞ্জের ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে আমন্ত্রণপত্র তৈরির কাজ পাচ্ছেন। নগরায়নের এই যুগে হালখাতার ঐতিহ্যকে এখনো অনেকে অতিযত্নে ধরে রেখেছেন।