মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের বাজেট প্রায় ৫০ শতাংশ কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে হোয়াইট হাউসের অফিস অব ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড বাজেট (ওএমবি)। প্রস্তাব অনুযায়ী, বেশ কিছু বিদেশি কূটনৈতিক মিশন বন্ধ করা হবে, কূটনীতিকদের সংখ্যা কমানো হবে, জাতিসংঘ ও এর বিভিন্ন সংস্থা এবং ন্যাটো সদরদপ্তরের মতো প্রায় সব আন্তর্জাতিক সংস্থার জন্য অর্থায়ন বাতিল করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে থাকা এই প্রস্তাবটি গত সপ্তাহে পররাষ্ট্র দপ্তরে উপস্থাপন করা হয়। তবে এটি পররাষ্ট্র দপ্তরের শীর্ষ নেতৃত্ব কিংবা কংগ্রেসের অনুমোদন পাবে বলে মনে হচ্ছে না। আগামী কয়েক মাসের মধ্যে পুরো ফেডারেল বাজেট নিয়ে কংগ্রেসে ভোট হবে, সেখানে এই প্রস্তাবটিও তোলা হবে।
প্রস্তাবের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এটি কয়েক ধাপে পর্যালোচনার পরে আইনপ্রণেতাদের হাতে যাবে। অতীতে কংগ্রেস হোয়াইট হাউসের বাজেট প্রস্তাবে সংশোধনী এনেছে; এমনকি অনেক সময় তা পুরোপুরি বাতিলও করেছে।
যদিও এটি এখনো প্রাথমিক পর্যায়ের খসড়া, তবু এটি ট্রাম্প প্রশাসনের অগ্রাধিকারের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই প্রস্তাব ফেডারেল সরকারের বিভিন্ন সংস্থার—যেমন হেলথ অ্যান্ড হিউম্যান সার্ভিসেস, এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট ও ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট—জনবল ও অর্থায়নে বড় ধরনের কাটছাঁটের প্রেক্ষাপটে এসেছে।
প্রস্তাবটি নিয়ে একটি অভ্যন্তরীণ বৈঠকের কিছু খসড়া গত সপ্তাহের শেষের দিকে বিদেশে নিযুক্ত মার্কিন কূটনীতিকদের অনলাইন চ্যাট গ্রুপে ছড়িয়ে পড়ে।
তবে গত সোমবার (১৪ এপ্রিল) বিষয়টি ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়, কারণ ওই দিন ওএমবি-তে পররাষ্ট্র বিভাগের একটি আলাদা পুনর্গঠন পরিকল্পনা উপস্থাপন করার কথা ছিল।
এই প্রস্তাব সম্পর্কে অবগত এক শীর্ষ মার্কিন কর্মকর্তা এটিকে খরচ কমানোর ক্ষেত্রে ‘আক্রমণাত্মক’ বলে অভিহিত করেছেন। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, এটি একটি প্রাথমিক খসড়া মাত্র। এটি অনেকটা সেই পরিকল্পনারই প্রতিচ্ছবি, যেটা প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে একই দায়িত্বে থাকাকালে ওএমবি প্রধান রাসেল ভট বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছিলেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রশাসনের অভ্যন্তরীণ আলোচনা সম্পর্কে তিনি এ তথ্য জানান।
বিষয়টির সঙ্গে সম্পৃক্ত আরও দুজন কর্মকর্তা প্রস্তাবটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তাদের একজন বলেন, এটি মূলত ওএমবি থেকেই এসেছে।
ওএমবি’র মুখপাত্র আলেক্সান্দ্রা ম্যাকক্যান্ডলেস বলেন, ‘এখনো কোনো চূড়ান্ত অর্থায়নের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’ জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ এই প্রস্তাবিত বাজেট কর্তন নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ওএমবি পররাষ্ট্র দপ্তরের বাজেট ব্যাপকভাবে হ্রাস করার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু ক্যাপিটাল হিলে কংগ্রেসের তীব্র বাধার মুখে তা ব্যর্থ হয়।
তবে ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদে প্রশাসন অনেক দ্রুত গতিতে ফেডারেল সরকারের আকার কমিয়ে আনতে শুরু করেছে। বিভিন্ন সংস্থায় চাকরি এবং অর্থায়ন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ইউএসএআইডি বাতিল করা হয়েছে এবং ভয়েস অব আমেরিকা, রেডিও ফ্রি ইউরোপ, মিডল ইস্ট ব্রডকাস্টিং নেটওয়ার্কস, রেডিও ফ্রি এশিয়া এবং কিউবার উদ্দেশ্যে সম্প্রচার করা রেডিও বা টিভি মার্টির মতো তথাকথিত ‘সফট পাওয়ার’ প্রতিষ্ঠানগুলোর তহবিল বন্ধের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
ফলে পররাষ্ট্র দপ্তরের কর্মকর্তাসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে এবার প্রস্তাবিত বাজেট কর্তন সত্যিই বাস্তবায়িত হতে পারে।
নিউ হ্যাম্পশায়ারের সিনেটর এবং সিনেট ফরেন রিলেশনস কমিটির শীর্ষ ডেমোক্র্যাট জিন শাহিন জানান, এই বাজেট প্রস্তাব নিয়ে তিনি ‘গভীরভাবে উদ্বিগ্ন’। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ কর্মসুচি যখন ‘আমেরিকা একা’ হয়ে যায়, তখন আমাদের অর্থনীতি, নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
পররাষ্ট্র দপ্তরের একটি অভ্যন্তরীণ বৈঠকের নথি অনুযায়ী বাজেট প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বৈদেশিক সহায়তার জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ—যা ২০২৪ সালে ছিল ৫২ বিলিয়ন ডলার—তার অর্ধেক কমিয়ে দেওয়া হবে। পররাষ্ট্র দপ্তর এবং ইউএসএআইডির মাধ্যমে বিদেশি সহায়তার এক-চতুর্থাংশেরও বেশি বাতিল করা হবে, ২০২৫ সাল পর্যন্ত কর্মীদের বেতন স্থগিত রাখা হবে, ভ্রমণ খরচ এবং বিদেশে কর্মরত মার্কিন স্টাফদের সুযোগ-সুবিধা কমানো হবে।
এই প্রস্তাবে আরও বলা হয়েছে, এইচআইভি, যক্ষ্মা এবং ম্যালেরিয়া বাদে অন্যান্য সব ধরনের বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সহায়তা বাতিল করে দেওয়া হবে এবং স্বাস্থ্য সহায়তা সংস্থাগুলোকেই বেশিরভাগ অর্থের দায়িত্ব নিতে হবে। জাতিসংঘসহ অন্যান্য বড় আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থাগুলোর জন্য বরাদ্দকৃত অর্থও বাতিল করা হবে, যেগুলো বিশ্বজুড়ে মানবিক কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং এতে ন্যাটোও অন্তর্ভুক্ত।
তালেবান শাসন থেকে পালাতে চাওয়া আফগান মিত্রদের অন্য দেশে পুনর্বাসনে সহায়তাকারী সংস্থার মূল কার্যালয়টি বাতিল করা হবে। শরণার্থী ও অভিবাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন কর্মসূচিও বাদ দেওয়া হবে এবং এগুলোকে একটি নতুন আন্তর্জাতিক মানবিক সহায়তা বিষয়ক ব্যুরোর আওতায় আনা হবে।
সূত্র: এপি