রোজ দুধ খাওয়া দারুণ অভ্যাস। দুধ পুষ্টিকর খাবার। দুধ দিয়ে মিষ্টান্ন ও মুখরোচক নানা কিছুই তৈরি করা হয়। তাতে রসনার তৃপ্তিও মেটে। তবে এমন অনেক মানুষই আছেন, দুধ কিংবা দুধের তৈরি খাবার খেলে যাঁদের কিছু সমস্যা হয়
সবার ক্ষেত্রে কিন্তু সমস্যার কারণ এক নয়। আর তাই সমস্যা দেখা দিলে যে প্রত্যেকেরই দুধ খাওয়া বাদ দিয়ে দিতে হবে, ব্যাপারটা তা–ও নয়। দুধের আমিষ, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান দেহের জন্য খুবই প্রয়োজনীয়। তাই পরিমাণে অল্প হলেও দুধ খাওয়া ভালো, যদি তাতে মারাত্মক কোনো সমস্যার ঝুঁকি না থাকে। এ বিষয়গুলো সহজভাবে ব্যাখ্যা করলেন ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মো. মতলেবুর রহমান।
কারণগুলো জানা থাক
গবাদিপশুর দুধে ল্যাকটোজ নামের একটি উপাদান থাকে। ল্যাকটোজ হজম করার জন্য প্রয়োজনীয় এনজাইমের অভাব থাকলে দুধ খেলে সমস্যা হতে পারে। একে বলা হয়, ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স। তবে কারও কারও আবার দুধে অ্যালার্জি থাকে। এটি একেবারেই ভিন্ন একটি সমস্যা। অ্যালার্জি মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে, এমনকি এর কারণে কারও কারও মৃত্যুও হয়। তা ছাড়া ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম (আইবিএস) কিংবা পিত্তথলির সমস্যার কারণেও দুধ খেলে সমস্যায় পড়েন অনেকে।
যেভাবে বুঝবেন
ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স, দুধে অ্যালার্জি, আইবিএস কিংবা পিত্তথলির সমস্যার যেকোনোটি থাকলেই দুধ কিংবা দুধের তৈরি খাবার খাওয়ার পর বদহজম, পেট ফাঁপা, বমি বা পাতলা পায়খানার মতো সমস্যা হতে পারে।
এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হলো দুধে অ্যালার্জি। দুধে যাঁদের অ্যালার্জি থাকে, তাঁরা দুধ বা দুধের তৈরি খাবার খেলে এসব সমস্যা ছাড়া ঠোঁট–মুখ ফুলে যেতে পারে, ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে, গলা–বুক চেপে আসার মতো অনুভূতি হতে পারে, ঢোঁক গিলতে কষ্ট হতে পারে, শ্বাসকষ্ট হতে পারে। দুধ খাওয়ার মিনিটখানেকের মধ্যেই এসব সমস্যার কোনোটি শুরু হয়ে যেতে পারে, আবার বেশ কয়েক ঘণ্টা পরেও কোনো সমস্যা দেখা দিতে পারে। দুধে অ্যালার্জি থাকলে সাধারণত শৈশবেই তা ধরা পড়ে। দুধে যাঁদের অ্যালার্জি থাকে, তাঁদের অন্যান্য কিছু বস্তুর প্রতিও অ্যালার্জি থাকতে পারে।
আইবিএস আক্রান্ত ব্যক্তির নির্দিষ্ট কিছু খাবার খাওয়ার পরপরই পেট কামড়ানো ও পাতলা পায়খানা হতে পারে। মানসিক চাপে পড়লেও এমন সমস্যা হতে পারে তাঁদের।
পিত্তথলিতে পাথর বা পিত্তথলির অন্য কোনো সমস্যা থাকলে দুধ কিংবা কোনো তেল ও চর্বিজাতীয় খাবার খাওয়ার পর পেটে অস্বস্তি, ব্যথা ও বমি হতে পারে। ডান কাঁধের পেছনেও ব্যথা হতে পারে।
দুধে সমস্যা হলে কী করবেন
যেকোনো বয়সেই দুধ খাওয়ার পর কোনো সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। তিনি সমস্যার কারণ বের করে সেই অনুযায়ী আপনার করণীয় ঠিক করে দেবেন। কাউকে কাউকে অল্প পরিমাণে দুধ খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, কাউকে আবার নিষেধ করা হয়। তাই খুঁজে নিতে হয় দুধের পুষ্টিকর বিকল্প। পিত্তথলির সমস্যা সমাধান হয়ে গেলে রোগী আবার স্বাভাবিকভাবে দুধ খেতে পারেন। ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স একসময় এমনিতেই সেরে যেতে পারে।
অ্যালার্জিতে বাড়তি সতর্কতা
দুধে অ্যালার্জি থাকলে দুধ ও দুধের তৈরি খাবার খাওয়া উচিত নয়। এমনকি দুধ দেওয়া বিরিয়ানি বা দুধ দিয়ে তৈরি সস (হোয়াইট সস) খাওয়াও ঠিক নয়। শিশুর যদি দুধে অ্যালার্জি থাকে, তাহলে তাকে অবশ্যই পনির, দুধের তৈরি চকলেট ও দুধের তৈরি অন্যান্য মুখরোচক খাবারের বিষয়ে সতর্ক করে দিন। পিৎজা ও পাস্তার মতো খাবার শিশুরা বেশ পছন্দ করে, যাতে পনির দেওয়া থাকে। এ ব্যাপারেও তাকে জানিয়ে রাখুন। গবাদিপশুর দুধ যদি ল্যাকটোজবিহীন করে ফেলা হয়, তা ল্যাকটোজ ইনটলারেন্সে আক্রান্ত ব্যক্তির জন্য ভালো। কিন্তু দুধে অ্যালার্জি থাকা মানুষের জন্য এই দুধ কোনো উপকারে আসবে না; বরং এই দুধ খেলেও অ্যালার্জির ঝুঁকি রয়েই যাবে। শৈশবে দুধে অ্যালার্জি থাকলে অবশ্য পরবর্তী জীবনে তা সেরে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ না নিয়ে আবার দুধ খাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়।
সূত্র: প্রথম আলো