কোরিয়ান আর জাপানি নারীদের বিউটি সিক্রেট নিয়ে তো আমাদের আগ্রহের শেষ নেই। স্কিনকেয়ার রুটিন, লেয়ারিং টেকনিক, নানান সিরাম—এসব নিয়ে এখন মোটামুটি সবাই জানি। কিন্তু কখনো কি চোখে লেগেছে মরোক্কান নারীদের রূপ? তাঁদের ত্বক আর চুলের দিকে তাকালে যেন নজর ফেরানো কঠিন। তাঁদের এই রূপ-লাবণ্যের রহস্য কী!
মরোক্কান নারীরা আসলে সৌন্দর্য চর্চায় প্রাকৃতিক এবং তাঁদের নিজেদের ঐতিহ্যবাহী উপাদানগুলোই সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেন। শত শত বছর ধরে তাঁদের রূপচর্চার এই ধরন শুধু যত্ন কিংবা রূপচর্চা নয়, বরং যেন তাঁদের সংস্কৃতির একটি অংশ হয়েই দাঁড়িয়েছে। প্রকৃতিতেই লুকিয়ে আছে মরোক্কান নারীদের সৌন্দর্যের রহস্য। চলুন জেনে নেওয়া যাক, নিজেদের সৌন্দর্য ধরে রাখতে কী ব্যবহার করেন মরোক্কান নারীরা।
আরগান ওয়েল
‘লিকুইড গোল্ড’ নামে পরিচিত আর্গান ওয়েল মূলত মরক্কোর স্থানীয় আরগান গাছের বাদাম থেকে তৈরি হয়। এই তেলটি প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন ই, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিডে সমৃদ্ধ। প্রতিদিনের স্কিনকেয়ার রুটিনে এটি ব্যবহার করলে ত্বকের আর্দ্রতা ধরে রাখা সহজ হয়। সেই সঙ্গে বলিরেখা ও সূক্ষ্ম দাগ হ্রাস করতেও সাহায্য করে এই আরগান ওয়েল। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক নরম, মসৃণ ও উজ্জ্বল দেখায়। শুধু ত্বক নয়, আরগান ওয়েল কিন্তু চুলের যত্নেও অনন্য। এটি চুলের গোড়া মজবুত করতে সাহায্য করে, চুলে প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ফিরিয়ে আনে এবং চুলের আগা ফাটা রোধ করে। মরোক্কান নারীরা সপ্তাহে কয়েকবার এই তেলটি হালকা গরম করে ব্যবহার করেন এবং ঘুমানোর আগে তাঁরা ত্বকে ব্যবহার করেন এই আরগান ওয়েল। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া কোষগুলো সারারাত জুড়ে পুনরুদ্ধার হওয়ার সুযোগ পায়।
রাসুল ক্লে
মরক্কোর অ্যাটলাস পর্বতমালার গহিন থেকে সংগৃহীত এই মিনারেল ক্লে আদিকাল থেকেই ব্যবহৃত হচ্ছে একটি শক্তিশালী ক্লিনজার হিসেবে। রাসুল ক্লেতে থাকা প্রাকৃতিক খনিজ যেমন ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম ও পটাশিয়াম ত্বকের গভীর থেকে ময়লা ও তেল শোষণ করে নেয়। গোলাপ জল কিংবা পানিতে মিশিয়ে এটি মাস্ক হিসেবে মুখে ব্যবহার করলে ত্বক হয় গভীরভাবে পরিষ্কার ও সতেজ। শুধু তাই নয়, রাসুল ক্লে হেয়ার মাস্ক হিসেবেও চমৎকার কাজ করে। এটি মাথার ত্বকে জমে থাকা অতিরিক্ত তেল ও খুশকি দূর করে, চুলকে করে তোলে ঝলমলে ও সুন্দর।
মরোক্কান ব্ল্যাক সোপ
অলিভ ও অলিভ ওয়েল দিয়ে তৈরি এই গাঢ়, ঘন জেলজাতীয় সাবান মরোক্কান স্পা কালচার বা হাম্মামের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই ব্ল্যাক সোপ ত্বকে লাগিয়ে কিছুক্ষণ রেখে, ‘কেসা’ নামে পরিচিত একটি বিশেষ ধরনের স্ক্রাবিং গ্লাভ ব্যবহার করে ঘষা হয়। এতে সহজেই ত্বকের মৃত কোষ দূর হয়ে যায় এবং ত্বক নরম, মসৃণ ও দীপ্তিময় হয়ে ওঠে। এটি স্কিন এক্সফলিয়েশনের একটি প্রাকৃতিক ও নিরাপদ উপায়, যা নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকে জমে থাকা ধুলোবালি ও অযাচিত ব্রণজনিত সমস্যা কমে আসে।
গোলাপ জল
মরোক্কানদের রূপ-রুটিনের আরেকটি অন্যতম অনুষঙ্গ হলো গোলাপ জল। বিশুদ্ধ গোলাপের পাপড়ি থেকে নিষ্কাশিত এই জল মরোক্কান নারীদের রূপচর্চায় বহু যুগ ধরেই ব্যবহার হয়ে আসছে। এটি একটি প্রাকৃতিক টোনার হিসেবে কাজ করে, যা ত্বক পরিষ্কারের পর ব্যবহার করলে স্কিন পিএইচ ভারসাম্য বজায় রাখে এবং ত্বককে করে লাবণ্যময়ী ও সতেজ। মরোক্কান নারীরা রাসুল ক্লে মাস্ক তৈরির সময় এতে গোলাপ জল মিশিয়ে ব্যবহার করেন, যা মাস্কের কার্যকারিতা বাড়িয়ে তোলে। অনেকে আবার এটি মেকআপ সেটিং স্প্রের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করেন।
আকার ফ্যাসি
পপি ফুল ও ডালিমের খোসা শুকিয়ে তৈরি করা আকার ফ্যাসি মরোক্কান নারীদের একটি ঐতিহ্যবাহী রূপচর্চার উপাদান। এটি ছোট মাটির পাত্রে সংরক্ষণ করা হয়। ব্যবহার করার সময় আঙুল বা ব্রাশ ভিজিয়ে গুঁড়ায় ডুবিয়ে ঠোঁট বা গালে লাগানো হয়। যা প্রাকৃতিকভাবেই গাল ও ঠোঁটে এনে দেয় একটি রক্তিম আভা, যা লিপস্টিক বা ব্লাশের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ ও দীর্ঘস্থায়ী। কেমিক্যালমুক্ত হওয়ায় এটি সেনসিটিভ ত্বকের জন্যও নিরাপদ। বর্তমানে এই ঐতিহ্যবাহী ফর্মুলাটিই আধুনিক বিউটি প্রোডাক্টের ট্রেন্ডি বিকল্প হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।
ছবি: ইনস্টাগ্রাম ও উইকিপিডিয়া