পূর্বসূরি পোপ বেনেডিক্টের পছন্দ ছিল ক্লাসিক্যাল সংগীত। তবে পোপ ফ্রান্সিস ছিলেন একজন আর্জেন্টাইন, আর তাই তার প্রথম ভালোবাসাও ছিল ফুটবলই। তার মতে, ‘এটাই সবচেয়ে সুন্দর খেলা’। এই খেলাকে তিনি শুধু বিনোদনের মাধ্যম নয়, বরং শিক্ষা ও শান্তির বার্তা ছড়ানোর পথ হিসেবেও দেখেছেন।
আর্জেন্টিনার সন্তান ফ্রান্সিস ভ্যাটিকানে বিশ্বের বড় বড় ফুটবল তারকাদের স্বাগত জানিয়েছেন। লিওনেল মেসি, প্রয়াত দিয়েগো মারাদোনা থেকে শুরু করে জ্লাতান ইব্রাহিমোভিচ ও বুফনের মতো তারকারাও ছিলেন সেই তালিকায়। বহু বল ও জার্সিতে স্বাক্ষর করেছেন তিনি।
ছোটবেলায় বুয়েনোস আইরেসের রাস্তায় খেলতেন কাপড়ের তৈরি বল দিয়ে। তিনি বলেছিলেন, ‘আমি সেরা খেলোয়াড় ছিলাম না, আমার দুটো পা-ই বাঁকা ছিল’। কিন্তু গোলকিপার হিসেবে খেলতেন বেশি। তার ভাষায়, ‘এতে শিখেছি, বিপদ যে কোনো দিক থেকে আসতে পারে, সেটার জন্য প্রস্তুত থাকতে হয়’।
তার পছন্দের ক্লাব ছিল সান লরেঞ্জো, যেখানে বাবার সঙ্গে গিয়ে খেলা দেখতেন। তিনি বলেন, ‘ওটা ছিল রোমান্টিক ফুটবল’। পোপ হওয়ার পরও তিনি ক্লাবটির সদস্য ছিলেন। তবে ভ্যাটিকানের একটি শিক্ষামূলক চুক্তির অংশ হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বী বোকা জুনিয়রসের পক্ষ থেকে সদস্যপত্র পাওয়ায় তখন কিছুটা বিতর্কও সৃষ্টি হয়।
ফ্রান্সিস ক্লাবটির খেলার খবর রাখতেন একজন সুইস গার্ডের মাধ্যমে। তিনি প্রতি সপ্তাহে ফলাফল ও লিগ টেবিল রেখে যেতেন পোপের ডেস্কে।
পোপ ফুটবলকে কেবল খেলা হিসেবে দেখেননি। তিনি বিশ্বাস করতেন, ফুটবল শিক্ষার এবং শান্তির বার্তা দেওয়ার একটি মাধ্যম হতে পারে, যদিও এর পেছনে থাকা ব্যবসা ও দুর্নীতির দিকগুলোও তার অজানা ছিল না।
২০১৪ সালে তার উদ্যোগেই রোমে অলিম্পিক স্টেডিয়ামে ‘শান্তির জন্য আন্তঃধর্মীয় ম্যাচ’ অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ২০১৯ সালে তিনি বলেছিলেন, ‘অনেকে বলে, ফুটবল পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর খেলা। আমিও তাই মনে করি’। ২০১৩ সালে ইতালি ও আর্জেন্টিনার জাতীয় দলকে তিনি মনে করিয়ে দেন তাদের সামাজিক দায়িত্বের কথা। বলেছিলেন, ‘ব্যবসার মোহে না হারিয়ে খেলাটাকে সম্মান করতে হবে’। তার ভাষায়, ‘ধর্ম বা ফুটবল — উভয়েরই উদ্দেশ্য নিজের চেয়ে বড় কিছুর জন্য কাজ করা’।
নেটফ্লিক্সের জনপ্রিয় সিনেমা ‘দ্য টু পোপস’-এ একটা দৃশ্যে দেখা যায় পোপ বেনেডিক্ট ও তৎকালীন কার্ডিনাল বেরগোলিও ২০১৪ সালের বিশ্বকাপ ফাইনাল দেখছেন। যদিও বাস্তবে ফ্রান্সিস ১৯৯০ সালেই টিভি দেখা ছেড়ে দিয়েছিলেন।
১৯৭৮ সালে আর্জেন্টিনায় বিশ্বকাপ হলেও সে বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। কারণ তখন দেশটি ছিল স্বৈরশাসনের অধীনে, আর তিনি তখন ছিলেন যাজক সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে।
তবে ২০২৪ সালে প্রকাশিত আত্মজীবনীতে দিয়েগো মারাদোনাকে নিয়ে একটি পুরো অধ্যায় লিখেছেন। সেখানে লিখেছেন, ‘কয়েক বছর আগে ভ্যাটিকানে মারাদোনা এসেছিল। আমি তখন মজা করে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘তা, কোন হাতটা দোষী?’
তিনি মারাদোনাকে প্রশংসা করলেও বলেন, ‘খেলোয়াড় হিসেবে দারুণ, কিন্তু মানুষ হিসেবে ব্যর্থ’। অন্যদিকে মেসিকে ‘একজন ভদ্রলোক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তবে কারও পক্ষ নেননি। তার মতে, পেলে ছিলেন ‘একজন বড় হৃদয়ের মানুষ’। তাই তিনি খেলোয়াড় হিসেবে পেলের নামই প্রাধান্য দেন।
২০২২ সালে ফ্রান্স-আর্জেন্টিনার ফাইনালের আগে তিনি বলেছিলেন, ‘যেই জিতুক, যেন বিনয়ের সঙ্গে উদযাপন করে’। পোপ ফ্রান্সিসের কাছে ফুটবল ছিল জীবনের প্রতিচ্ছবি — যেখানে একতা, দায়িত্ব এবং শান্তির বার্তা একই সঙ্গে ধরা দেয়।
সূত্র: যুগান্তর