বিশ্বব্যাপী আজ (২৪ এপ্রিল) পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব হরমোন দিবস’। এবার দিবসটির প্রতিপাদ্য, ‘হরমোন যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ, এ নিয়ে সচেতন হোন।’ অনেকেই জানেন না হরমোন কী এবং হরমোনজনিত রোগ বলতে কী বোঝায়। একটা সময় শুধু ইউরোপেই এ দিবস পালিত হতো। কিন্তু দুই বছর ধরে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও দিনটি বিশ্ব হরমোন দিবস হিসেবে পালিত হচ্ছে।
আমাদের শরীরের বিভিন্ন অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি থেকে অনেক রাসায়নিক তৈরি হয়, যা রক্তের মাধ্যমে দেহের বিভিন্ন অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। গুরুত্বপূর্ণ হরমোনগুলো হলো ইনসুলিন, থাইরয়েড হরমোন কর্টিসোল, সেক্স হরমোন ইত্যাদি। এসব হরমোনের ভারসাম্যহীনতায় দেখা দেয় নানা রোগবালাই।
হরমোন ভারসাম্যের ব্যাঘাত ঘটলে ডায়াবেটিস, থাইরয়েড সমস্যা, বন্ধ্যত্ব, স্থূলতাসহ নানা জটিল রোগ দেখা দিতে পারে। জিনগত ও অটোইমিউন সমস্যার পাশাপাশি হরমোনজনিত সমস্যার পেছনে একটা বড় কারণ হলো আমাদের জীবনাচরণ ও খাদ্যাভ্যাস। তাই আমাদের সুষ্ঠু জীবনাচরণ পদ্ধতি মেনে চলা উচিত।
হরমোনের গুরুত্ব ও কাজ
হরমোন দেহের বহু গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম পরিচালনায় ভূমিকা রাখে, যার মধ্যে রয়েছে:
- শারীরিক বৃদ্ধি ও বিকাশ।
- বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা।
- প্রজননক্ষমতা ও যৌনস্বাস্থ্য।
- মানসিক স্থিতি ও জ্ঞানীয় ক্ষমতা।
- ওজনের ভারসাম্য।
করণীয়
- সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা উচিত। খাদ্যের ছয়টি উপাদানই সঠিক পরিমাণে গ্রহণ করতে হবে। হরমোনের কার্যক্রমে দরকার কিছু খনিজ ও ভিটামিন, যেমন ভিটামিন ডি, আয়োডিন, ক্যালসিয়াম।
- নিয়মিত কায়িক শ্রম ও ব্যায়াম হরমোনের ভারসাম্য রক্ষায় সহায়ক। এটি বিপাক ও ওজন ভারসাম্যও রক্ষা করে, যা হরমোনজনিত রোগকে দূরে রাখে।
- হরমোন নিঃসরণের স্বাভাবিকতা বজায় রাখতে ঘুম অত্যন্ত জরুরি। প্রতিদিন ৭ ঘণ্টা (৬-৮ ঘণ্টা) ঘুমানো প্রয়োজন। এমনকি মেলাটোনিন হরমোন আমাদের নিদ্রার ছন্দ নিয়ন্ত্রণ করে। এই ছন্দের ব্যত্যয় করা ঠিক নয়।
- ক্ষতিকর রাসায়নিক থেকে দূরে থাকা উচিত। কারণ, এগুলো গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থির জন্য ক্ষতিকর। যেমন প্লাস্টিক, পেস্টিসাইড ও প্রসেসড কেমিক্যালস।
- বৈজ্ঞানিক চিকিৎসার সাহায্য নেওয়া উচিত। হরমোনজনিত অনেক সমস্যার জন্য মানুষ অপচিকিৎসার শিকার হন। যেমন স্থুলতা, যৌন সমস্যা, বন্ধ্যত্ব, শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশের সমস্যা, এমনকি ডায়াবেটিসের জন্যও। এতে জটিলতা আরও বাড়ে।
ডা. শাহজাদা সেলিম, সহযোগী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ, বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়
সূত্র: প্রথম আলো