লিওনেল মেসি কি ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলবেন?
অনেক দিন ধরেই প্রশ্নটি উঠছে। স্বয়ং মেসিই এ প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন একাধিকবার। তাঁর সব কথার ভেতরে প্রচ্ছন্ন একটি বার্তাই বারবার ফুটে উঠেছে। আগামী বিশ্বকাপে খেলার বিষয়ে মেসি আগেভাগে কোনো প্রতিশ্রুতি দিতে চান না। নিজের ফিটনেসে খেয়াল রেখে প্রতিটি দিন ধরে ধরে এগোতে চান। অর্থাৎ বিশ্বকাপ দরজায় কড়া নাড়া পর্যন্ত মেসি সবদিক থেকে ফিট থাকলে হয়তো খেলবেন। যদিও তাঁর আশপাশের মানুষ বেশ আগে থেকেই আশায় তা দিচ্ছেন। আর্জেন্টিনা কোচ লিওনেল স্কালোনি থেকে জাতীয় দলের মেসির বেশ কয়েকজন সতীর্থই তাঁকে ২০২৬ বিশ্বকাপে দেখছেন।
যেমন দেখছেন আর্জেন্টিনা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের (এএফএ) সভাপতি ক্লদিও তাপিয়াও। টিওয়াইসি স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাপিয়া বলেছেন, ‘আশা করি, সে বিশ্বকাপে খেলবে। আমরা সবাই এটা চাই। সে এটার যোগ্য। ব্যাপারটা তার ওপর নির্ভর করছে, তার ইচ্ছা ও সে কেমন করছে, তার ওপর।’
অবশ্যই এই সিদ্ধান্ত মেসির। কিন্তু সেটি তিনি জানানোর আগেই চারপাশ থেকে তাঁর খেলার বিষয়ে প্রত্যাশার বেলুনও ফোলানো হচ্ছে প্রচুর। তাপিয়া এখানে ব্যতিক্রম। তাঁর চাওয়া মেসিকে খামাখা চাপে না ফেলে তিনি নিজের মতো থাকুক, খেলাটি উপভোগ করুক, ‘তাকে তার মতো থাকতে দিতে হবে, উপভোগ করতে দিতে হবে। বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়কে আমরা নিজেদের জাতীয় দলে খেলতে দেখছি, এটাই তো যথেষ্ট।’
আগামী জুনে ৩৮–এ পা রাখবেন মেসি। তাপিয়ার মতে ‘ক্যারিয়ারে সবকিছু জিতে নেওয়া’ মেসি ‘এখনো নিজের সেরা সময় কাটাচ্ছেন।’ তাই আর্জেন্টাইনদের পাশাপাশি সবার কাছে এএফএ প্রধান মেসিকে বল পায়ে দেখার ‘প্রতিটি দিন উপভোগ’ করতে বলেছেন এবং ব্যাপারটি সময়ের হাতে ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।
তাপিয়ার কাছে আরও একটি বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছিল, একই প্রশ্ন অবশ্য ফুটবল–সংশ্লিষ্ট আরও অনেককেই করা হয়েছে অতীতে এবং ভবিষ্যতেও করা হবে—ইতিহাসে সর্বকালের সেরা ফুটবলার কে? আর্জেন্টাইন ফুটবলের কর্ণধার এ প্রশ্নের উত্তরেও মেসির ভক্ত। এমনকি সেটা ডিয়েগো ম্যারাডোনাকে পিছিয়ে রেখেও।
মেসিকে ইতিহাসের সেরা হিসেবে বেছে নিয়ে তাপিয়া বলেন,‘সন্দেহ নেই, আমার কাছে সে–ই (সেরা)। তবে এরপরও ভিন্নমত থাকবে। ডিয়েগো দেশপ্রেমী ছিলেন এবং তিনি সেটা প্রমাণ করছেন। অবিশ্বাস্য সব পরিস্থিতিতে তিনি খেলেছেন। কিন্তু যদি আমাকে বেছে নিতে বলা হয়…আর সময়টাও আলাদা আলাদা। আমাদের এটা ভেবে গর্ব অনুভব করা উচিত, ইতিহাসেরা দুজনকেই আমরা পেয়েছি, দুজনেই আর্জেন্টাইন।’
বার্সেলোনা, পিএসজি পেরিয়ে মেসি এখন ইন্টার মায়ামিতে। কাতালান ক্লাবটির হয়ে ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলে সম্ভাব্য সব শিরোপাই জিতেছেন। মায়ামিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ফুটবলে জোয়ার তুলেছেন। স্টিফেন কারি, লেব্রন জেমসদের মতো যুক্তরাস্ট্রে ভীষণ জনপ্রিয় অ্যাথলেটরা এখন মেসির ভক্ত। বৈশ্বিক তারকাদের শীর্ষ পর্যায়ে থেকেও তাঁর বিনয় মুগ্ধ করে তাপিয়াকে, ‘সে অসাধারণ এক মানুষ। আমি এটাই মনে করি। সম্পর্ক নিয়ে কথা বলতে আমি পছন্দ করি না। তবে সন্দেহ নেই, সে দারুণ এক নেতা।’
কানাডা, মেক্সিকো ও যুক্তরাষ্ট্রে যৌথভাবে আয়োজিত হবে ২০২৬ বিশ্বকাপ। আর্জেন্টিনা যেহেতু ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন, তাই আগামী বিশ্বকাপে শিরোপাটা ধরে রাখার ‘বাধ্যবাধকতা’ রয়েছে বলে করেন তাপিয়া, ‘আমরা বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। শিরোপাটা ধরে রাখতে আমরা দায়বদ্ধ।’
স্বাভাবিকভাবেই সেই দায়বদ্ধতায় আর্জেন্টিনা দলের কোচ স্কালোনির দায়িত্বও অনেক বেশি। তাপিয়া মনে করেন, স্কালোনি ২০১৮ সালে কোচের দায়িত্ব পাওয়ার পর এই সাত বছরে ব্যর্থ হলে তিনি এখন এএফএ প্রধানের চেয়ারে থাকতে পারতেন না। স্কালোনির অধীনে আর্জেন্টিনা দল যে চক্র পূরণ করছে, সেখানে শিরোপা না থাকলে লোকে তাঁদের ‘খুন করতেন’ বলেও মনে করেন তাপিয়া, ‘এখন স্কালোনি ও আর্জেন্টিনা দল নিয়ে কথা বলা খুব সহজ। কিন্তু সাত বছর আগে রাশিয়ায় বিশ্বকাপে গ্রিঙ্গোকে (স্কালোনি) কোচ হিসেবে টিকিয়ে রাখার সিদ্ধান্তটা সহজ ছিল না।’
তাপিয়া বলে চলেন, ‘সন্দেহ নেই, কেউই খেলাধুলায় অর্জনের ঊর্ধ্বে নয়। আজ পর্যন্ত যা কিছু জেতা হয়েছে, সে জন্য খেলোয়াড় ও কোচিং স্টাফকে ধন্যবাদ। যদি আমরা খারাপ করতাম, তাহলে তারা আমাদের আবারও খুন করত এবং আমি সম্ভবত এখানে বসে থাকতে পারতাম না।’
আর্জেন্টিনা ২০১৮ বিশ্বকাপের শেষ ষোলো থেকে বাদ পড়ার পর জাতীয় দলের প্রধান কোচের দায়িত্ব পান স্কালোনি। এর পর থেকে তাঁর অধীনে স্বর্ণযুগ পার করছে আর্জেন্টিনা। ২০২১ ও ২০২৪ কোপা আমেরিকা জয়ের মধ্যে ২০২২ সালে কাতারে জিতেছে বিশ্বকাপ। সে বছর ‘ফিনালিসিমা’ও জিতেছে স্কালোনির দল।