সিগারেট ফুসফুসের জন্য ক্ষতিকর—এটা সবাই জানে। তবে সিগারেটের নিকোটিন মস্তিষ্কে কী ধরনের প্রভাব ফেলে, তা অনেকেরই অজানা। সম্প্রতি ‘অ্যানিমেটেড বায়োমেডিকেল’ নামের একটি প্ল্যাটফর্ম এক অ্যানিমেশন ভিডিও প্রকাশ করে এ বিষয়টি তুলে ধরেছে।
ভিডিওতে দেখানো হয়েছে, একজন ব্যক্তি সিগারেট খাওয়ার মাত্র ১০ সেকেন্ডের মধ্যেই তার মস্তিষ্কে পৌঁছে যায় নিকোটিন। নিকোটিন পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্কে সৃষ্টি হয় সাময়িক সুখানুভূতি, যা ধীরে ধীরে অভ্যাসে পরিণত হয় এবং তৈরি করে আসক্তি।
ভিডিওতে আরও বলা হয়, “প্রতিবার নিকোটিন গ্রহণে মস্তিষ্ক একটি ভালো অনুভূতির সঙ্গে পরিচিত হয়। বারবার এই অনুভূতি পাওয়ার ফলে মস্তিষ্ক নিকোটিন ছাড়া স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে চায় না। এতে ধূমপায়ী ব্যক্তি আসক্ত হয়ে পড়েন এবং ধূমপান ছাড়তে পারেন না।”
চিকিৎসা বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নিকোটিন শুধু শারীরিকভাবে নয়, মানসিকভাবেও গভীরভাবে প্রভাব ফেলে, যা ধূমপান ছাড়ার পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়।
এ কারণে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য বিজ্ঞানীরা পরামর্শ দিয়ে থাকেন, কেউ যেন কোনোভাবেই সিগারেট খাওয়া শুরু না করেন।
এরপর কেউ যখন সিগারেট ছাড়ার চেষ্টা করেন তখন তা তার জন্য খুবই কষ্টকর হয়ে পড়ে। কারণ সিগারেট খাওয়া ব্যক্তি নিকোটিনের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। এতে যখন আসক্ত ব্যক্তি সিগারেট ছাড়ার চেষ্টা করেন তখন তিনি বিষন্নতা, বিরক্তি ও নিকোটিন পাওয়ার তীব্র আকাঙ্খায় ভোগেন। আর দুর্ভাগ্যজনকভাবে এসব উপস্বর্গ কাটাতে তখন আরেকটি সিগারেট খেয়ে ফেলেন।
সিগারেটের প্রভাব প্রথমে ফুসফুস এবং হৃদপিণ্ডে পড়ে, তবে পরবর্তীতে এটি মস্তিস্কের কার্যকারিতার ওপরও ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে। সিগারেটের আসক্তি দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে মস্তিস্কের কার্যকারিতা কমে যায়, যার ফলে ব্যক্তির স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে যায় এবং তিনি অনেক কিছু মনে রাখতে পারেন না। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এটি আরও প্রকট হতে পারে, তবে ধুমপানকারী ব্যক্তিরা অল্প বয়সেই ভুলে যাওয়ার সমস্যায় আক্রান্ত হতে পারেন।
এছাড়া সিগারেট খাওয়া ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়, তবে ভালো খবর হলো, সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দিলে পাঁচ বছরের মধ্যে স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে যায়।
সিগারেটের মধ্যে থাকা বিষাক্ত রাসায়নিকগুলো মস্তিস্ক ও শরীরে প্রবেশ করে এবং ক্যানসার সৃষ্টির ক্ষমতা রাখে। তাই সিগারেট ছাড়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রতিটি মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি তাদের দীর্ঘমেয়াদী সুস্থতার দিকে এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়।