মহান মে দিবস উপলক্ষে দেশের সকল শ্রমজীবী মানুষের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু ও সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ।
গণমাধ্যম পাঠানো এক শুভেচ্ছা বার্তায় নেতৃবৃন্দ বলেন, ১ মে ১৮৮৬ সালে নিহত শ্রমিকদের স্মৃতি রক্ষার্থে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালন শুরু হয়েছিল। সেদিন শিকাগোতে কর্মঘণ্টা আট ঘণ্টা করার দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভে পুলিশি হামলায় নিহত হন ১০-১২ জন শ্রমিক। এই হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষিতে শ্রমিকদের প্রতি আন্তর্জাতিক সংহতি জানানোর লক্ষ্যে ১৮৮৯ সাল থেকে এই দিন শ্রমিক দিবস হিসেবে পালিত হয়ে আসছে।
এতে আরও বলা হয়, ১৮৮৬ সালের কর্মঘণ্টার দাবি ছাড়িয়ে তা এখন ন্যুনতম মজুরি, শিক্ষা, বাসস্থান, পেনশন, সাপ্তাহিক ও বাৎসরিক ছুটি ইত্যাদি বিষয়েও বিস্তৃত হয়েছে। এসব ক্ষেত্রে নিপীড়নের বিরুদ্ধে লড়াই করতে এখন শ্রমিকদের জন্য আন্তর্জাতিক কনভেনশন ও রাষ্ট্রীয় আইন আছে কিন্তু শ্রমিকদের জীবন বাস্তবতা বদলায়নি।
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ হলেও পুঁজি ও তৈরি পোশাক শিল্প-কারখানার বিস্তারে শ্রমিক শ্রেণির ধরনে পরিবর্তন এসেছে। স্বাধীনতা পূর্ব সময়ে অধিকাংশ শ্রমিকই ছিলেন পাটকল, চিনিকল ও চা-বাগানের শ্রমিক। এখন বড় অংশের শ্রমিকই তৈরি পোশাক শিল্প কারখানার ও অভিবাসী। বাংলাদেশের অর্থনীতির বড় অংশই এ দুই শ্রেণীর শ্রমিকদের রক্ত ঘামে তৈরি। অথচ, এই দুই শ্রেণীর শ্রমিকেরা অব্যাহত নিষ্পেষণের শিকার হলেও কোথাও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না। আবার সম্প্রতি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল ও চিনিকলের হাজার হাজার শ্রমিকের বেতন-ভাতার জন্য আন্দোলনও আমরা প্রত্যক্ষ করছি।
তারা বলেন, শ্রমিকদের সংগঠন ও সমাবেশের অধিকারের জন্য ট্রেড ইউনিয়ন স্বীকৃত পন্থা হলেও ট্রেড ইউনিয়নসমূহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্বার্থে ব্যবহৃত হওয়ায় শ্রমিক স্বার্থ ব্যাহত হচ্ছে। পরিবহন শ্রমিকদের একটা বড় অংশই বিভিন্ন রাজনৈতিক ইভেন্টে দলীয় স্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়া শ্রমিকদের নিহত হওয়ার ঘটনাও বেড়ে চলছে। ভবন ধসে, আগুনে পুড়ে, গুমের স্বীকার হয়ে, পুলিশের গুলিতে শ্রমিক নিহত হলেও তাদের ন্যায্য প্রতিবাদেরও সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে রানা প্লাজা, নিমতলী, বাঁশখালী কাণ্ড ঘটেছে অথচ, সরকার ও প্রশাসন এসকল ক্ষেত্রে শ্রমিকদের উপরই খড়গহস্ত হয়েছে। শ্রমিক সংগঠনগুলো বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লেজুড়বৃত্তি করার কারণে সংগঠনগুলোর নেতারা ফুলেফেঁপে উঠলেও সাধারণ শ্রমিকরা রয়েছে অধিকার বঞ্চিত।
মূলত, বাংলাদেশের বিকাশমান পুঁজির বিপরীতে শ্রমিকদের জীবনমানের কোনো উন্নয়ন ঘটেনি। ন্যুনতম মজুরির জন্য এখনো গার্মেন্টস শ্রমিক, চা বাগানের শ্রমিকসহ অন্যদের আন্দোলন করতে হচ্ছে। আইনে বলা থাকলেও দুই ঘণ্টার বেশি ওভারটাইম করিয়ে নিয়েও শ্রমিকদের মূল মজুরিই দেওয়া হচ্ছে না। শ্রম আদালতে গিয়েও প্রতিকার পাচ্ছেন না শ্রমিকেরা। প্রবাসী শ্রমিকদের স্বপ্ন বেঁচে অনেকেই তাদের পাচার করে দিচ্ছেন, কিংবা সমুদ্রে, জঙ্গলে মানবেতর জীবন যাপনের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। অথচ, এখানেও আইন কোনো সক্রিয় ভূমিকা রাখতে পারেনি। আর কূটনৈতিক অক্ষমতার দরুন প্রবাসী শ্রমিকেরা হাজারে হাজারে লাশ হয়ে ফিরলেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি।
এবি পার্টির শীর্ষ নেতারা হতাশাজনক পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে যথার্থ রাজনৈতিক সক্রিয়তা দেখানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বলেন, শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার বাইরে নতুন বাংলাদেশ গঠন করা সম্ভব নয়।
সূত্র: যুগান্তর