সর্বশেষ
বিশ্ববাজারে কমেছে স্বর্ণের দাম
বাসচালকের ঘুমে প্রাণ গেল ১০ জনের, আহত ৩০
‘আমরা প্রস্তুত, পরীক্ষা নিও না’, হুঁশিয়ারি পাকিস্তান সেনাবাহিনীর
পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সাবেক সভাপতি দিলীপকে নিয়ে কেন এত বিতর্ক
করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসতে হবে নির্বাচিত সংসদ থেকে: তারেক রহমান
গণতন্ত্রে যাওয়ার ওপরে নির্ভর করছে বাংলাদেশের অস্তিত্ব: মির্জা ফখরুল
যে কারণে শিল্পীর তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হলো ন্যান্সিকে
বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি, স্নাতক/স্নাতকোত্তরে আবেদন
নির্বাচন দিয়ে জনগণের সরকারের হাতে ক্ষমতা দিন: রিজভী
সুখবর দিলেন মেহজাবীন
পাকিস্তানি তারকাদের ইনস্টাগ্রাম ব্লক করলো ভারত
বিএনপির শ্রমিক সমাবেশে নেতা-কর্মীদের ঢল
চুয়াডাঙ্গায় মহান মে দিবস উদযাপন
সানি লিওনকে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি খুশি করে
ঝিনাইদহে মহান মে দিবস পালিত

পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির সাবেক সভাপতি দিলীপকে নিয়ে কেন এত বিতর্ক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিজেপির সাবেক সভাপতি দিলীপ ঘোষ দুই সপ্তাহের ব্যবধানে গণমাধ্যমে বেশ আলোচনায় এসেছেন। এই মুহূর্তে সরকার বা দলের কোনো পদে না থাকলেও গণমাধ্যমে তাঁর উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।

গত ৮ এপ্রিল দিলীপ প্রথমে গণমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিলেন বিয়ে করে। কারণ, শুধু ৬০ বছর বয়সে প্রথম বিয়ে করেছিলেন তাই নয়, দিলীপ ঘোষ ভারতের প্রধান হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের একসময় কর্মী ছিলেন। এই সংগঠনের কর্মীদের মধ্যে যাঁরা গৃহী নন, তাঁরা বিয়ে করতে পারেন না।

অবশ্য দিলীপ ঘোষ অনেক আগেই রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্গ ছেড়ে রাজনীতিতে এসেছেন, তবু তাঁর জনপ্রিয়তার কারণেই তাঁকে নিয়ে মাতামাতি শুরু হয়ে যায়। এর জেরে তাঁর দল ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ দুই পক্ষই বেশ খানিকটা অস্বস্তিতে পড়ে। শাসক ও বিরোধী—দুই পক্ষই ‘বিষয়টি তাঁর ব্যক্তিগত’ বলে শেষ পর্যন্ত এড়িয়ে যায়। কিন্তু গণমাধ্যম বিয়ের বিষয়টিকে এক সপ্তাহ ধরে টেনে যায়।

দ্বিতীয়বার দিলীপ তাঁর দলকে আরও বেশি বিপাকে ফেলে দিলেন গতকাল বুধবার দুপুরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে। হিন্দু দেবতা জগন্নাথ দেবের পুরীর মন্দিরের আদলে ২৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিম মেদিনীপুরের দিঘায় বানিয়েছেন বিশাল আরেক জগন্নাথ মন্দির। সেই মন্দিরের উদ্বোধন ছিল বুধবার বিকেলে। সেখানে দেখা যায় সস্ত্রীক মুখ্যমন্ত্রীর পাশে বসে আছেন সর্বভারতীয় স্তরে বিজেপির সাবেক সহসভাপতি এবং সাবেক সংসদ সদস্য দিলীপ। মৃদু হাসতে হাসতে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে গল্প করতেও দেখা যায়।

১০ বছর ধরে পশ্চিমবঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অন্যতম প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে মনে করা হতো পশ্চিম মেদিনীপুরের গোপীবল্লভপুরের জনপ্রিয় এই নেতাকে। তিনি রাজ্য সভাপতি থাকাকালেই ২০২১ সালের রাজ্য বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির আসন বেড়ে ৩ থেকে ৭৭-এ পৌঁছেছিল। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় বিজেপি কখনো এত আসন পায়নি। যেহেতু এই ঘটনা দিলীপ ঘোষের আমলে ঘটেছিল, তাই তাঁকে এখনো মমতার সবচেয়ে সফল বিরোধী বলে তাঁর শত্রু-মিত্র সব পক্ষই স্বীকার করে।

এই অবস্থায় ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে উত্তর প্রদেশের রাম মন্দিরের সঙ্গে টক্কর দিতে মমতা যখন রাজ্যে সবচেয়ে বড় মন্দিরটি উদ্বোধন করছেন, তখন তাঁর পাশে সস্ত্রীক দিলীপ ঘোষ। স্বাভাবিকভাবেই পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বিষয়টি আলোড়ন তুলেছে।

বিজেপির ভেতরে শুরু হয়েছে তুমুল দ্বন্দ্ব। মমতার অনুষ্ঠানে দিলীপ ঘোষের যাওয়া নিয়ে গেরুয়া পার্টি সামাজিক মাধ্যমে কার্যত দুই ভাগ হয়ে গেছে। দলের একাংশ দিলীপের বিরোধিতা করে বলছে, তাঁর এ কাজ করা উচিত হয়নি। আরেকাংশ তাঁকে সমর্থন দিয়ে বলছে, দলের ভেতরে নোংরা রাজনীতি করে সবচেয়ে সফল নেতাকে যাবতীয় পদ থেকে বের করে দিয়েছেন রাজ্য বিধানসভায় বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী এবং দলের রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। ফলে এটা হওয়ারই ছিল।

বিজেপির আইনজীবী সেলের সদস্য তরুণজ্যোতি তেওয়ারি লিখেছেন, ‘আমার কাছে দলের কর্মীদের রক্তের মূল্য আছে, হিন্দুদের রক্তের মূল্য আছে। আমাদের কর্মীদের ও সাধারণ হিন্দুদের রক্ত মমতার হাতে লেগে আছে। তাঁর সঙ্গে যিনি খোশমেজাজে বসে গল্প করেন, তিনি আমার নেতা নন। প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক হলে আলাদা ব্যাপার ছিল। দিলীপ ঘোষ কোনো প্রশাসনিক দায়িত্বে নেই যে তিনি মমতার সঙ্গে বৈঠক করবেন।’

তেওয়ারির এই মন্তব্যের নিচে বিজেপির আরেক সমর্থক প্রতুল ঘোষ লিখেছেন, ‘এই ব্যাপারটার মধ্যে অযথা রাজনীতি না দেখে ধর্মীয় ব্যাপারটা খুঁজুন। আর বেশি রাজনীতি খুঁজতে গেলে দেখা যাবে, সেদিনের যে লোকটা বিজেপি করত না, তাকে গুরুত্ব দিয়ে সিটিং এমপিকে বর্ধমান পূর্বে পাঠানো হয়েছিল। তখন কি দলের সিদ্ধান্ত ঠিক ছিল?’

এখানে প্রতুল ঘোষ ইঙ্গিত দিয়েছেন, ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে দিলীপ ঘোষকে মেদিনীপুরে তাঁর জেতা আসন না দিয়ে লড়াই করতে পাঠানো হয়েছিল বর্ধমান পূর্ব আসনে। তাঁর জায়গায় আনা হয়েছিল আসানসোলের এমএলএ এবং মহিলা শাখার সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পালকে। অর্থাৎ সরাসরি অপমান করা হয়েছিল সাবেক রাজ্য সভাপতিকে।

নাম না প্রকাশ করার শর্তে বিজেপির এক প্রবীণ নেতা প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে লোকটি পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে দাঁড় করালেন, তাঁর বিরুদ্ধে এখন বলা হচ্ছে, মোদি হাওয়ায় তিনি পশ্চিমবঙ্গে বিজেপিকে ৭৭ আসন এনে দিয়েছেন। তাঁর সব পদ কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এটা যাঁরা করেছেন, তাঁরা কিছুদিন আগে অন্য দল থেকে বিজেপিতে এসেছেন। একজন সফল নেতা এটা কত দিন মেনে নেবেন। তিনি তৃণমূল কংগ্রেসে চলে গেলে আমি অবাক হব না।’

আবার দিলীপের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেছেন অনেকে।

দিলীপকে নিয়ে পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে বুঝতে পেরে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার আগেই গণমাধ্যমে বলেছেন, ‘দিলীপ যাবেন কি না, সেটা তাঁর ব্যক্তিগত ব্যাপার। তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে দল এটাকে সমর্থন করে না। যখন একদিকে মুর্শিদাবাদে হিন্দুরা মার খেয়েছে, মন্দির এবং হিন্দুদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে, তখন ওখানে যাওয়া মানে দল মনে করে ওই ঘটনাকে গুরুত্ব না দেওয়া। ফলে দলের সিদ্ধান্ত হচ্ছে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে না যাওয়া।’

দিলীপকে নিয়ে যখন রাজ্যে প্রবল শোরগোল, তখন দিলীপের কথা শুনে মনে হয়েছে তিনি যেন বিষয়টা উপভোগই করছেন। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের আগে দিঘার সমুদ্রতটে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘মুখিয়া’ বা প্রধান বলে সম্বোধন করে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘মানুষের মনে ভক্তির জাগরণ হচ্ছে, মন্দিরও বাড়ছে। ভগবান যাঁকে যোগ্য মনে করেন, তাঁর হাত দিয়ে করিয়ে নেন। তিনি মুখ্যমন্ত্রীর হাত দিয়ে একটা ভালো কাজ করিয়ে নিয়েছেন। আমরা ভগবানকে দর্শন করার সুযোগ পেয়েছি, আমি সেই সুযোগ ছাড়িনি, এসেছি। কোনো রাজনৈতিক কথা বলতে আসিনি।’

দিলীপ মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন কি না এই প্রশ্নের উত্তরে তিনি আরও যোগ করেন, ‘উনি যদি ডাকেন, যাব। উনি আমাদের মুখিয়া (প্রধান), ওনার হাত দিয়ে মন্দির প্রতিষ্ঠা হয়েছে।’

২০২৬ সালের নির্বাচনের প্রাক্কালে, আর কিছুদিনের মধ্যেই বোঝা যাবে রাজনৈতিক ক্ষেত্রেও দিলীপ ঘোষ তাঁর ‘মুখিয়া’ হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্ব মেনে নেন কি না।

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ