বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক বাজারে একপ্রকার ‘ঝাঁকুনি’ দিয়েছে স্বর্ণের দাম। দুই সপ্তাহের মধ্যে সর্বনিম্ন অবস্থানে পৌঁছেছে মূল্যবান ধাতুটি।বৃহস্পতিবার (১ মে) স্বর্ণের দাম প্রায় ২ শতাংশ কমে প্রতি আউন্সে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ২২২.৬৬ ডলারে। খবর রয়টার্স।
বিশ্লেষকরা বলছেন, মার্কিন প্রশাসনের কাছ থেকে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের আশা এবং ডলারের শক্তিশালী অবস্থান স্বর্ণের দামের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। ইউবিএস বিশ্লেষক জিওভান্নি স্টাউনোভো মন্তব্য করেছেন, ‘বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা এবং শক্তিশালী ডলার স্বর্ণের ওপর প্রভাব ফেলছে।’
বিশ্ববাজারে স্পট স্বর্ণের দাম এক প্রতি আউন্সে ৩ হাজার ২২২.৬৬ ডলারে নেমে এসেছে, যা ১৫ এপ্রিলের পর থেকে সর্বনিম্ন। একই সময়ে, মার্কিন স্বর্ণের ফিউচারও ২.৭ শতাংশ কমে ৩ হাজার ২৩০.৮০ ডলার হয়েছে। এদিকে ডলার ইনডেক্স ০.৩ শতাংশ বেড়ে যাওয়ার ফলে ডলার-মূলক স্বর্ণ আন্তর্জাতিক বাজারে আরও ব্যয়বহুল হয়ে উঠেছে।
অন্যদিকে, স্পট সিলভার এর দাম ১.৮ শতাংশ কমে প্রতি আউন্স দাঁড়িয়েছে ৩১.৯৯ ডলারে, প্লাটিনাম ১ শতাংশ হ্রাস পেয়ে হয়েছে ৯৫৬.৬৩ ডলার এবং প্যালাডিয়াম ০.৩ শতাংশ বেড়ে ৯৪১.১০ ডলার।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার (৩০ এপ্রিল) বলেছেন, তিনি ভারত, জাপান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা দেখছেন এবং চীনসহ অন্যান্য দেশের সঙ্গেও চুক্তি করার জন্য আলোচনা করছেন। তার এই মন্তব্যের ফলে বাজারে কিছুটা আশাবাদ তৈরি হয়েছে, যা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ঝুঁকি নেয়ার আগ্রহ বৃদ্ধি করেছে।
এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম ত্রৈমাসিকের অর্থনৈতিক সঙ্কোচন নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে। ব্যবসায়ীরা শুল্ক বাড়ানোর সম্ভাবনা থেকে বাঁচতে আগেভাগে আমদানি বৃদ্ধি করেছে, যার ফলে অর্থনীতি সংকুচিত হয়েছে। তবে ফেডারেল রিজার্ভের নীতি নির্ধারকরা বলেছেন যে মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে না আসা বা শ্রমবাজারে অবনতির স্পষ্ট লক্ষণ না পাওয়া পর্যন্ত সুদের হার অপরিবর্তিত রাখা হবে।
বিশ্ববাজারে স্বর্ণের দাম যখন ৩ হাজার ৫০০ ডলারের কাছাকাছি পৌঁছেছিল, তখন কিছুটা পতন ঘটলেও বিশেষজ্ঞরা ভবিষ্যতে স্বর্ণের দাম পুনরায় বাড়ার সম্ভাবনা দেখছেন। যদি মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধি পায় এবং শ্রমবাজারে সংকট দেখা দেয়, তবে স্বর্ণের দাম আবারও নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে।
বিনিয়োগকারীরা এখন শুক্রবারের (২ মে) ননফার্ম পেরোলস রিপোর্টের জন্য অপেক্ষা করছেন, যা ফেডের সুদের হারের নীতির ভবিষ্যৎ দিশা নিয়ে আরও স্পষ্ট ধারণা প্রদান করবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, একটি দুর্বল রিপোর্ট ফেডকে সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে উৎসাহিত করতে পারে, যা স্বর্ণের দামকে আরও সহায়ক করবে।
রয়টার্সের সর্বশেষ জরিপে দেখা গেছে, ২০২৫ সালে প্রথমবারের মতো স্বর্ণের বার্ষিক গড় মূল্য ৩ হাজার ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। বিশ্লেষকরা আশাবাদী, যদি ফেড সুদের হার কমাতে বাধ্য হয় এবং বাণিজ্য উত্তেজনা আবার বাড়ে, তাহলে স্বর্ণ আবার ৩ হাজার ৫০০ ডলার পর্যন্ত ফিরে যেতে পারে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, সামগ্রিকভাবে এই পরিবর্তনগুলি স্বর্ণের ভবিষ্যৎ মূল্য বৃদ্ধির সম্ভাবনা জানান দিতে পারে, যদি মার্কিন অর্থনীতি বা বৈশ্বিক বাণিজ্য পরিস্থিতি অনুকূল থাকে।