জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনার খুব ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত ও আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানকে খেলোয়াড় থাকা অবস্থায় রাজনীতিতে না জড়ানোর পরামর্শ দেয়ার পাশাপাশি আওয়ামী লীগে যোগ দিতেও নিষেধ করেছিলেন মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
আজ শনিবার (৩ মে) ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়াম লাগোয়া এনএসসি টাওয়ারে বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক অ্যাসোসিয়েশনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে উপলক্ষে কথা বলতে গিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য এবং এক সময়ের তুখোড় ক্রীড়াবিদ, দেশবরেণ্য ফুটবলার মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমেদ কথা প্রসঙ্গে সাকিবের ইস্যু টেনে আনেন।
এ সময় তিনি বলেন, আমি সাকিব আল হাসানকে খেলোয়াড়ি জীবনের ইতি না টেনে রাজনীতিতে জড়াতে না করেছিলাম। বিশেষ করে আওয়ামী লীগে যোগদান করতে নিষেধ করেছিলাম। কারণ, আমি খুব ভাল করে জানতাম আওয়ামী লীগ কতটা ফ্যাসিস্ট দল।
উল্লেখ্য, আনুষ্ঠানিকভাবে আওয়ামী লীগে যোগদানের আগে সাকিব তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন এবং সেখানেই তার সঙ্গে সাকিবের কথা হয়। কি কথা হয়েছিল? সে বর্ণনা দিয়ে মেজর (অব:) হাফিজউদ্দীন বলেন, তখনো সাকিব রাজনীতিতে জড়াননি। একজন সাবেক ক্রীড়াবিদ, সাবেক জাতীয় ফুটবলার হিসেবে রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে জড়ানোর আগে একদিন আমার সঙ্গে দেখা করে সাকিব তার রাজনীতি করার ইচ্ছে বা অভিপ্রায় ব্যক্ত করেছিল।
তিনি আরও বলেন, আমি তখন তাকে খেলোয়াড় থাকা অবস্থায় রাজনীতিতে না জড়ানোর অনুরোধ করি। আমি তাকে জানাই, তুমি একজন ভাল ক্রিকেটার। দেশ ও বিদেশে তোমার বেশ সুনাম আছে। তোমার এখন রাজনীতিতে না জড়ানোই উত্তম।
মেজর (অব.) হাফিজ জোর দিয়ে বলেন, কথোপকথনের এক পর্যায়ে আমি সাকিবকে আওয়ামী লিগের ফ্যাসিবাদী চরিত্র তুলে ধরে সোজা-সাপ্টা জানাই, আর যাই করো আওয়ামী লীগে যোগদান করো না। আওয়ামী লীগের নেতিবাচক দিক আমার খুব ভাল জানা। আমি নিজে খেলোয়াড়ি জীবনেও আওয়ামী অন্যায়, জুলুমের শিকার হয়েছি। কাজেই আমি জানি আওয়ামী লীগ কতটা নেতিবাচক দল।
আওয়ামী শাসনামলে তিনি কিভাবে অবমূল্যায়িত ও অসম্মানিত হয়েছিলেন, সে ঘটনা জানিয়ে মেজর হাফিজ বলেন, আমি ১৯৭০ সালে পাকিস্তান আমলে পাকিস্তান মূল ফুটবল দলে ছিলাম। অপর দুই বাঙালী ফুটবলার নুরুন্নবী আর জাকারিয়া পিন্টুর সাথে আমিও পাকিস্তান জাতীয় দলের হয়ে ইরানে খেলতে গিয়েছিলাম।
তিনি আরও বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণ করে স্বাধীনতার পর ঢাকা লিগে মোহামেডানের হয়ে এক ম্যাচে ডাবল হ্যাটট্রিকসহ ২ খেলায় ৭ গোল করেও স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জাতীয় দলে ডাকই পাইনি। কারণ ছিল, আমার আব্বা তখন জাসদের সহ-সভাপতি ছিলেন। তাই আওয়ামী লিগাররা আমাকে জাতীয় দলে নেয়নি।
তিনি আরও বলেন, আমি দুই পাকিস্তান থাকা অবস্থায় পাকিস্তান মূল দলের হয়ে খেললেও আমার দেশ স্বাধীন বাংলাদেশে জাতীয় দলের জার্সি গায়ে চড়ানোর সুযোগ পাইনি। তাই আওয়ামী লীগ যে কত নেতিবাচক মানসিকতায় গড়া এবং তাদের আচরণ যে কত ফ্যাসিস্ট তা আমার খুব ভাল জানা।
মেজর হাফিজ যোগ করেন, আমার ওই কথা শুনে সাকিবের মুখটা খানিক কালো হয়ে যায়। সে মুখফুটে কিছু না বললেও খানিকক্ষণ নীরব থেকে চলে গেল নিজের ঠিকানায়। এর কিছুদিন পর শুনলাম, দেখলাম এবং জানলাম সাকিব আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে এবং আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য হয়েছে। এরপরের ঘটনা সবার জানা। আজ সাকিব ধিক্কৃত। দেশে ফিরতে পারছে না।
সাকিব ইস্যুতে মেজর হাফিজের শেষ কথা, আমি বিশ্বাস করি, সাকিব যদি আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে দলটির সংসদ সদস্য না হতো, তাহলে আজও সে সম্মানের সাথে দেশে থাকতে এবং খেলতে পারতো। এ রকম গণধিক্কারের শিকার হতো না এবং সুনাম ও সম্মানের সাথে অবসর নিতে পারতো।