যারা আয়কর রিটার্ন জমা দেন না, কিংবা নানাভাবে কর ফাঁকি দেন বা কর অব্যাহতি নেন; তাদের বিষয়ে কঠোর হচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর)। তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা হবে। তাদের কাছ থেকে কর আদায় করতে এখন থেকে কর কর্মকর্তাদের লক্ষ্যমাত্রা (টার্গেট) দেওয়া হবে।
রোববার (৪ মে) সকালে রাজধানীতে এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা জানান এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।
বনানীতে একটি হোটেলে আসন্ন বাজেটে রাজস্ব খাত ও ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি নিয়ে সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয়।এটি যৌথভাবে আয়োজন করে বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সংগঠন ফরেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি বা এফআইসিসিআই, সনদপ্রাপ্ত হিসাববিদদের সংগঠন দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) ও জাপান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (জেবিসিসিআই)।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ ও চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট প্রতিষ্ঠান স্নেহাশীষ মাহমুদ অ্যান্ড কোম্পানির অংশীদার স্নেহাশীষ বড়ুয়া।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, শুরু থেকেই বিপুল পরিমাণে কর অব্যাহতি দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবছর যে পরিমাণ রাজস্ব আদায় করা হয়, সমপরিমাণ অর্থ কর অব্যাহতির কারণে চলে যায়।
এনবিআরের তথ্যমতে, কর শনাক্তরণ নম্বর (টিআইএন) থাকলেও বিপুলসংখ্যক মানুষ রিটার্ন জমা দেন না। সে কারণে নিয়মিত করদাতাদের ওপর চাপ তৈরি হয়। ফলে যারা রিটার্ন জমা দেন না, তাদেরও জবাবদিহির আওতায় আনার উদ্যোগ নিচ্ছে সংস্থাটি।
এ প্রসঙ্গে অনুষ্ঠানে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, কমিশনারেটে নির্দেশনা দেওয়া হবে- টার্গেট দেওয়া হবে, এ বছর ও পরবর্তী বছরের জন্য। যাতে তারা নন-ফাইলার্সদের (যারা রিটার্ন জমা দেন না) থেকে কী পরিমাণ কর সংগ্রহ করতে পারল, রিবেটার্সদের (ছাড় পাওয়া) থেকে কত কর সংগ্রহ করতে পারল, তা বোঝা যাবে। বলা হয়, এনবিআরের ৯২ শতাংশ রাজস্ব টিডিএসসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলে আসে। কর কর্মকর্তারা মাত্র ৮ শতাংশ রাজস্ব সরাসরি সংগ্রহ করেন। এই ব্যবস্থায় এখন থেকে কর কর্মকর্তাদের দক্ষতারও প্রমাণ পাওয়া যাবে।
আবদুর রহমান বলেন, শুরু থেকে বিপুল পরিমাণে কর ছাড় দেওয়া হচ্ছে। যে পরিমাণ রাজস্ব সংগ্রহ করা হয়, সমপরিমাণ অর্থ কর ছাড়ের কারণে হারাতে হচ্ছে। কিন্তু সরকারের অভ্যন্তরীণ ও বহিঃস্থ ঋণের বড় চাপ/বোঝা (বার্ডেন) আছে। এ অবস্থায় এভাবে কর অব্যাহতি দিয়ে টিকে থাকা সম্ভব নয়।
এ প্রসঙ্গে এনবিআর চেয়ারম্যান আরও বলেন, অনেক ক্ষেত্রেই যথাযথ নিয়ম মেনে এসব ছাড় দেওয়া হয়নি। নতুন করছাড় নীতিতে এই সক্ষমতা সংসদের হাতে থাকবে।আগামী বাজেটে ব্যবসা সহজীকরণের নানা উদ্যোগ থাকবে, তবে রাজস্ব আহরণও কমবে না- সেদিকে নজর থাকবে।