৬ মে। তারিখটাকে বার্সেলোনা মনে রেখেছে অনেক কারণে। কত যে ইতিহাস এই একটা তারিখে হয়ে গেছে! সেই ৬ মে–তে আজ সান সিরোয় ‘ইন্টার-পরীক্ষা’ বার্সেলোনার। ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি নিশ্চিত করেই চাইবে দলটা, তবে এই তারিখে সাম্প্রতিক যে ইতিহাস, তার পুনরাবৃত্তি যে চাইবে না, তা নিশ্চিত।
কী হয়েছিল ৬ মে–তে? এ প্রশ্নের জবাবে ফিরে যেতে হবে অন্তত ৬ বছর আগে। লিওনেল মেসির বার্সেলোনার ‘পতনের শুরু’ হয়েছিল এই দিনে। মেসিকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় বার্সেলোনায় থাকাকালে কোন ম্যাচ নিয়ে আফসোস হয় সবচেয়ে বেশি, তাহলে তার জবাবে নিশ্চয়ই এই দিনের একটা ম্যাচই আসবে।
২০১৯ সালের আজকের এই দিনে বার্সেলোনা পা রেখেছিল অ্যানফিল্ডে। লিভারপুলের বিপক্ষে ফাইনালে এক পা দিয়েই রেখেছে দল, এমনটা সব বার্সা-ভক্তই বোধ হয় ভেবে ফেলেছিলেন। তবে সেটা উবে গেল ম্যাচ শুরু হতেই। দিভোক অরিগির গোলে শুরু। এরপর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে জর্জিনিও ওয়াইনাল্ডামের দুই গোলে দুই লেগের লড়াইয়ে সমতা, শেষ মুহূর্তে অরিগির আরও এক গোলে মেসির বার্সার বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে ফাইনালে চলে যায় লিভারপুল, জিতে নেয় শিরোপাটাও।
এমন কিছু অবশ্য এর আগের আসরেও হয়েছিল। রোমের সেই ট্র্যাজেডিকে এক বারের ভুল ভেবে পরের আসরে মাঠে নেমেছিল বার্সেলোনা। ২০১৯ সালের ৬ মে’র আগ পর্যন্ত খেলছিলও ‘ফেভারিটের’ মতো করেই। সেমিফাইনালের দ্বিতীয় লেগে গিয়ে সব দম্ভ টুটে গেল একেবারে।
তবে ৬ মে যে শুধু গঞ্জনাই উপহার দিয়েছে বার্সাকে, বিষয়টা কিন্তু মোটেও তা নয়। বরং এ দিনে সুখস্মৃতির সংখ্যাটাই তো বেশি! ২০১৫ সালের আজকের এই দিনে বার্সেলোনা মুখোমুখি হয়েছিল সে আসরের অন্যতম ফেভারিট বায়ার্ন মিউনিখের, সে ম্যাচে লুইস এনরিকের দল ৩-০ গোলের জয় পায় লিওনেল মেসির জোড়া গোল আর নেইমারের লক্ষ্যভেদে।
তারও বছর ছয়েক আগে, ২০০৯ সালের ৬ মে বার্সা একটা ড্র নিয়ে ফিরেছিল স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ থেকে। সে ম্যাচেও ছিল লিওনেল মেসির খেল। ১-০ গোলে পিছিয়ে যোগ করা সময়ে পা রাখা বার্সা সমতা ফেরায় আন্দ্রেস ইনিয়েস্তার পাগলাটে এক গোলে, সে গোলটাও বানিয়ে দিয়েছিলেন এই মেসিই।
দুইয়ের বিপরীতে এক, আজকের এই দিনে বার্সার সুখস্মৃতিটাই বেশি। তবে লিভারপুলের বিপক্ষে ওই ম্যাচ যে ক্ষতটা দিয়ে গেছে বার্সার মানসিকতাতে, তা সারাতে বহু দিন লেগে গেছে। সে কারণে হয়তো দিনটা এলে আফসোসই বেশি হয় দলটার।
আজ আরও এক ৬ মে। আর আবারও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের সেমিফাইনালের মঞ্চে পা রাখবে বার্সা, সেটাও আবার প্রতিপক্ষের মাঠে। হানসি ফ্লিকের দল এবারের মৌসুমে ইস্পাতকঠিন মানসিকতার পরিচয় দিয়েছে বটে। পিছিয়ে পড়েও জয় তুলে নিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ, বরুসিয়া ডর্টমুন্ড, বেনফিকার মাঠ থেকে। হারিয়েছে আতলেতিকো মাদ্রিদ, বায়ার্ন মিউনিখের মতো দলকেও। এবার দলের সামনে নতুন এক চ্যালেঞ্জ, ইন্টার মিলান চ্যালেঞ্জ। সে চ্যালেঞ্জের প্রথমভাগেও তো মানসিকতার পরিচয়টা দিয়েছে বার্সা, ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়েও ৩-৩ গোলে ড্র করেছে ঘরের মাঠের সেই ম্যাচে।
৬ বছর আগে অ্যানফিল্ডের ওই ম্যাচের সঙ্গে আজকে আরও একটা মিল আছে বার্সেলোনার। আজও ওই দিনের মতো হালকা সবুজরঙা অ্যাওয়ে জার্সি পরেই মাঠে নামবে, বিষয়টা আগেই জানিয়ে রেখেছে কাতালানরা। দিন, মঞ্চ, এমনকি জার্সির রঙটাও মিলে যাচ্ছে। এবার জয় ছাড়া উপায়ও নেই প্রথম লেগে ৩-৩ গোলের ড্রয়ের পর।
এবার কি স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ, ন্যু ক্যাম্পের অনুপ্রেরণা নিয়ে জয় তুলে ‘অ্যানফিল্ডের ভূত’ তাড়াতে পারবে বার্সেলোনা? নাকি আবার অ্যানফিল্ড ইতিহাসেরই পুনরাবৃত্তি ঘটাবে? সে প্রশ্নের উত্তর তোলা রইল সান সিরোর দ্বিতীয় লেগের জন্য। উত্তরটা মিলবে আজ রাত ১টায়।
সূত্র: যুগান্তর