সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ চিকিৎসার জন্য দেশত্যাগ করেছেন। তার দেশত্যাগে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় তাকে ‘চিকিৎসার জন্য’ যেতে দেওয়া হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ। দেশের চিকিৎসকদের পরামর্শেই তিনি বিদেশে গেছেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে। তার এ দেশত্যাগের ঘটনায় তিন পুলিশ কর্তকর্তাকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার বিষয়টিকে অপ্রত্যাশিত বলে দাবি করছে সরকার। ইতোমধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াও শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় পুলিশ সদর দপ্তর জানায়, সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ইমিগ্রেশন পুলিশের একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তাহসিনা আরিফকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। এছাড়া আবদুল হামিদের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ সদর থানায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই আজহারুল ইসলাম এবং এসবি কর্মকর্তা মো. সোলায়মানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। উক্ত ঘটনায় কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপারকেও প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এদিকে আবদুল হামিদের দেশত্যাগের ঘটনায় অতিরিক্ত আইজিপিকে (প্রশাসন) প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে। এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মতিউর রহমান শেখ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যুগান্তরকে বলেন, ‘উনি পাসপোর্ট কিভাবে পেয়েছেন-এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়। এছাড়া কারা তাকে দেশত্যাগে সহায়তা করেছেন তা খতিয়ে দেখাসহ সার্বিক বিষয় নিয়ে তদন্ত কমিটি হয়েছে। তদন্তের আগে কিছু বলা যাচ্ছে না।’
বুধবার রাত ৩টা ৫ মিনিটে থাই এয়ারওয়েজের একটি ফ্লাইটে দেশ ছাড়েন সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। তিনি বিমানবন্দরে যান রাত ১১টার দিকে। প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সেরে রাত ৩টা ৫ মিনিটের দিকে থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩৪০ নম্বর ফ্লাইটে থাইল্যান্ডের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়েন। দেশ ছাড়তে কেউ তাকে বাধাও দেয়নি। তিনি নির্বিঘ্নে সসম্মানে গেছেন। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষ বলছে, আবদুল হামিদের দেশত্যাগে কোনো নিষেধাজ্ঞা না থাকায় তাকে ‘চিকিৎসার জন্য’ যেতে দেওয়া হয়েছে। তার সঙ্গে শ্যালক ডা. এএম নওশাদ খান ও ছোট ছেলে রিয়াদ আহমেদও ছিলেন। দেশের চিকিৎসকদের পরামর্শেই তিনি বিদেশে গেছেন বলে পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে।
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের নির্বাহী পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম যুগান্তরকে বলেন, বিমানবন্দর দিয়ে দেশত্যাগের সময় কেউ ‘স্টপ লিস্টে’ আছেন কি না, তা এসবিসহ অন্যান্য গোয়েন্দা সংস্থা যাচাই করে থাকে। সেখানে সিভিল এভিয়েশনের কোনো কাজ নেই। সিভিল এভিয়েশন শুধু অপারেশনাল দায়িত্ব পালন করে।
বিমানবন্দরে দায়িত্বরত একটি গোয়েন্দা সংস্থার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, ‘ওনারা চুপিসারে দেশত্যাগ করেছেন-বিষয়টি এমন না। ওই সময় বিমানবন্দরে সব গোয়েন্দা সংস্থার দায়িত্বরত কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু কোনো সংস্থার কাছে আবদুল হামিদের দেশত্যাগের নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা ছিল না। ফলে সবার উপস্থিতিতেই ইমিগ্রেশনের সব আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে তিনি দেশত্যাগ করেন।’
আওয়ামী লীগ সরকারের সময় টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব পালন করেন আবদুল হামিদ। ২০১৩ সালের ২৪ এপ্রিল প্রথম দফায় দেশের ২০তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেন। এরপর তিনি ২০১৮ সালের ২৪ এপ্রিল দ্বিতীয়বার ২১তম রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেন। তার মেয়াদ শেষে ২০২৩ সালের ২৪ এপ্রিল রাষ্ট্রপতি হিসাবে শপথ নেন মো. সাহাবুদ্দিন। বঙ্গভবন ছাড়ার পর আবদুল হামিদ রাজধানীর নিকুঞ্জের বাসায় উঠেছিলেন। তবে ৫ আগস্টের পর তিনি ওই বাসায় আর ছিলেন না। এতদিন কোথায় ছিলেন, তা এখন পর্যন্ত জানা সম্ভব হয়নি।
জুলাই অভ্যুত্থানে হামলা ও গুলি করার ঘটনায় সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানা, শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১২৪ জনের বিরুদ্ধে ১৪ জানুয়ারি কিশোরগঞ্জ থানায় একটি মামলা হয়। তবে তার দেশত্যাগে আদালতের নিষেধাজ্ঞা কিংবা কোনো বাহিনীর আপত্তি ছিল না বলে জানিয়েছে পুলিশ। অবশেষে অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের নয় মাস পর দেশ ছাড়লেন দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করা সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।