যেসব ইবাদতের নির্দেশ কোরআনে এসেছে তার বিস্তারিত বর্ণনা হাদিস ছাড়া জানার কোন উপায় নেই। কোরআনুল কারীমে এসেছে, ‘এবং সালাত কায়েম করবে ও জাকাত আদায় করবে।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৮৩)
আরো এসেছে, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমাদের ওপর সিয়াম ফরজ করা হলো, যেমন তা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা আল্লাহভীরু হতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)
অন্যত্র এসেছে, ‘আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ ফরয করা হলো ওই লোকদের ওপর, যাদের এখানে আসার সামর্থ্য রয়েছে।’ (সুরা আলে-ইমরান, আয়াত : ৯৭)
উপরোক্ত তিনটিই মৌলিক আমল। এর কোন একটি আমল সঠিকভাবে পালন করতে হলে রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানা ছাড়া আমল করা সম্ভব নয়।
আল্লাহ বলেন, ‘এবং সালাত কায়েম করো ও জাকাত আদায় করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৮৩)
কিন্তু সালাত কার ওপর ফরজ? কোন কোন সময় আদায় করতে হবে? পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের সময় কখন? দিনে-রাতে কত বার, কত রাকাত, কী পদ্ধতিতে আদায় করতে হবে—তার কোনো কিছু কোরআনে উল্লেখ করা হয়নি।
জাকাত সম্পর্কে কোরআনে এসেছে, ‘তোমরা জাকাত আদায় করো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৮৩)
কোন ধরনের সম্পদে জাকাত দিতে হবে? কী পরিমাণ সম্পদ হলে কী পরিমাণ জাকাত দিতে হবে? বছরে কত বার জাকাত দিতে হবে? নিজের উৎপাদিত ফসলের জাকাত হবে কি? দিতে হলে কোন ফসলের জাকাত বের করতে হবে? গৃহপালিত পশুর জাকাত দিতে হবে কি? স্বর্ণ-রৌপ্য বা অন্য কোন অলংকারের জাকাতের বিধান কী? এসব বিষয়ে হাদিসের মধ্যে ব্যাখ্যা করে পালনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
সিয়াম সম্পর্কে কোরআনে এসেছে, ‘হে বিশ্বাসীরা! তোমাদের ওপর ছিয়াম ফরজ করা হলো, যেমন তা ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যাতে তোমরা আল্লাহভীরু হতে পারো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৩)
রমজান মাস কিভাবে শুরু হবে? রোজা অবস্থয় কী কী নিষিদ্ধ? ফরজ সাওমের নিয়ম কী? নফল সাওমের নিয়ম কি? সিয়াম সম্পর্কীয় যাবতীয় বিধি-বিধান যেমন—চাঁদ দেখেই সিয়াম শুরু করতে হবে আবার চাঁদ দেখেই সিয়াম শেষ হবে এবং কি করলে সিয়াম সুন্দর হয়, কী করলে নষ্ট হয় ইত্যাদি বিষয়গুলো সবিস্তারে হাদিসে আলোচনা করা হয়েছে।
হজ সম্পর্কে কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, ‘আর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ ফরজ করা হলো ওই লোকদের ওপর, যাদের এখানে আসার সামর্থ্য রয়েছে। আর যে ব্যক্তি তা অস্বীকার করে (সে জেনে রাখুক যে) আল্লাহ জগদ্বাসী থেকে অমুখাপেক্ষী।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ৯৭)
হজের বিধান কোরআনে সংক্ষিপ্তভাবে এসেছে, এর বিস্তারিত বর্ণনা যেমন—জীবনে কয়বার হজ ফরজ? ইহরাম কখন, কোথায় কিভাবে বাধতে হবে? কাবা ঘরের তাওয়াফ কিভাবে, কয়বার করতে হবে? কিভাবে কতবার সাফা মারওয়া সাঈ করতে হবে। আরাফার ময়দানে কখন ও কতক্ষণ অবস্থান করবে, সেখানে কী আমল করতে হবে?
মুজদালিফায় করণীয় কী, মিনার আমল কী? ইত্যাদি শত শত প্রশ্নের সমাধান আছে কেবল হাদিসে। সুতরাং হাদিস অস্বীকার করলে কোনো ইবাদত সঠিকভাবে আদায় করা সম্ভব নয়। এসব মৌলিক ইবাদতগুলো ছাড়াও এমন অনেক ইবাদত আছে, যা কোরআনের নির্দেশ, কিন্তু হাদিসের সাহায্য ছাড়া জানা যায় না বা পালন করা যায় না। যেমন চুরির শাস্তি, বিবাহের পদ্ধতি, উত্তরাধিকারী আইন, পুরুষের পোষাক ও অলঙ্কার পরিধানের বিধান, নেশা দ্রব্য সেবনের বিধান, মৃত প্রাণী খাওয়ার বিধান ইত্যাদি।