রাজশাহীতে আয়োজিত এক সেমিনারে জানানো হয়েছে, দেশে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। সর্বশেষ ২০২৪ সালে প্রবাসীদের পাঠানো রেমিটেন্সের পরিমাণ ২৬ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার।
সাধারণভাবে গার্মেন্টসকে সর্বোচ্চ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী খাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়; কিন্তু গার্মেন্টস খাতের কাঁচামাল আমদানির খরচ রয়েছে। এ কারণে রেমিটেন্স থেকে নেট বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন গার্মেন্টসের চেয়ে তিনগুণ বেশি।
বিশ্বের ১৭৩টি দেশে থাকা এক কোটি ২০ লাখ প্রবাসী দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন।
বুধবার বেলা ১১টায় রাজশাহী জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে ‘নিরাপদ অভিবাসন ও দক্ষতা উন্নয়ন’ শীর্ষক সেমিনারে আলোচকরা এসব তথ্য জানান।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজশাহী কর্মসংস্থান ও জনশক্তি কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আতিকুর রহমান।
সেমিনারে উপস্থাপিত প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, প্রবাসে যে কর্মী পাঠানো হয় তার শতকরা ৪৭ শতাংশ অদক্ষ। এর মধ্যে আধা দক্ষ ১৬ শতাংশ এবং দক্ষ মাত্র ৩৫ শতাংশ। আমাদের অধিকাংশ কর্মী শুধুমাত্র শরীর নিয়ে বিদেশে কাজ করতে যান। এ কারণে দক্ষতা অর্জনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। প্রশিক্ষণের জন্য সারা দেশে ১১০টি টিটিসি রয়েছে। অথচ দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য আমাদের দেশের মানুষ দক্ষতা অর্জনে প্রশিক্ষণ গ্রহণে উৎসাহী হন না।
প্রবন্ধে বলা হয়, অনেকে মা ও স্ত্রীর গহনা, বাড়ি এবং জমিসহ মূল্যবান সম্পদ বিক্রি করে বিদেশে কাজের সন্ধানে যান। এর মধ্যে অনেকেই প্রতারিত হন। বিদেশ যাওয়ার ক্ষেত্রে ভিসার পাশাপাশি রিক্রুট এজেন্সির কাছে এগ্রিমেন্ট পেপার চাইতে হবে। এ পেপার পেলে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা নেই। এজেন্সির কাছ থেকে ক্লিয়ারেন্স কার্ডও নিতে হবে। ক্লিয়ারেন্স কার্ড নিয়ে বিদেশে গিয়ে দুর্ঘটনা বা অন্য কোনো কারণে দেশে ফিরলে সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত প্রবাসী দেড় লাখ টাকা পাবেন। মৃত্যু হলে প্রবাসীর পরিবার পাবেন তিন লাখ টাকা। তাই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়েই বিদেশে কাজের জন্য যেতে হবে। তাহলে কোনো দিক থেকেই ক্ষতির সম্ভাবনা থাকবে না। এছাড়া হুন্ডির মাধ্যমে টাকা না পাঠিয়ে যথাযথ ব্যাকিং চ্যানেলে প্রবাসীদের দেশে টাকা পাঠানোর জন্যও সেমিনারে পরামর্শ দেওয়া হয়।
জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস, রাজশাহী এ সেমিনারের আয়োজন করে। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর সহযোগিতায় আয়োজিত সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (উন্নয়ন ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা) যোবায়ের হোসেন।
আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টিটিসি রাজশাহীর অধ্যক্ষ নাজমুল হক। এছাড়া সেমিনারে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি দফতরের কর্মকর্তা, নারী উদ্যোক্তা, মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন ও যুব সমাজের সদস্য, ইজিবাইক প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।