সর্বশেষ
শিশুসন্তানকে যৌন নিপীড়নের হাত থেকে বাঁচাতে যা কিছু করণীয়
হিটস্ট্রোক হলে দ্রুত যা করবেন
লাল শাড়িতে ষাটের দশকের চার্ম নিয়ে এলেন সাদিয়া আয়মান
ত্বকে পুষ্টির অভাব মানেই বার্ধক্যের ছাপ, জানুন বাঁচার উপায়
দক্ষিণি সুন্দরী পার্বতীর ১০টি বোল্ড লুক
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর ও ওজন নিয়ন্ত্রণ করে তালশাঁস
শুঁটকিতে আছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি, খাওয়ার আগে করণীয় জানালেন পুষ্টিবিদ
আদর্শ পরিবার গঠনে ইসলামের ভূমিকা
জাতীয় সংগীতের পক্ষে কথা বলায় সাম্যকে হত্যা করা হয়েছে: রিজভী
ঢাবিতে হচ্ছে না ক্লাস-পরীক্ষা, ছাত্রদলের বিক্ষোভ
ভারতে কারাভোগ শেষে দেশে ফিরল ১১ বাংলাদেশি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাটডাউন ঘোষণা শিক্ষক সমিতির
ফুটবল কোচের মতো দলে পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চান গম্ভীর
রাজনৈতিক অস্তিরতা নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দিলেন সাংবাদিক ইলিয়াস
যেকোনো বিষয়ে স্নাতকে চাকরি, বয়স ৪২ হলেও আবেদন করা যাবে

আদর্শ পরিবার গঠনে ইসলামের ভূমিকা

অনলাইন ডেস্ক

১৫ মে বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস ২০২৫। ১৯৯৩ সালের ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৫ মে আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস হিসেবে ঘোষিত হয়।

জাতিসংঘ ১৯৯৪ সালকে আন্তর্জাতিক পরিবারবর্ষ ঘোষণা করেছিল। যৌথ পরিবারের ঐতিহ্য ধরে রাখার মানসিকতা সৃষ্টির লক্ষে জাতিসংঘের মতে, দিনটি পরিবার সম্পর্কিত সমস্যাগুলো সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানোর এবং পরিবারগুলোকে প্রভাবিত সামাজিক, অর্থনৈতিক এবং জনসংখ্যার প্রক্রিয়া সম্পর্কে জ্ঞান বাড়ানোর একটি সুযোগ সরবরাহ করে।

১৯৯৬ সাল থেকেই দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। আর পরিবার আত্মীক সম্পর্কের সূতিকাগার। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে গড়ে ওঠে স্নেহ মমতা, ভালোবাসা সৌহার্দ এবং পারস্পারিক সম্পর্কের বন্ধন।

সুপ্রাচীন কাল থেকে যে যৌথ পরিবারে চিত্র বাংলাজুড়ে ছিল এখন তা অনেকটাই ম্লান। শহুরে জীবনে অনেক আগেই বিলীন হয়েছে যৌথ পরিবারের চিত্র। আগে গ্রামে কিছু যৌথ পরিবার দেখা গেলেও এখন তাও নেই। বংশ মর্যাদা এমনকি ঐতিহ্যের পরিবারেও বিলীন একত্রে বাস করার ইতিহাস।

পরিবার মানেই হচ্ছে মা, বাবা, ভাই, বোন, দাদা, দাদী, ভাইকে নিয়ে একসঙ্গে বসবাস। আমাদের সমাজব্যবস্থায় পরিবারের এই ধারণা প্রচলিত অতীত থেকেই। কিন্তু দিন যতোই যাচ্ছে, আমরা যেন ততোই এই ধারণা থেকে বেরিয়ে আসছি। যেন ক্রমেই ‘স্বামী-স্ত্রী-সন্তানে’ই সীমাবদ্ধ করে ফেলছি আমরা পরিবারকে।

সেখানে মা-বাবা কিংবা দাদা-দাদীর কোন স্থান নেই। মা-বাবাকে হয়তো গ্রামের বাড়িতে কাটাতে হচ্ছে নিঃসঙ্গ-অসহায় জীবন। আবার অনেক মা-বাবার ঠিকানা হচ্ছে ‘বৃদ্ধাশ্রম’।

অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে একান্নবর্তী কিংবা যৌথ পরিবারের ধারণা যেন এখন ‘সেকেলে’ হয়ে গেছে। বিশেষ করে, শহুরে জীবন ব্যবস্থায় এই ব্যাপারটি চরম আকার ধারণ করেছে।

সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, আমাদের সমাজে প্রচলিত যৌথ পরিবারে পারস্পরিক সম্প্রীতি গভীর হয়, অটুট থাকে। অসুখ বিসুখসহ নানা সমস্যায় একে অন্যের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।

এতে অনেক বড় সমস্যাও সমাধান হয়ে যায় অতি সহজে। সময়ের তাগিদে যৌথ পরিবার কিংবা পারিবারিক বন্ধন অটুট রাখার বিষয়টি যখন এই সমাজে ক্রমান্বয়ে গুরুত্বহীন হয়ে উঠছে, ঠিক সেই মুহূর্তে আজকের এই আন্তর্জাতিক পরিবার দিবস পালনের গুরুত্ব অপরিসীম।

রক্তের বন্ধন মানেই পারিবারিক বন্ধন। পরিবারের সকল সদস্যের মধ্যে অকৃত্রিম সুসম্পর্ক গড়ে তোলা এবং তা অটুট রাখা আমাদের সকলের নৈতিক দায়িত্ব।

আমাদের চিরায়ত সমাজ ব্যবস্থায় সুন্দর জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হচ্ছে, সুন্দর পারিবারিক বন্ধন। পরিবারের সকল সদস্যের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক বন্ধুর মতো হলে পারিবারিক নানা জটিল সমস্যা ও মোকাবেলা করা যায়। সকলের এগিয়ে চলার পথ হয় মসৃণ।

পরিবার নিয়ে ইসলামের দৃষ্টিকোণ- ইসলামি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও কর্তব্যপরায়ণতা বজায় থাকায় সেখানে সুখ-শান্তি বিরাজ করে। ইসলামের আদর্শ ও মূল্যবোধের ওপর ভিত্তি করে ইসলামি পরিবার গড়ে উঠে। এ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পারস্পরিক শ্রদ্ধা-স্নেহ, মায়া-মমতা ও ভালোবাসা বজায় থাকে।

ইসলামি পরিবারে স্বামী-স্ত্রী, পিতামাতা, সন্তান এবং ভাইবোন প্রত্যেকেই নিজের অধিকার ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন থাকে। ইসলামি শরিয়তের আলোকে এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে তাদের দৈনন্দিন বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হয়। এসব কারণে ইসলামি পরিবারে শান্তি বজায় থাকে।

আর পৃথিবীর প্রথম পরিবার গড়ে ওঠে হজরত আদম (আ.) ও তার স্ত্রী হাওয়ার মাধ্যমে। পরিবারের সদস্য প্রথমত তারা স্বামী-স্ত্রী দুজন ছিলেন। সৃষ্টির পর মহান আল্লাহ এ পরিবারকে জান্নাতে বসবাস করতে দেন।

আল্লাহ বলেন, ‘হে আদম! তুমি আর তোমার স্ত্রী দুজনেই জান্নাতে বসবাস কর।’ (সুরা বাকারা : ৩৫)। এরপর তারা পৃথিবীতে আগমন করলেন। তাদের থেকে জন্ম নেয় তাদের সন্তান-সন্ততি। এভাবে পৃথিবীতে পরিবার ও পারিবারিক ব্যবস্থার সূচনা হয়।

আর পারিবারিক জীবনের গুরুত্ব বুঝাতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘হে মানবমণ্ডলী! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি হতেই সৃষ্টি করেছেন ও যিনি তা হতে তার স্ত্রী সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তাদের দু’জন হতে বহু নর-নারী ছড়িয়ে দিয়েছেন।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১)

অন্য আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে মানুষ! আমি তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি এক পুরুষ এবং এক নারী থেকে।

তারপর তোমাদেরকে বিভক্ত করেছি বিভিন্ন জাতি ও গোত্রে, যাতে তোমরা পরস্পরে পরিচিতি লাভ করতে পার।’ (সুরা হুজরাত : আয়াত ১৩)

পারিবারিক জীবনের সুফল আয়াতদ্বয় থেকে স্পষ্ট প্রতিয়মান হয় যে, পারিবারিক বন্ধন থেকেই মানববংশ সম্প্রসারণ হয়েছে। যদি সকল জাতি ও গোত্রের লোকেরা বিভিন্ন পরিবারে বিভক্ত হয়ে নিজ নিজ দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করে তবে সে পরিবার সমাজে সর্বোত্তম আদর্শ পরিবার হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করবে। যেখানে বইতে থাকে শান্তির ফল্গুধারা। পরিবারের প্রতিটি সদস্যের বিচরণ হবে সুখকর ও আনন্দময়।

পরিবারের সদস্যরা যখন আল্লাহর দেওয়া দায়িত্বানুভূতি সম্পর্কে সজাগ থাকবে। স্ত্রী তার অধিকার পূর্ণাঙ্গভাবে লাভ করবে। স্বামী যখন স্ত্রীর নিকট তার অধিকার পাবে, সন্তান বাবা-মায়ের ঘনিষ্ঠ সাহচর্য ও তাদের অধিকার লাভ করবে, আত্মীয়-স্বজন যখন পরস্পরের যথাযথ সম্মান মর্যাদা পাবে, তখন কোনো স্ত্রী আর তার অধিকারের দাবিতে প্রকাশ্য জনপথে আন্দোলনে বের হবে না, কোনো স্বামী ভালোবাসা ও সুন্দর জীবন-যাপনে অন্য নারীর প্রতি আশক্ত হবে না, কোনো সন্তানই বাবা-মায়ের অবাধ্য হয়ে উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করবে না এবং আত্মীয়-স্বজনের সম্পর্কের দৃঢ়তায় আল্লাহর রহমত, বরকত ও অনুগ্রহ বর্ষিত হতে থাকবে।

শুধু তাই নয়-ইসলাম নির্দেশিত পারিবারিক জীবন হলো আল্লাহ তাআলার মহা অনুগ্রহ।

আদর্শ ও উত্তম পরিবার গঠনে পরিবারের দায়িত্বশীলের ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্ব নবীর ছোট্ট একটি হাদিসের মাধ্যমে তা তুলে ধরতে চাই। হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তুমি একটি দিনার আল্লাহর রাস্তায় খরচ করেছ, একটি দিনার ক্রীতদাস মুক্তিতে ব্যয় করেছ, একটি দিনার মিসকিনকে দান করেছ এবং একটি দিনার পরিবারের লোকদের জন্য ব্যয় করেছ। এ খরচ করা দিনারগুলোর মধ্যে নিজ পরিবারের লোকদের জন্য খরচ করা দিনারের মূল্য- প্রতিদান লাভের দিক থেকে সর্বোত্তম।’ (মুসলিম)

সুতরাং আল্লাহ ও তার রাসুলের বিধান অনুযায়ী পরিবার গঠন করলে সে পরিবার হবে একটি আদর্শ ও সর্বোত্তম পরিবার।

আর পরিবারের সুখ, শান্তি এবং পারস্পরিক সম্পর্ক ছাড়াও রয়েছে একটি আইনগত ও সামাজিক দিক। জীবনের সব পর্যায়ে যদি আল্লাহ প্রদত্ত ও মহানবী (সা.) প্রদর্শিত বিধান মেনে চলা যায়, তাহলেই পারিবারিক বিপর্যয়রোধ সম্ভব হবে। নতুবা মানবীয় প্রচেষ্টা মরীচিকার মতো নিষ্ফল ও ব্যর্থ হতে বাধ্য।

ইসলামে পরিবারের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, পরিবারের সব সদস্যের মধ্যে প্রেম-প্রীতি, ভালোবাসা ও মনের প্রশান্তি লাভ। নৈতিক ও চারিত্রিক উৎকর্ষতা সাধনের মাধ্যমে মানবতার পরিপূর্ণ বিকাশ সাধনের শিক্ষা পরিবার থেকে লাভ করে মুসলিম সন্তানরা।

তাই আসুন, আমরা কোরআন এবং হাদিসের আলোকে একটি পূর্ণাঙ্গ পরিবার প্রতিষ্ঠা করি। তাহলেই একটি সমাজ ও রাষ্ট্র পূর্ণাঙ্গ ইসলামের আওতায় আসতে বাধ্য।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুন্দর পরিবার গঠনের লক্ষ্যে সমাজের সর্বস্তরে কুরআন-হাদিসের সুমহান আদর্শকে তুলে ধরার তাওফিক দান করুন,আমিন।

লেখক: কলাম লেখক ও গবেষক

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ