ভারতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগের লক্ষাধিক নেতা-কর্মী এখন চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটাচ্ছেন। কারণ ভারত সরকার সম্প্রতি অবৈধ নাগরিকদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। একাধিক রাজ্যে ইতিমধ্যেই পুশব্যাক প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সূত্র জানায়, আগস্ট মাসের পর থেকেই দেশজুড়ে অবৈধ বিদেশিদের বিরুদ্ধে অভিযান আরও জোরদার করা হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে যাওয়া রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থীদেরও ছাড় দেওয়া হবে না।
একটি জাতীয় দৈনিকের তথ্য অনুযায়ী- পশ্চিমবঙ্গ, ত্রিপুরা, মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে অবস্থান করছেন আওয়ামী লীগের প্রায় দেড় লাখ নেতা-কর্মী, যাদের অনেকেই ৫ আগস্টের পর পরিবারসহ সেখানে বাস করছেন।
ভারতে আশ্রয় নেওয়া আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই জানান, তারা এখন গভীর উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন। দেশে ফেরার মতো পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি। কিন্তু ভারতের অবস্থান কঠোর হওয়ায় কোথাও আশ্রয় পাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে।
সূত্র জানায়, প্রায় ৫০ জন নেতা ইতোমধ্যেই ইউরোপ ও আমেরিকায় চলে গেছেন। অনেকেই চেষ্টা করছেন তৃতীয় দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় নেওয়ার। কিন্তু বেশিরভাগই ভারত ছাড়ার পর কোথায় যাবেন, তা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন।
ভারতে অবস্থানরত কয়েকজন নেতা জানান, দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা নিজেই ভারতে আশ্রিত নেতাদের দেশে ফিরতে নির্দেশ দিয়েছেন। তবে তারা মনে করছেন, নেত্রীর নির্দেশ থাকলেও এখনও দেশে ফেরার মতো পরিবেশ নেই। ফলে নেতাদের ভেতরে ভীতির সঞ্চার হয়েছে।
আওয়ামী লীগের একটি শীর্ষ সূত্র দাবি করেছে, ভারতের বিভিন্ন রাজ্য সরকার থেকে আমাদের নেতাদের ব্যক্তিগতভাবে জানানো হচ্ছে—দ্রুত ভারত ছাড়তে হবে। নয়তো আটক করে দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, ‘আমরা একেক নেতা একেক রাজ্যে বসবাস করছি। চলতি মাস থেকে সংশ্লিষ্ট রাজ্যের নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো ভারত ছাড়ার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে। ভারতের গণমাধ্যমেও অবৈধ নাগরিক প্রতিরোধে বিভিন্ন খবর ছাপা হচ্ছে। এটি ভারতে থাকা সবার ভেতরে দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিয়েছে।’
সম্প্রতি ভারতের লোকসভায় অনুপ্রবেশ নিয়ন্ত্রণ আইন আরও কঠোর করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, অন্য দেশের নাগরিকেরা কোনোভাবেই ভারতে অবৈধভাবে বসবাস করতে পারবে না। দেশটির আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে বলা হয়েছে, অবৈধ হিসেবে চিহ্নিত কেউ নিজে থেকে না গেলে, তাকে গ্রেফতার করে দেশে ফেরত পাঠানো হবে।
বাংলাদেশের সাবেক কূটনীতিক হুমায়ুন কবির গণমাধ্যমকে বলেন, ভারত সরকারের ‘পুশব্যাক’ নীতিকে আরও মানবিকভাবে পরিচালনা করা উচিত। কাউকে জোর করে ফেরত পাঠানোর চেয়ে প্রক্রিয়াগতভাবে, কূটনৈতিক পন্থায় সমস্যার সমাধান হওয়া ভালো।
সূত্র: নিউজ টোয়েন্টিফোর