সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা ছবি, আড্ডা কিংবা কথাবার্তায় অনেক মানুষকেই আমরা সুখী বলে জানি। কিন্তু বাস্তবতা হলো, আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যাঁদের একধরনের অভ্যন্তরীণ শূন্যতা আছে; যেটা বাইরে থেকে বোঝা যায় না। এমন কিছু লক্ষণ আছে, যা দেখলে বুঝতে পারবেন, মানুষটি আদতে সুখী নন। কী সেই লক্ষণ?
১. অস্থিরতায় ভোগেন যাঁরা
যাঁরা ভেতরে অসন্তুষ্ট বা অখুশি থাকেন, তাঁরা সব সময় একটা অস্থিরতার মধ্যে থাকেন। যেন তাঁরা কিছু একটা থেকে পালাতে চাইছেন। তাঁরা বারবার নতুন কিছুতে নিজেকে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করেন। যেমন একটা সিনেমা বা সিরিজ দেখতে শুরু করে শেষ করতে পারেন না, নতুন আরেকটা দেখতে শুরু করেন। কিংবা ক্রমাগত ফোন স্ক্রল করতে থাকেন, বারবার একে-ওকে ফোন করতে থাকেন কিংবা অন্য কিছুতে মগ্ন থাকেন। অর্থাৎ নিজেকেই শান্তিতে থাকতে দেন না।
২. তাঁদের স্বীকৃতির প্রয়োজন
যে মানুষ ভেতর থেকে সত্যিকারের সুখী, তিনি অন্যের প্রশংসা বা স্বীকৃতির ওপর নির্ভর করেন না। তিনি নিজের ভালো লাগা, নিজের লক্ষ্য এবং প্রিয় মানুষদের জন্য কাজ করতেই বেশি মনোযোগী থাকেন। অন্যদিকে যিনি ভেতরে-ভেতরে অখুশি, তিনি প্রায়ই আত্মবিশ্বাসের ঘাটতিতে ভোগেন এবং সেই ঘাটতি পূরণ করতে অন্যের স্বীকৃতি ও প্রশংসা খুঁজে বেড়ান।
৩. মুখে সব সময় বিরক্তির ছাপ
যাঁরা ভেতর থেকে অসন্তুষ্ট থাকেন, তাঁদের মুখে প্রায়ই বিরক্তি ও অস্বস্তির ছাপ দেখা যায়। আবেগ ধরে রাখতে পারেন না। ফলে খিটখিটে হয়ে পড়েন, হঠাৎ রেগে যান বা সহজেই কেঁদে ফেলেন। এমনকি খুব ছোট বিষয়েও তাঁরা আহত বোধ করতে পারেন কিংবা সামান্য পরিবর্তনেই মন খারাপ করে দূরে সরে যান।
৪. বর্তমানে আনন্দ খুঁজে পান না
যে ব্যক্তি ভেতরে-ভেতরে অসুখী, তিনি কখনোই পুরোপুরি বর্তমান মুহূর্তটাকে উপভোগ করতে পারেন না। আনন্দের সময়ও তাঁর মনে একধরনের ভয় কাজ করে—এই সুখ বুঝি বেশিক্ষণ থাকবে না। তাই বারবার ভবিষ্যতের শূন্যতা বা কষ্টের কথাই ভাবতে থাকেন, ফলে আনন্দটাও ঠিকমতো ধরা দেয় না।
৫. শূন্যতা অনুভব করেন
যদি কারও ভেতরে গভীর অসুখী ভাব বাসা বাঁধে, তাহলে বাইরের কোনো সাফল্য, যেমন পুরস্কার, প্রশংসা, পদক বা বড় কোনো অর্জন তাঁকে সত্যিকারের শান্তি দিতে পারে না। যত খেতাবই তিনি অর্জন করেন না কেন, মনে হবে, কিছু একটা এখনো অসম্পূর্ণ। যেন আরও কিছু চাই, অন্য কিছু চাই। এই অতৃপ্ত আকাঙ্ক্ষা তাঁর মনে থেকেই যায়।
৬. একাকিত্ব মানতে পারেন না
যাঁরা ভেতরে-ভেতরে খুশি নন, তাঁরা নীরবতা বা একাকিত্ব সহজে মেনে নিতে পারেন না। সব সময় যেন কিছু না কিছু করে সেই শূন্যতা ঢাকতে চান। তাঁরা কখনো অকারণে কথা বলেন, কখনো কারও সঙ্গে আড্ডা দেন কিংবা কাউকে ফোন করে ব্যস্ত থাকেন—শুধু যেন নিঃশব্দ মুহূর্তটা অনুভব না করতে হয়।
৭. অতিরিক্ত চিন্তার বেড়াজাল
অসুখী মানুষের আরেকটি অদৃশ্য লক্ষণ হলো অতিরিক্ত চিন্তা, যা কিছুতেই থামে না। ছোটখাটো সিদ্ধান্ত হোক কিংবা পুরোনো কোনো সম্পর্ক—সবকিছু নিয়েই তাঁরা বারবার ভাবেন, বিশ্লেষণ করেন। ফলে মনের ভেতর একটা অস্থিরতা ও বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়, যা তাঁদের শান্ত থাকতে দেয় না।
৮. ঘুম যেন পলাতক পাখি
নিদ্রাহীনতাও অসুখী মানুষের একটি লক্ষণ। তাঁরা প্রায়ই ইনসমনিয়ায় ভোগেন। বিছানায় শুয়ে শুধু এপাশ-ওপাশ করেন, ভাবনার জাল বুনতে থাকেন, নানা কল্পনায় ডুবে যান। কিন্তু ঘুম আর আসে না।
৯. ক্রমাগত নিজেকে অবমূল্যায়ন
ভেতরে-ভেতরে যাঁরা অসুখী ও অপূর্ণতার অনুভব নিয়ে বাঁচেন, তাঁরা প্রায়ই নিজেকে অবমূল্যায়ন করেন। মনে করেন, তাঁরা কখনোই ‘যথেষ্ট ভালো’ বা ‘পারফেক্ট’ নন। নিজেকে বোঝা মনে হয় এবং নিজের সঙ্গেই নিজে বাজে আচরণ করেন। ক্রমাগত নিজেকে দোষারোপ করেন।
১০. নিজের জন্য খুশি নন, অন্যের জন্যও নন
যে ব্যক্তি ভেতরে-ভেতরে অসুখী, তিনি নিজের আনন্দ উপভোগ তো করতে পারেনই না, অন্যের আনন্দেও খুশি হতে পারেন না। কারও পদোন্নতি, বার্ষিকী, অর্জন বা বিয়ের খবরেও তাঁর মনে প্রশংসা বা ভালোবাসা আসে না। বরং একধরনের হিংসা বা ঈর্ষা নিঃশব্দে কাজ করে।
সূত্র: এমএসএন