সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ করে হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে করা মামলায় সাংবাদিক শফিক রেহমানকে খালাস দিয়েছেন আদালত।
আজ মঙ্গলবার ঢাকার চতুর্থ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ তারিক এজাজের আদালত এ রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় শফিক রেহমান এজলাসে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ২৭ এপ্রিল শফিক রেহমানের খালাস চেয়ে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেজবাহ। এদিকে শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষ আদালতকে জানান, এ মামলায় শফিক রেহমান খালাস পেলে তাদের আপত্তি নেই।
এদিন শুনানিতে আসামিপক্ষে সৈয়দ জয়নুল আবেদীন মেসবাহ বলেন, হাসিনাপুত্র জয়কে কথিত অপহরণ ও হত্যাচেষ্টার মামলা এটি। ভিকটিম নিজে মামলা দায়ের করেনি। পুলিশ অতিরিক্ত ইন্টারেস্ট দেখিয়ে মামলা দায়ের করে। শফিক রেহমান ৯০ বছর বয়সী লোক। তাকে এ মামলায় রিমান্ডে নেওয়া হয়। মামলায় কোনো স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি নেই। মামলায় ১২ জন সাক্ষী দিয়েছেন। জয়ও এ মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। যে দিন জয় এ মামলায় সাক্ষ্য দেয় সেদিন সাক্ষ্য শেষে বিচারক তার পেছনে দৌড়াচ্ছেন, এমন চিত্র দেখা যায়। তাহলে দেখেন কেমন বিচার হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষে সংশ্লিষ্ট আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ খলিলুর রহমান (খলিল) বলেন, এটা রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা। তিনি একজন প্রথিতযশা সাংবাদিক। খালাস দিলে আমাদের আপত্তি নেই।
মামলা সূত্রে জানা যায়, সজীব ওয়াজেদ জয়কে অপহরণ এবং হত্যাচেষ্টার ষড়যন্ত্রের মামলায় গত বছরের ১৭ আগস্ট ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসাদুজ্জামান নূরের আদালত আমার দেশ পত্রিকার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ও সাংবাদিক শফিক রেহমানসহ পাঁচজনের পৃথক দুই ধারায় সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত অপর তিন আসামি হলেন- জাসাস নেতা মোহাম্মদ উল্লাহ, রিজভী আহমেদ সিজার ও মিজানুর রহমান ভূঁইয়া।
আসামিদের দণ্ডবিধির ৩৬৫ ধারায় (অপহরণ) পাঁচ বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেন আদালত। জরিমানার টাকা অনাদায়ে তাদের আরও একমাসের কারাভোগের আদেশ দেওয়া হয়। এছাড়া একই আইনে ১২০-খ ধারায় (অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র) দুই বছরের কারাদণ্ড ও পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত। দুই ধারার সাজা একসাথে চলবে বলে বিচারক রায়ে উল্লেখ করেন।
এ মামলায় গত বছরের ২২ সেপ্টেম্বর এ মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি সাংবাদিক শফিক রেহমান ও যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান ভূঁইয়ার সাজা এক বছরের জন্য স্থগিত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মাহমুদুর রহমান কারাগারে যাওয়ার পরদিন ৩০ সেপ্টেম্বর ঢাকার আদালতে এ মামলায় সাজার বিরুদ্ধে আপিল দায়েরের শর্তে আত্মসমর্পণ করে জামিন পান শফিক রেহমান। পরে গত ১০ ফেব্রুয়ারি এ মামলায় খালাস পান দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার সম্পাদক মাহমুদুর রহমান।
মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, ২০১১ সালের সেপ্টেম্বরের আগে যেকোনো সময় থেকে এ পর্যন্ত বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের সহ-সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ মামুনসহ বিএনপি ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটভুক্ত অন্যান্য দলের উচ্চপর্যায়ের নেতারা রাজধানীর পল্টনের জাসাস কার্যালয়ে, আমেরিকার নিউ ইয়র্ক শহরে, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার আসামিরা একত্রিত হয়ে যোগসাজশে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে ও তার প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়কে আমেরিকায় অপহরণ করে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন। ওই ঘটনায় ডিবি পুলিশের পরিদর্শক ফজলুর রহমান ২০১৫ সালের ৩ আগস্ট বাদী হয়ে পল্টন মডেল থানায় মামলাটি করেন। ২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি এই পাঁচজনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। এ মামলায় সজীব ওয়াজেদ জয়সহ ১২ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন।