চিয়া সিডের উপকারিতার কথা আমরা প্রায় সবাই জানি। ফলে এই বীজ একবার হলেও চেখে দেখার আগ্রহ জাগে অনেকেরই। সমস্যা হয় খেতে গিয়ে। কারণ, অনেকেই পানিতে ভেজানো চিয়া সিড খেতে পারেন না। ফলে এক দিন, দুদিন চেষ্টা করে ছেড়ে দেন হাল। তবে এর দারুণ এক সমাধান হলো চিয়া পুডিং। বানানো সহজ, খেতে সুস্বাদু আর পুষ্টিকর তো বটেই। ছয়টি উপকারিতার সঙ্গে জেনে রাখুন কীভাবে বানাবেন এই চিয়া পুডিং।
চিয়া পুডিং বানাতে লাগবে চিয়া সিড ও তরল দুধ। চিয়া সিড কিছুক্ষণ পানিতে রাখলেই নরম হয়ে যায় ও পুডিংয়ের মতো ঘন হয়ে আসে। চাইলে এতে খেজুর, ফল বা ফারমেন্টেড নারকেল দুধ যোগ করে স্বাদ ও পুষ্টিগুণ বাড়ানো যায়। চিয়া পুডিংয়ে পাবেন ওমেগা-৩, ফাইবার, প্রোটিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, নানান ভিটামিন ও খনিজ। চিয়া বীজ হজমে সাহায্য করে, প্রদাহ কমায়, হরমোন ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে। নারকেল দুধ শক্তি দেয়, মস্তিষ্কের পুষ্টি বাড়ায় ও শরীরকে হাইড্রেট রাখে। খেজুর প্রাকৃতিক মিষ্টি স্বাদ দেয় এবং হাড় ও ত্বকের জন্য উপকারী। ফারমেন্টেড নারকেল দুধ অন্ত্রে ভালো ব্যাকটেরিয়া বাড়িয়ে ইমিউন সিস্টেম ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নত করে।
চিয়া পুডিং সকাল–বিকেল যেকোনো সময় খাওয়া যায়। পাশাপাশি হালকা মিষ্টি হিসেবেও খাওয়া যায়, যা সুস্থতার সঙ্গে স্বাদেরও চমৎকার সমন্বয়। চিয়া পুডিংয়ের ছয়টি উপকারিতা জেনে নিন—
মানসিক ও শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে
চিয়া পুডিং শরীর ও মস্তিষ্কের জন্য দীর্ঘস্থায়ী শক্তির উৎস। এর প্রোটিন, ফ্যাট ও ফাইবার—এই তিন পুষ্টিগুণ একসঙ্গে থাকে। এসব একযোগে কাজ করে এবং আপনাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা শক্তি জোগায়। চাইলে আপনি চিয়া পুডিংয়ের সঙ্গে নারকেল দুধ মিশিয়ে নিতে পারেন। কারণ, নারকেল দুধ এমসিটি (মিডিয়াম চেইন ট্রাইগ্লিসারাইডস) নামে একধরনের ফ্যাট থাকে, যা মস্তিষ্ক খুব সহজে কাজে লাগাতে পারে। এমসিটি অন্যান্য ফ্যাটের মতো হজম হয় না, তাই অন্যান্য স্বাস্থ্যকর ফ্যাটের তুলনায় এই ফ্যাট মস্তিষ্ককে আরও কর্মক্ষম করে তোলে দ্রুততম সময়ে।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
চিয়া পুডিংয়ের প্রোটিন, ফ্যাট এবং ফাইবারের ক্ষুধা নিবারণকারী। এসব ঘণ্টার পর ঘণ্টা পেট ভরা রাখে। আদর্শ স্ন্যাকস হিসেবে এটা খেতে পারেন। কারণ, অল্প পরিমাণে (যেমন ১/৪ থেকে ১/২ কাপ) খেলেই এটা অনেকক্ষণ পেট ভরা রাখতে পারে। মিষ্টি খেতে মন চাইলেও এটা খেতে পারেন। কারণ, চিয়া পুডিংয়ে চিনির পরিবর্তে খেজুরও রাখা হয়।
সন্ধ্যায় আমাদের প্রচণ্ড ক্ষুধা লাগে। কারণ, আমরা হয়তো সারা দিনে যথেষ্ট পরিমাণ প্রয়োজনীয় পুষ্টি গ্রহণ করি না। চিয়া পুডিং অত্যন্ত পুষ্টিসমৃদ্ধ হওয়ায় এটা সন্ধ্যার ক্ষুধায় হতে পারে দারুণ সমাধান। এভাবে চিয়া পুডিং ওজন কমাতে সহায়তা করে।

অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বা প্রদাহরোধী
চিয়া সিডে থাকা ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট শরীরের প্রদাহ কমাতে দারুণভাবে সাহায্য করে। শরীরে যদি কখনো সাময়িক প্রদাহ হয়, সেটা স্বাভাবিক, কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে প্রদাহ থাকলে তা নানা রোগের কারণ হতে পারে। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের নিজস্ব প্রদাহরোধী ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে এবং ক্ষতিকর উপাদানগুলোর কাজকে বাধা দেয়। পাশাপাশি চিয়া সিডে থাকা ক্যাফেইক অ্যাসিড নামের একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট প্রদাহ কমাতে এতটাই কার্যকর যে এটি বাতজ্বর বা অন্ত্রের প্রদাহের মতো সমস্যা কমাতেও থেরাপি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

অন্ত্র ভালো রাখতে সহায়তা করে
চিয়া পুডিং অন্ত্রের জন্য খুবই উপকারী। কারণ, এতে থাকে প্রিবায়োটিক। এই প্রিবায়োটিক একধরনের ডায়েটারি ফাইবার বা খাদ্যআঁশ, যা আমাদের শরীর হজম করতে পারে না; তবে এই আঁশ আমাদের অন্ত্রে থাকা উপকারী ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে ফারমেন্টেড বা গাঁজানো হয়ে যায়। মোটকথা, ভালো ব্যাকটেরিয়া বাঁচিয়ে রাখতে এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে লড়াই চালাতে এই পুষ্টি দরকার। চিয়া সিড এই কাজটাই করে। অর্থাৎ আপনার অন্ত্র ভালো থাকে, আর আপনি মানসিক ও শারীরিকভাবে সুস্থ থাকেন। মজার ব্যাপার হলো, আমাদের মনের ভালো লাগার হরমোন সেরোটোনিনের ৯০ শতাংশ তৈরি হয় অন্ত্রেই। পাশাপাশি ইমিউন সিস্টেমের ৭০-৮০ শতাংশ কোষ অন্ত্রের সঙ্গেই সম্পৃক্ত। চাইলে আপনি চিয়া পুডিংয়ে ১-২ চামচ ফারমেন্টেড নারকেল দুধ মিশিয়ে এই উপকারিতা আরও বাড়াতে পারেন। ফারমেন্টেড নারকেল দুধ ভালো প্রোবায়োটিক বলে হজমশক্তি উন্নত করে, রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায় এবং মানসিক স্বাস্থ্যে সহায়তা করে।
হজম ও মলত্যাগ প্রক্রিয়া উন্নত করে
চিয়া পুডিংয়ে থাকা ফাইবার হজমশক্তি ভালো রাখে এবং শরীর থেকে টক্সিন ও বর্জ্য পরিষ্কার করতে সাহায্য করে। এতে পেট পরিষ্কার থাকে ও অন্ত্রের রোগের ঝুঁকি কমায়। তবে হঠাৎ করে বেশি পরিমাণে ফাইবার খেলে গ্যাস বা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা হতে পারে। তাই ধীরে ধীরে ফাইবার বাড়াতে হবে এবং পর্যাপ্ত পানি খেতে হবে। কারণ, ফাইবার স্পঞ্জের মতো পানি শোষণ করে। তাই পানি কম হলে তার কার্যকারিতা কমে যায়। ভালো ব্যাকটেরিয়া ফাইবার পছন্দ করে। তাই ফাইবার ও পানি-দুটিই ঠিকমতো গ্রহণ করলে হজমশক্তি বাড়বে।

হৃদ্যন্ত্রের স্বাস্থ্য উন্নত করে
চিয়া পুডিংয়ে থাকা ফাইবার ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড হৃৎস্বাস্থ্যের জন্য দারুণ উপকারী। এটি খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) কমাতে সাহায্য করে। ফলে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদ্রোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে। পাশাপাশি এটি ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল) বাড়ায়, যা সুস্থ কোষ গঠন এবং চর্বি ভাঙার জন্য দরকারি। এতে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমে, ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকিও কমে যায়। চিয়া সিড উচ্চ রক্তচাপ কমাতেও সহায়ক। তবে আপনি যদি রক্তচাপের ওষুধ খান, তাহলে নিয়মিত চিয়া সিড খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
সূত্র: নর্যাশ ডটকম
চিয়া পুডিং বানানোর রেসিপি
উপকরণ
- কাঠবাদাম দুধ বা নারকেল দুধ: আধা কাপ
- চিয়া সিড: দুই টেবিল চামচ
- ম্যাপল সিরাপ: আধা চা–চামচ
- দারুচিনি গুঁড়া: সিকি চা–চামচ
- ফল: ৭–৮ টুকরা বা নিজের পছন্দমতো
- বাদাম: কয়েকটি বা নিজের পছন্দমতো
প্রণালি
চিয়া সিড, দুধ, ম্যাপল সিরাপ ও দারুচিনি গুঁড়া একসঙ্গে মেশান। ৮ ঘণ্টা বা সারারাত ফ্রিজে রেখে দিন। তৈরি হয়ে গেল চিয়া সিডের পুডিং। চিয়া পুডিং খাওয়ার আগে ফল ও বাদাম মিশিয়ে নিন।
চিয়া পুডিং