সর্বশেষ
কানাডায় ভয়াবহ দাবানল, ম্যানিটোবায় জরুরি অবস্থা জারি
বেটিসকে উড়িয়ে কনফারেন্স লিগ জয়ী চেলসির ইতিহাস 
রংপুর মেডিকেলের মর্গে থাকা লাশের চোখ গায়েব: কর্তৃপক্ষ বলছে, ইঁদুরে খেয়ে ফেলেছে
কাঠবাদাম না আখরোট- কোন বাদামে স্মৃতিশক্তি বাড়বে
চট্টগ্রামে নারীকে লাথির ভিডিও ভাইরাল, অভিযুক্তকে নিয়ে যা বললেন যুবদল সভাপতি
কে থাকবেন শাকিবের সঙ্গে, অপু না বুবলী!
তারেক রহমানের খালাসে প্রমাণিত হাসিনার আমলের সব মামলা মিথ্যা: সাদা দল
সচিবালয়ে কর্মচারীদের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা
আবারও নগর ভবনের সামনে ইশরাক সমর্থকরা, শপথ না পড়ানো পর্যন্ত অবস্থানের ঘোষণা
আজ থেকে সারাদেশে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ থাকবে জুয়েলারি প্রতিষ্ঠান
পদত্যাগ করতে পারেন ফারুক, দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত আমিনুল
হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা ও ছবি নিরাপদ রাখার ৬ উপায়
অল্প বয়সেই কোমর ব্যথা, কারণ ও প্রতিরোধের উপায়
আন্দোলনকারী প্রাথমিক শিক্ষকদের সঙ্গে উপদেষ্টার বৈঠক আজ
ইসলামে জাতীয় ঐক্যের আবশ্যকতা

জান্নাতের বিশুদ্ধ ছায়ায় এক কোরআনিক ভ্রমণ

অনলাইন ডেস্ক

পবিত্র কুরআনের ৫৬ নম্বর সুরা আল-ওয়াকিআহ এর মধ্যে কিয়ামতের বিভীষিকা, মানুষের বিভিন্ন স্তর এবং জান্নাত-জাহান্নামের পরিণতি খুবই হূদয়গ্রাহীভাবে তুলে ধরেছে। এই সুরার অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো জান্নাতিদের প্রতি আল্লাহর পক্ষ থেকে যে মহিমান্বিত আপ্যায়নের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে, তার অসাধারণ বর্ণনা। সুরার ১০ থেকে ৪০ নম্বর আয়াতে তিন শ্রেণির মানুষের কথা বলা হয়েছে ‘সাবিকুন’ (অগ্রগামী), ‘আসহাবুল ইয়ামিন’ (ডানদিকের লোকেরা) এবং ‘আসহাবুশ শিমাল’ (বামদিকের লোকেরা)। এখানে আমাদের আলোচ্য হলো আসহাবুল ইয়ামিন (২৭-৪০ নং আয়াত) অর্থাৎ ডানদিকের লোকেরা। এ জান্নাতের যারা অধিকারী হবেন তাঁদের আপ্যায়নে যা থাকবে আসুন কোরআনের ভাষায় জেনে নেই।

কাঁটাবিহীন কুলগাছ : আল্লাহ বিস্ময়ের ভঙ্গিতে ডানদিকের লোকদের (আসহাবুল ইয়ামিন) মর্যাদা ও সৌভাগ্যের দিকে ইঙ্গিত করছেন। তাদের অবস্থা এতই চমত্কার হবে যে, তা ভাষায় প্রকাশ করাও কঠিন। আল্লাহ তাঁদের জন্য জান্নাতকে সাজিয়েছেন অপরূপ কিছু সৌন্দর্যে। আল্লাহ বলেন : ‘তাঁরা যে উদ্যানে থাকবে সেখানে আছে কাঁটাবিহীন কুল গাছ।’ (সুরা ওয়াকিআহ, আয়াত : ২৮)

সারিবদ্ধ কাঁদিওয়ালা কলাগাছ : সুরা ওয়াকিয়ায় আল্লাহ জান্নাতের সৌন্দর্য বর্ণনা করতে গিয়ে সারিবদ্ধ কলাগাছের কথা উল্লেখ করেছেন, যে বর্ণনায় জান্নাতের প্রশান্তির এক অপূর্ব চিত্র ফুটে উঠেছে। এই সারিবদ্ধ কলাগাছগুলো জান্নাতবাসীদের জন্য সুসজ্জিত, ছায়াময় ও স্তরে স্তরে সাজানো কলার গাছ দিয়ে ভরা এক অনন্ত আশ্রয়ের প্রতীক। তাঁদের আবাসস্থলে থাকবে : ‘সারিবদ্ধ কাঁদিওয়ালা কলাগাছ।’ (সুরা ওয়াকিআহ, আয়াত : ২৯)

সুপ্রসারিত ছায়া : সেখানে থাকবে আরামদায়ক দীর্ঘ ছায়া। থাকবে না কোনো কষ্টের লেশ। এই ছায়া জান্নাতবাসীদের জন্য হবে উত্তপ্ততা, ক্লান্তিহীন বিশ্রাম ও প্রশান্তির এক অনবদ্য আশ্রয়স্থল। তাঁরা মহান রবের আপ্যায়নে মুগ্ধ হয়ে বিচরণ করবে জান্নাতের সুবিস্তৃর্ণ এলাকায়। তাদের জন্য থাকবে : ‘প্রসারিত ছায়া।’ (সুরা ওয়াকিআহ, আয়াত : ৩০)

প্রবহমান পানি : পানি আল্লাহর নেয়ামতসমূহের মধ্যে অন্যতম একটি। জান্নাতের এক অন্যতম সৌন্দর্য হলো সেখানে ঝর্ণাধারায় প্রবহমান নির্মল পানি থাকবে। এই পানি শুধু পান করার জন্যই নয়, এটি পরিবেশকে মনোমুগ্ধকর ও প্রশান্তিময় করে তুলবে। বর্ণিত হয়েছে : (তাদের জন্য থাকবে) ‘প্রবাহমান পানি।’ (সুরা ওয়াকিআহ, আয়াত : ৩১)

অফুরন্ত ফলমূল : আল্লাহ জান্নাতিদের জন্য প্রচুর ফলমূলের ব্যবস্থা রাখবেন। পৃথিবীর মৌসুমি ফলের মতো নয়, বরং চাহিদামতো তা সবসময় পাওয়া যাবে। যা আহরণ করতে থাকবেনা কোন বাধা, থাকবেনা ফুরিয়ে যাওয়ার ভয়। আল্লাহ বলেন : ‘প্রচুর ফলমূল (থাকবে) যা কখনো শেষ হবে না এবং (তা খেতে) বাধাপ্রাপ্তও হবে না।’ (সুরা ওয়াকিআহ, আয়াত : ৩২-৩৩)

উঁচু শয্যাসমূহ : এখানে জান্নাতিদের থাকার আরামদায়ক পরিবেশের কথা বলা হয়েছে। নরম, সুসজ্জিত ও উঁচু বিছানা মর্যাদা, সম্মান ও আরামের প্রতীক। কোরআনের ভাষায় বলা হয়েছে : ‘উঁচু শয্যাসমূহ’ (অথবা উঁচু স্থানে অবস্থানকারী শয্যাসঙ্গিনী হূরেরা)। (সুরা ওয়াকিআহ, আয়াত : ৩৪)

যারা পাবেন এ সম্মান : প্রাচীন সৎ ও ঈমানদার ব্যক্তি এই জান্নাতের মর্যাদা পাবেন। যেমন : নবী, রাসুল, সাহাবি এবং তাদের অনুসারীরা। আল্লাহ বলেন : ‘একটি বিরাট দল প্রাচীনদের মধ্য থেকে।’ (সুরা ওয়াকিআহ, আয়াত : ৩৯) পরবর্তী আয়াতটি আমাদের জন্য আশা ও প্রেরণার উত্স। এতে বোঝানো হয়েছে, শেষ যুগের মানুষরাও যদি ঈমান আনে ও সৎপথে চলে তবে তাঁরা জান্নাতের ওই একই নেয়ামত পাবে। আল্লাহ বলেন : ‘এবং একটি বিরাট দল পরবর্তীদের মধ্য থেকে।’ (সুরা ওয়াকিআহ, আয়াত : ৪০)

সুরার আয়াতগুলোতে জান্নাতের অপরূপ, চিরস্থায়ী এবং সম্মানজনক আতিথেয়তার এক অলৌকিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এটি কেবল কল্পনার স্বর্গ রাজ্য নয়, বরং যারা ঈমান আনে ও সত্কর্মে জীবন গঠন করে তাদের জন্য এক বাস্তব প্রতিদান। আমাদের উচিত, পার্থিব সকল চাহিদা কিংবা মোহ পরিত্যাগ করে ক্ষণস্থায়ী এ জীবনের পরিবর্তে অনন্ত জীবনের স্বাদ গ্রহণ করা এবং উল্লিখিত আয়াতগুলোর প্রতিশ্রুত বিষয়গুলোকে সামনে রেখে জীবন গড়ার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা। যেন মহান রবের প্রস্তুতকৃত বিশুদ্ধ ও প্রসারিত জান্নাতের বাগিচাই হয় আমাদের অনন্তকালীন ঠিকানা।

লেখক : শিক্ষক, প্যারামাউন্ট স্কুল এন্ড কলেজ, রাজশাহী।

সম্পর্কিত খবর

এই পাতার আরও খবর

সর্বশেষ