রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু কখনো আইপিএল শিরোপা জেতেনি। এই তথ্য জানতে আইপিএলের পাঁড় ভক্ত না হলেও চলে। বিরাট কোহলি দলটিতে এখনো খেলছেন, এবি ডি ভিলিয়ার্স, ক্রিস গেইলরা খেলে গেছেন, সে কারণেই দলটি সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণা একটু বেশিই। শিরোপা জিততে না পারলেও বেঙ্গালুরু আইপিএলে বেশ ধারাবাহিক।

আগের ১৭ মৌসুমের মধ্যে ৯ বার প্লে-অফ পর্বে উঠেছে; এবার নিয়ে ১০ বার। রানার্সআপ হয়েছে ৩ বার। কাল চতুর্থবারের মতো উঠল ফাইনালে। তবে এবারের গল্পটা আলাদা। এতটা দাপুটে পারফরম্যান্সে বেঙ্গালুরু এর আগে দেখাতে পারেনি। সে কারণেই কাল ফাইনাল নিশ্চিতের পর ক্রিকেট বিশ্লেষক টম মুডি, ভারতের সাবেক পেসার বরুণ অ্যারনরা বলেছেন, এবার শিরোপা বেঙ্গালুরুই জিতবে। কীভাবে এবারের আইপিএলে বেঙ্গালুরু এতটা দারুণ ক্রিকেট খেলল?

এক গল্পে অনেক নায়ক

বেঙ্গালুরু বলতেই কোহলি, গেইল, ডি ভিলিয়ার্সদের নাম ভেসে ওঠে। দলটি এত দিন যা করেছে, তা মূলত কয়েকজন ক্রিকেটারের পারফরম্যান্সে ভিত্তি করে। এবার আর একই গল্প নয়। ফাইনালে ওঠার পথে দলটির হয়ে ম্যাচসেরার পুরস্কার জিতেছেন আটজন ক্রিকেটার। কখনো জিতেশ শর্মা বা সুয়শ শর্মা, কখনো ফিল সল্ট কিংবা টিম ডেভিড—কেউ না কেউ পারফর্ম করেছেনই।

কোহলি আছেন তাঁর মতোই

বেঙ্গালুরুতে এবার যে যাঁর কাজটা করছেন। জশ হ্যাজলউডের নেতৃত্বে বোলিং বিভাগ দারুণ করছে। ব্যাটিংয়ে ফিল সল্টরা নিজেদের কাজটা করছেন। মানে বেঙ্গালুরু আর শুধু কোহলিনির্ভর নয়। এই ‘রূপান্তর’এর মধ্যেও কোহলি কিন্তু পাল্টাননি। এবার ১৪ ম্যাচে রান করেছেন ৬১৪। গড় ৫৫.৮১, সেটাও ১৪৬.৫৩ স্ট্রাইক রেটে। ১৪টি ম্যাচের মধ্যে ফিফটিই করেছেন ৮টিতে।

অলরাউন্ড বোলিং আক্রমণ

একদিকে হ্যাজলউড, অন্যদিকে ভুবনেশ্বর কুমার। মানে নতুন বল নিয়ে চিন্তা নেই। দুজনেই পারফর্ম করেছেন। ভুবি নিয়েছেন ১৫ উইকেট আর হ্যাজলউড ২১টি। কাল পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে ২১ রানে ৩ উইকেট নেন হ্যাজলউড। এ দুজনকে সঙ্গে দিচ্ছেন যশ দেয়াল, তিনি নিয়েছেন ১২ উইকেট। বেঙ্গালুরুতে বিশ্বমানের স্পিনার নেই, এটি সত্য। সুয়শ শর্মা বা ক্রুনাল পান্ডিয়াদের সামর্থ্য নিয়েও প্রশ্ন ছিল। তাঁরা কেউই ওই অর্থে টুর্নামেন্টে রাজত্বও করছেন, তা-ও নয়। তবে তাঁরাও নিজেদের কাজটা করেছেন। কাল যেমন প্রথম কোয়ালিফায়ারে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা সুয়শ। টুর্নামেন্টে ক্রুনাল উইকেট নিয়েছেন ১৫টি। মানে সবাই নিজেদের কাজটা করাতেই এবারের আইপিএলে ভিন্ন বেঙ্গালুরুর দেখা মিলছে।

ভারতীয় ক্রিকেটারদের দারুণ পারফরম্যান্স

কোহলিকে না হয় এখানে একটু সরিয়ে রাখা যাক। তিনি ছাড়াও জিতেশ শর্মা, ভুবনেশ্বর, যশ, সুয়শ, ক্রুনাল—তাঁরা সবাই নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করেছেন। কোয়ালিফায়ার নিশ্চিতের ম্যাচে জিতেশের খেলা ৩৩ বলে ৮৫ রানের ইনিংসকে অনেকেই টুর্নামেন্টের সেরা ইনিংসও বলেছেন। কাল কোয়ালিফায়ারেও ম্যাচসেরা হয়েছেন একজন ভারতীয়—সুয়শ। আরেকটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। এর আগে বেঙ্গালুরুর হয়ে ৩ নম্বরে খেলেছেন দেবদূত পাড়িক্কাল। ১০ ম্যাচে ১৫০ স্ট্রাইক রেটে ২৪৭ রান করা পাড়িক্কাল চোটের কারণে টুর্নামেন্ট থেকে ছিটকে গেছেন। তাঁর জায়গায় এসেছেন মায়াঙ্ক আগারওয়াল। দলে সুযোগ পেয়েই এই ভারতীয় বেঙ্গালুরুর জয়ে অবদান রেখেছেন। কোয়ালিফায়ার নিশ্চিতের ম্যাচে খেলেছেন ২৩ বলে ৪১ রানের অপরাজিত ইনিংস। কাল করেছেন ১৩ বলে ১৯ রান।

‘দ্য সল্ট ইমপ্যাক্ট’

বেঙ্গালুরুর এই ওপেনার ৫০০–৬০০ রান করেননি। তবে যখনই খেলেছেন বাকি ব্যাটসম্যানদের জন্য কাজটা সহজ করে দিয়েছেন। ইংলিশ এই তারকা ব্যাটিং করেছেন ১৭৫.৯০ স্ট্রাইক রেটে। এভাবে খেলে তিনি রান করেছেন ৩৮৭। শুরুর দিকে সল্টের বিধ্বংসী ব্যাটিং কোহলির ওপর চাপ কমিয়েছে। কোহলি খেলতে পেরেছেন নিজের মতো।

ভারসাম্যপূর্ণ এক দল গড়েই মূলত সফলতা পেয়েছে বেঙ্গালুরু। জিতেছে টুর্নামেন্টের সব কটি অ্যাওয়ে ম্যাচে, যা নিঃসন্দেহে কোহলির আইপিএল শিরোপা–খরা কাটাতে বাড়তি প্রেরণা জোগাচ্ছে। গত মার্চে আইপিএলের ১৮তম আসর শুরুর দিনই বেঙ্গালুরুর ম্যাচ ছিল। আইপিএলের পক্ষ থেকে সেদিন একটি পোল খোলা হয়। কোহলিকে টিভি স্ক্রিনে দেখাতেই পোলের প্রশ্নটিও করা হয়: ১৮তম আসরে কি প্রথমবারের মতো আইপিএল শিরোপার দেখা পাবেন ১৮ নম্বর জার্সিধারী? বেশির ভাগেরই উত্তর ছিল ‘হ্যাঁ’। এখন দেখা যাক, তা হয় কি না!