সিরিয়ার সরকারী কর্মচারীদের জন্য সৌদি আরব ও কাতার যৌথভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রিন্স ফয়সাল বিন ফারহান। শনিবার দামেস্কে সিরিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আসআদ আল-শিবানির সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন তিনি।
দামেস্ক সফরে পৌঁছানোর পর সিরিয়ার পক্ষ থেকে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার প্রতিনিধিদলকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানানো হয়।
প্রিন্স ফয়সাল বলেন, সিরিয়ার রাষ্ট্রকর্মীদের জন্য সৌদি আরব ও কাতার যৌথভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান করবে।
সৌদি আরব ও সিরিয়া এর আগে আর্থিক খাতসহ দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদারে আলোচনা করেছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, সিরিয়ার ওপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সৌদি আরব ভূমিকা রাখছে এবং দেশটির পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে রিয়াদ অন্যতম প্রধান সহায়ক হিসেবে কাজ করে যাবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সৌদি আরব থেকে উচ্চপর্যায়ের একটি অর্থনৈতিক প্রতিনিধিদলও সফরে গেছে। সিরিয়ার সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদারে এই প্রতিনিধি দল আলোচনা করছে বলে জানান তিনি।
তিনি আরও জানান, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে সৌদি ব্যবসায়ীরা সিরিয়া সফর করবেন। তারা জ্বালানি, কৃষি, অবকাঠামোসহ বিভিন্ন খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করবেন।
সৌদি প্রেস এজেন্সির (এসপিএ) খবরে বলা হয়েছে, সৌদি আরব ও কাতার সিরিয়ার স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নে সমর্থন অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছে। তারা সিরিয়ার জনগণের সঙ্গে ঐতিহাসিক ও ভ্রাতৃসুলভ সম্পর্কের ওপর গুরুত্ব দিয়েছে।
দুই দেশই সিরিয়ায় অর্থনৈতিক ও সামাজিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত এবং জীবনমান উন্নয়নের ওপর জোর দিয়েছে। তারা একটি সমন্বিত ও বিস্তৃত দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও উন্নয়ন সহযোগীদের সঙ্গে কাজ করতে চায় বলেও জানিয়েছে এসপিএ।
পরবর্তীতে শনিবার উভয় দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দামেস্কের উমাইয়া মসজিদ পরিদর্শন করেন।
এছাড়াও, প্রিন্স ফয়সাল সিরিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় সৌদি অর্থনৈতিক প্রতিনিধিদল সিরিয়ার কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে, যা দেশটির অর্থনীতি শক্তিশালীকরণ ও প্রতিষ্ঠান নির্মাণে সহায়ক হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
চলতি মাসের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রিয়াদ সফরে এসে যুক্তরাষ্ট্রের সিরিয়ার ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন। এই পদক্ষেপ দেশটির অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারের পথ সহজ করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নও সম্প্রতি সিরিয়ার ওপর অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে।
গত ফেব্রুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট শারা বিদেশ সফরের অংশ হিসেবে সৌদি আরব যান—এটাই ছিল তার প্রথম বিদেশ সফর।
গত মাসে সৌদি আরব ও কাতার সিরিয়ার প্রায় ১.৫ কোটি ডলারের বিশ্বব্যাংকের ঋণ পরিশোধে সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেয়। তারা নতুন সরকারের গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হিসেবেও বিবেচিত।
সিরিয়া আশা করছে, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে আরও সহায়তা পাওয়া যাবে।
যুদ্ধ ও নিষেধাজ্ঞায় বিপর্যস্ত সিরিয়ার অর্থনীতি, অবকাঠামো ও শিল্প খাত মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির এক সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সিরিয়ার ‘হারানো জিডিপি’ প্রায় ৮০০ বিলিয়ন ডলার।
উল্লেখ্য, প্রিন্স ফয়সাল এর আগে জানুয়ারিতে নতুন সিরীয় প্রশাসনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দামেস্ক সফর করেছিলেন।
সূত্র: যুগান্তর