ফরিদপুরে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রী বৈশাখী ইসলাম বর্ষার (১৮) ওপর হামলার ঘটনায় নগরকান্দা থানায় পৃথক তিনটি মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ও ঘরবাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় দুটি মামলায় বাদী হয়েছেন ভুক্তভোগী বর্ষা।
এছাড়া পুলিশের ওপর হামলা ও কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে থানা পুলিশ বাদী হয়ে আরেকটি মামলা করেছে। এসব মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ৬ জনকে।
এদিকে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেত্রীর ওপর হামলার ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাহার (স্ট্যান্ড রিলিজ) করা হয়েছে নগরকান্দা থানার ওসি মো. সফর আলীকে। শনিবার বিকালে ফরিদপুরের পুলিশ সুপার (এসপি) এ আদেশ দিয়েছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মো. শামসুল আজম বলেন, জনস্বার্থে ও প্রশাসনিক কারণে নগরকান্দা থানার ওসি সফর আলীকে ফরিদপুর পুলিশ লাইনে সংযুক্ত করা হয়েছে।
এ ঘটনায় রাজনৈতিক দিক নিয়ে পালটাপালটি অভিযোগ উঠলেও দলমত নির্বিশেষে প্রকৃত হামলাকারীদের বিচারের দাবি জানিয়েছেন মারধরের শিকার নেত্রীসহ বৈষম্যবিরোধীর নেতারা।
বর্ষা নগরকান্দা উপজেলার ডাঙ্গী ইউনিয়নের ভবুকদিয়া গ্রামের সাবু শেখের মেয়ে। তিনি জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সংগঠক এবং সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী।
ছোট বোনকে উত্যক্তের প্রতিবাদ করায় গত শুক্রবার বিকালে বর্ষার ওপর হামলা চালায় স্থানীয় সেকেন কাজী ও তার ছেলে সাগর কাজীসহ কয়েকজন। এ সময় তার চুলের মুঠি ধরে রাস্তায় ফেলে পেটানো হয় এবং লাথি মারা হয় বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগী এ শিক্ষার্থী। তখন পুলিশের ওপরও হামলা চালায় উত্তেজিতরা।
ঘটনা শুনে সেখানে ছুটে যান বৈষম্যবিরোধী নেতারা। তখন তাদেরকেও ধাওয়া করা হয়। এর প্রতিবাদে রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ ও সেনাবাহিনী জড়িতদের গ্রেফতারের আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেয় তারা।
এ ঘটনার পর বর্ষা জানান, কয়েকদিন যাবৎ তার ছোট বোনকে উত্ত্যক্ত করে আসছিল স্থানীয় জালাল শেখের ছেলে শরিফ শেখ। এর প্রতিবাদে থানায় অভিযোগ করলে ওই এলাকায় থানা পুলিশ ছুটে যায়। এ সময় উত্যক্তকারী যুবককে পুলিশ আটক করলে উত্তেজিত হয়ে ওঠেন স্থানীয়রা। এ সময় শরীফ বেপারীর পক্ষ নিয়ে সেকেন কাজী ও তার ছেলে সাগর কাজীসহ কয়েকজন মিলে বর্ষাকে মারধর করেন।
তিনি বলেন, এক সময় হামলাকারীরা আওয়ামী লীগের এক পক্ষের নেতার সমর্থক ছিলেন। পট পরিবর্তনের পর তারা বিএনপির ছত্রছায়ায় এসেছেন। বর্তমানে তারা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক বদিউজ্জামান তারা মোল্যার সমর্থক।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হামলাকারী সেকেন কাজী ও সাগর কাজী পূর্বে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট জামাল হোসেনের সমর্থক ছিলেন। পট পরিবর্তনের পর স্থানীয় বাসিন্দা ও উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান তারা মোল্যার সমর্থক হিসেবে পরিচয় দেন।
এদিকে, গত শনিবার দুপুরে বর্ষার বাড়িতে ছুটে যান উপজেলা বিএনপির নেতারা। তখন বর্ষা বলেন, হামলাকারীরা যে দলেরই হোক তাদের বিচার করতে হবে। বিএনপির বা আওয়ামী লীগের হলেও বিচার করতে হবে।
উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান মোল্যা দাবি করেন, হামলাকারীরা আওয়ামী লীগ কর্মী। বিএনপির সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
নগরকান্দা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শওকত শরীফ বলেন, বিএনপিকে দায়ী করার জন্য মিথ্যা তথ্য সরবরাহ করা হয়েছে। বিএনপির কেউ এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন।
সূত্র: যুগান্তর