প্রশ্ন: ২ বছর আগে আমি বিয়ে করি, কিন্তু কাবিনের টাকা আমার সাধ্যের বাইরে হাওয়ায় এখনও সম্পূর্ণ আদায় করতে পারিনি। প্রতিমাসে বেতনের টাকা থেকে কিছু দিয়ে পরিশোধ করার চেষ্টা করছি, কিন্তু তারপরও আমার এখনো ২ লাখ ১৮ হাজার টাকা বাকি। কুরবানি দিতে চাইলে স্ত্রী এর বিরোধিতা করছে, এ অবস্থায় আমি কুরবানি দিতে পারব কি?
উত্তর: মোহর স্ত্রীর হক। কুরবানি আল্লাহর হক। মোহর অনাদায় থাকলে কুরবানি করার বিষয়ে ফিকহের কিতাবে এভাবে সমাধান এসেছে যে, যতদিন না স্বামী মোহর (মোহরানা) পরিশোধ করে, ততদিন তা স্ত্রীর পাওনা হিসেবে স্বামীর ওপর ঋণ হিসেবে গণ্য হয়।
এবং এ ঋণ ‘ঋণের ধরনসমূহের’ মধ্যে একটি দুর্বল ঋণ (দাইনে যঈফ) বলে বিবেচিত হয়। দুর্বল ঋণ হল এমন ঋণ, যা কোনো ধন সম্পদের বিনিময়ে না হয় (অর্থাৎ কোনো লেনদেন বা ব্যবসায়িক চুক্তির বদলে নয়)।
এই ধরনের ঋণ থাকলেও, যেহেতু তা আদায়যোগ্য কোনো সম্পদের উপর নির্ভরশীল নয়, তাই ঋণগ্রহীতা তখন পর্যন্ত ধনী বা সম্পদশালী গণ্য হয় না যতক্ষণ না সে সেই ঋণ পরিশোধ করে বা আদায় করে।
সুতরাং প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে, যেহেতু আপনার স্ত্রীর মোহর মুয়াজ্জাল (পরবর্তীতে দেওয়ার শর্তে নির্ধারিত) আপনার ওপর একটি দুর্বল ঋণ (দাইনুয-যঈফ), সেহেতু যদি এই ঋণ ছাড়া আপনার কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ না থাকে, তবে আপনার ওপর কুরবানি ওয়াজিব হবে না।
কুরবানি কাদের ওপর ওয়াজিব
প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজন-অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানি করা ওয়াজিব।
টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বর্তমানে বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।
আর নিসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি। টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে নিসাব হল সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া।
আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার উপর কুরবানি করা ওয়াজিব।
যেমন কারো নিকট কিছু স্বর্ণ ও কিছু টাকা আছে, যা সর্বমোট সাড়ে বায়ান্ন তোলা চাঁদির মূল্য সমান হয় তাহলে তার উপরও কুরবানি ওয়াজিব।
সূত্র: বাদায়েউস সানায়ে- ২/৩৯২, রদ্দুল মুহতার- ৯/৪৫৩