লিভার শরীরের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। বিভিন্ন কারণে লিভার অসুস্থ হয়ে পড়ে। এর মধ্যে আছে সংক্রমণ, মদ্যপান, ওষুধের প্রতিক্রিয়া, স্থূলতা, ক্যানসার ইত্যাদি। কারও কারও ক্ষেত্রে লিভারে রোগ বাসা বাঁধতেই বিভিন্ন উপসর্গ শরীরে ফুটে ওঠে। আবার অনেকের অজান্তেই লিভারের অসুখ বেড়ে যায় কোনো উপসর্গ ছাড়াই।
পেটব্যথা, ক্ষুধা না লাগা, ক্লান্তি, ডায়রিয়াসহ বেশ কিছু উপসর্গ লিভারের সমস্যা হলে দেখা দিতে পারে।
অল্পতেই রক্তক্ষরণ: লিভার রক্ত জমাট বাঁধার প্রোটিন তৈরি করে। যখন লিভার ঠিকমতো কাজ করে না, তখন শরীরে রক্তক্ষরণ সহজেই হতে পারে এবং সামান্য আঘাতেই চর্মের নিচে রক্ত জমে যেতে পারে।
মনোযোগের অভাব: লিভার যদি রক্তের বিষাক্ত পদার্থগুলো পরিষ্কার না করতে পারে, তবে সেগুলো মস্তিষ্কে জমা হতে পারে, যা মনোযোগের অভাব, স্মৃতিভ্রম এবং স্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তা হ্রাসের মতো সমস্যার কারণ হতে পারে।
ত্বক হলুদ হওয়া: ত্বক বা চোখ হলুদ হয়ে যাওয়া জন্ডিসের লক্ষণ। যখন লোহিত রক্তকণিকা থেকে বিলিরুবিন নামক একটি হলুদ পদার্থের অত্যধিক পরিমাণ তৈরি হয়, তখন এ সমস্যা দেখা দেয়। লিভার সঠিকভাবে কাজ করতে না পারলে বিলিরুবিন পরিষ্কার করতে পারে না। ফলে শরীরে বিলিরুবিনের প্রভাব বাড়তে থাকে।
চুলকানি: দীর্ঘস্থায়ী লিভারের সমস্যায় ভুগলে ত্বকে চুলকানি অনুভব করতে পারেন। ত্বকে ফুসকুড়ি না থাকলেও এমনটি ঘটে। এর ফলে ঘুমেও প্রভাব পড়তে পারে। ওষুধের সাহায্যে এই চুলকানি ভাব কমানো যায়। তার আগে লিভারের রোগ শনাক্ত করা জরুরি।
পেট ফোলা: পেট ফুলে ওঠাও লিভারের সমস্যার কারণ হতে পারে। লিভারে রক্তপ্রবাহকে বাধা দিলে এর চারপাশে রক্তনালিতে চাপ বাড়ে। যা পেট থেকে তরল বের করে ও তা সংগ্রহ করে। এ কারণে পেট বড় হওয়ার লক্ষণকে অবহেলা করবেন না।
পা ফুলে যাওয়া: লিভারের সমস্যা হলে অনেকেরই পা ও গোড়ালি ফুলে যায় ও তরল জমা হয়। কম লবণ খাওয়া ও ওষুধের সাহায্যে এ সমস্যা কমানো যায়।
প্রস্রাবের রং গাঢ় হলুদ: প্রস্রাবের রং গাঢ় হলুদ ও ফ্যাকাশে মলত্যাগ করলে সাবধান হয়ে যান। লিভারের সমস্যা হলে মলের রং বাদামি হয়। জন্ডিসের সমস্যা বেড়ে গেলেও ফ্যাকাশে মলত্যাগ হতে পারে। অতিরিক্ত বিলিরুবিন ত্বকের পাশাপাশি প্রস্রাবের রংও গাঢ় হলুদ করে তোলে।
ক্লান্তি: লিভার রোগে আক্রান্ত অনেকেই দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তিতে ভোগেন। শরীরে টক্সিন তৈরি হওয়ার কারণে এটি ঘটে। শরীর ও রক্তপ্রবাহে বিষাক্ত পদার্থ বেড়ে গেলে মস্তিষ্কের কার্যকারিতাতেও ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে। ফলে হঠাৎ করেই বিভিন্ন বিষয় ভুলে যাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়।
পেট খারাপ: অতিরিক্ত পেট খারাপের সমস্যা হলেও সাবধান হতে হবে। লিভারের রোগের কারণে শরীরে টক্সিনের মাত্রা বেড়ে গেলে পেট খারাপ এবং বমি বমি ভাব ও বমি হতে পারে। লিভার বিকলের ক্ষেত্রে বমি বা মলের সঙ্গেও রক্ত পড়তে পারে।
ক্ষত সৃষ্টি: লিভার বিকলের কারণে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষতের সৃষ্টি হতে পারে। নাক দিয়ে রক্তপাতও হতে পারে। অনেকের আবার শরীরে রক্ত জমাট বেঁধে যায়।
রক্তনালি ভেসে ওঠা: ত্বকের নিচে রক্তনালিগুলো দেখা যাওয়া কিংবা মাকড়সার জালের মতো লালচে হয়ে ওঠার লক্ষণ দেখলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। এগুলো প্রায়শই গাল, নাক ও ঘাড়ে ঘটে। এমন দাগ হাতের তালুতেও দেখা দিতে পারে। এই লক্ষণ দেখলেই বুঝতে হবে লিভারের সমস্যা গুরুতর হয়ে উঠেছে।
ওজন হ্রাস: লিভারের সমস্যা থাকলে ওজন দ্রুত হ্রাস পেতে পারে। খাদ্যের স্বাদ না পাওয়া, খিদে কমে যাওয়া এবং লিভারের কার্যক্ষমতা কমে যাওয়ার কারণে শরীরের পুষ্টি শোষণের ক্ষমতা কমে যায়, যা দ্রুত ওজন হ্রাসের কারণ হতে পারে।
সূত্র: নিউজ টোয়েন্টিফোর