‘কুড়িতেই বুড়ি’ শব্দের সঙ্গে কম-বেশি সবাই পরিচিত। গ্রামাঞ্চলের প্রচলিত এ কথার অর্থও প্রায় সবার জানা-শোনা। সাধারণত অল্প বয়সেই ত্বক কুঁচকে যাওয়া বা বার্ধক্যের ছাপ দেখা দেয়াকে বোঝানো হয়।
অল্প বয়সেই ত্বক কুঁচকে যাওয়া বা বয়সের ছাপ পড়ার বিষয়টি কখনো কী ভেবে দেখেছেন? কেন এমনটা হয়, এর সমাধানই বা কী―এ নিয়ে ভারতীয় একটি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন বিশিষ্ট পুষ্টিবিদ তানিয়া মালিক চাওলা এবং পুষ্টিবিদ, ফিজিওথেরাপিস্ট এবং সার্টিফায়েড ডায়াবেটিস শিক্ষিকা ড. অর্চনা বাত্রা। এবার তাহলে এ ব্যাপারে জেনে নেয়া যাক।
পুষ্টিবিদ তানিয়া মালিক চাওলা জানিয়েছেন, নারীদের মধ্যে অকাল মেনোপজের ফলে অল্পতেই জৈবিক বার্ধক্য হয়। হরমোনের পরিবর্তনই একজন নারীর বার্ধক্যের পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বছরের পর বছর ধরে খাবার বাদ দেয়া, ঘুমের অভাব, গর্ভাবস্থাজনিত পুষ্টির অভাব এবং দীর্ঘস্থায়ী মানসিক চাপ একজন নারীর হরমোনের মাত্রাকে ভারসাম্যহীন করে ফেলে।
এ পুষ্টিবিদ জানিয়েছেন, নারীরা ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত ইস্ট্রোজেন তৈরি করে, এরপর এটি কমে যায়। ফলে বার্ধক্য, পেটের চর্বি, হাড়ের ক্ষয় ও বোধের অবক্ষয়কে ত্বরান্বিত করে। হরমোনজনিত সমস্যা থেকেই নারীদের মধ্যে অকাল মেনোপজ তৈরি হয়।
এ ব্যাপারে পুষ্টিবিদ, ফিজিওথেরাপিস্ট এবং সার্টিফায়েড ডায়াবেটিস শিক্ষিকা ড. অর্চনা বাত্রা বলেন, আমরা নারীরা ৫০ বছর বয়সের কাছাকাছি পৌঁছানোর পরপরই শরীরের বিপাক ক্রিয়া ধীরগতির হয়। ফলে ইস্ট্রোজেন-সহ অন্যান্য হরমোনের পরিবর্তন হয়।
ড. বার্তা ও পুষ্টিবিদ তানিয়া মালিক উভয়েই এ ব্যাপারে ব্যবহারিক কিছু পদক্ষেপের পরামর্শ দিয়েছেন। তাদের দাবি, এসব পদক্ষেপ মেনে চলা হলে নারীর মধ্যে অল্পতেই বার্ধক্যের ছাপ পড়বে না। বরং বিপরীতে তারুণ্য বজায় থাকবে। এবার তাহলে পদক্ষেপগুলো জেনে নেয়া যাক-
প্রোটিন গ্রহণের উন্নতি: কোনো নারীর মাসিক হওয়ার আগে বা পরে তার প্রতিকেজি ওজনের জন্য ৫-১০ গ্রাম প্রোটিনের প্রয়োজন। কিন্তু নারীরা সেই পরিমাণ প্রোটিন পান না। এ কারণে ৫০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যেও মূত্রাশয়ের সংক্রমণ (ইউটিআই) আকছার হয়ে থাকে। ইউটিআই ও অন্যান্য সংক্রমণের চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ বেশি ব্যবহার হয়। এ ক্ষেত্রে এই চিকিৎসাগুলো ভালো ও খারাপ, উভয় ব্যাকটেরিয়া (যা প্রোটিন বায়োটিক নামে পরিচিত, প্রাকৃতিকভাবে তন্ত্রে পাওয়া যায়) মেরে ফেলে। একইসঙ্গে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সিস্টেমেরও ক্ষতি করার সম্ভাবনা রাখে।
পরিপূরক: ভিটামিন ই, সি গ্রহণ সঠিক হাইড্রেশনে সহায়তা করতে পারে। যা ত্বকের স্থিতিস্থাপকতা ও শক্তি উন্নত করতে গুরুত্বপূর্ণ। সূর্যমুখী বীজ, বাদাম ও পালং শাকে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ই থাকে। আবার বেল, কাঁচা মরিচ, ব্রকোলি, কমলা ও টমেটোতে ভিটামিন সি থাকে। পাশাপাশি ভিটামিন ডি ও ক্যালসিয়াম গ্রহণের পরিমাণ বাড়ানো উচিত। শস্যদানা, রুটি ও জুসের মতো খাবারও গুরুত্বপূর্ণ। ম্যাগনেশিয়াম, ওমেগা ৩ এবং ভিটামিন বি৬, বি৯, বি১২-এর দৈনিক চাহিদা পূরণ করাও জরুরি।
ড. বার্তা পরামর্শ হিসেবে জানিয়েছেন, নিয়মিত প্রোবায়োটিক সাপ্লিমেন্ট খাওয়া উচিত। দই, পনির বাটারমিল্ক ও ইডলির মতো খাবার খেতে হবে, যা অন্ত্রের স্বাস্থ্য বজায় রাখে। এসব খাবার পাচনতন্ত্রকে শক্তিশালী করতেও সহায়তা করে।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ: নারীদের এই বয়সে উচ্চ রক্তচাপ সমস্যা হতে পারে। এ থেকে হৃদরোগের সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি থাকে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, খাবারের মধ্যে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। হৃদরোগমুক্ত খাদ্যাভ্যাসের অভ্যাস করতে হবে। লবণের পরিবর্তে খাদ্যতালিকায় রসুন গুঁড়ো, পেঁয়াজ গুঁড়ো, পেপারিকা, গোলমরিচ, লেবু ও তাজা ভেষজের মতো মশলা রাখতে পারেন। সবসময় মনে রাখতে হবে, সোডিয়াম-মুক্ত বা কম সোডিয়ামের কোনো খাবার খাওয়া ভালো।
শরীরচর্চা দরকার: সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন শরীরচর্চার প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পরিমাণ ঘুমানো প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। ফলে মানসিক ও শারীরিক সুস্থতা বাড়ে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।