যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং শুল্ক নিয়ে চলমান মতপার্থক্য দূর করার জন্য টেলিফোনে কথা বলেছেন। চীনের ওয়াশিংটন দূতাবাস জানিয়েছে, এই ফোনালাপ ট্রাম্পের অনুরোধে হয়েছে। যদিও আলোচনা সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি। হোয়াইট হাউস এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।
এই ফোনালাপ এমন এক সময়ে হলো যখন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে খনিজ পদার্থে শুল্ক আরোপ নিয়ে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। এতে দুই দেশের মধ্যে চলমান বাণিজ্য যুদ্ধ নতুন করে মাথাচাড়া দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। জানুয়ারিতে ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর দুই দেশ একটি ৯০ দিনের শুল্ক প্রত্যাহার চুক্তিতে স্বাক্ষর করে, যা ১২ মে থেকে কার্যকর হয়। এদিকে, ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের অভিযোগ এনে ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের শুল্ক দ্বিগুণ করেছেন এবং চিপ ডিজাইন সফটওয়্যার রপ্তানিতে বিধিনিষেধ বাড়িয়েছেন। ভবিষ্যতে এই চুক্তি কতদিন টিকবে তা নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে।
দুই বিশ্ব নেতার ফোনালাপের খবর বিশ্ববাজারে কোনো বড় পরিবর্তন আনতে পারেনি, যদিও বিনিয়োগকারীরা এই আলোচনার ওপর নজর রাখছেন। ব্যবসায়ীরা আশঙ্কা করছেন, ভবিষ্যতে বাণিজ্য যুদ্ধ তীব্র হলে বড়দিনের কেনাকাটার মৌসুমে ব্যবসার ক্ষতি হতে পারে।
ট্রাম্প এর আগে একাধিকবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক বাড়ানোর হুমকি দিলেও শেষ মুহূর্তে কিছু সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেছেন। এই অনিশ্চয়তা বিশ্ব বাজারে উদ্বেগ তৈরি করেছে। এপ্রিল মাসে চীন কিছু গুরুত্বপূর্ণ খনিজ ও চুম্বকের রপ্তানি স্থগিত করায় গাড়ি নির্মাতা, কম্পিউটার চিপ প্রস্তুতকারী এবং সামরিক খাতের কোম্পানিগুলো সরবরাহ সংকটে পড়েছে।
গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্র চীনকে তার প্রধান ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বিবেচনা করছে। যদিও ট্রাম্প চীনা প্রেসিডেন্ট শি’র প্রশংসা করেছেন এবং তাঁর নেতৃত্বের স্থায়িত্বের দিকটি তুলে ধরেছেন।
ট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর ভিডিওকলে পুতিনের সঙ্গে শি’র বৈঠকট্রাম্প দায়িত্ব নেওয়ার পর ভিডিওকলে পুতিনের সঙ্গে শি’র বৈঠক
ট্রাম্প ও শি শেষ কবে ফোনে কথা বলেছেন, তা স্পষ্ট নয়। ট্রাম্প জানিয়েছেন, ২০ জানুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই শি’র সঙ্গে তাঁর কথা হয়েছে। চীন বলছে, ১৭ জানুয়ারির পর দুই নেতার মধ্যে কোনো ফোনালাপ হয়নি। এই পরিস্থিতিতে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েছে। কারণ একটি অপ্রত্যাশিত বাণিজ্য যুদ্ধ মার্কিন ব্যবসায় নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। ট্রাম্পের শুল্কনীতি বর্তমানে মার্কিন আদালতেও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
ট্রাম্প ও শি মুখোমুখি শেষবার দেখা করেছিলেন ২০১৯ সালে জাপানের ওসাকায়। শি’র সর্বশেষ যুক্তরাষ্ট্র সফর ছিল ২০২৩ সালের নভেম্বরে, প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আমন্ত্রণে। সেই সফরে ফেন্টানাইল উৎপাদন নিয়ন্ত্রণ এবং সামরিক যোগাযোগ পুনরায় শুরুর বিষয়ে চুক্তি হয়েছিল। এবারের ফোনালাপ শুল্ক ও বাণিজ্য যুদ্ধ নিয়ে নতুন দিক উন্মোচন করতে পারে কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স