গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস মা ও গর্ভের শিশুর মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। গর্ভধারণের শেষ ৪-৮ সপ্তাহে শিশুর মৃত্যুঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় কয়েকগুণ যদি না ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। এসময় শিশুর ওজন অনেক বেড়ে যায়। এটাকে ম্যাক্রোসোমিয়া (macrosomia) বলা হয়।
এই অবস্থা হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মাতৃস্বাস্থ্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় (সিজারিয়ান সেকশন) অস্ত্রোপচার দরকার হয়ে উঠে। রক্তে গ্লুকোজ কমে হাইপোগ্লাইসেমিয়ায় আক্রান্ত হয় শিশুরা। তাছাড়া বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। মায়ের জন্য খুব ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে।
গর্ভবতী অবস্থায় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ না থাকলে মায়ের গর্ভাশয়ে পানির পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়, যাকে আমরা বলি অ্যামোনিওটিক ফ্লুইড (Amniotic fluid)। যা পলি হাইড্রোমিনিয়াস (Polyhydramnious) নামে পরিচিত। তখন মায়েদের উচ্চ রক্তচাপ, একলাম্পশিয়ায় বা খিঁচুনিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকগুণ বেড়ে যায় এবং মা ও শিশুর জন্য জীবনের ঝুঁকি হয়ে যায়। তাই মা ও শিশুর নিরাপত্তার জন্য এর সঠিক চিকিৎসা জরুরি।
দেখা যাচ্ছে যেসব মেয়েদের গর্ভের আগে ডায়াবেটিস কখনই ছিল না কিন্তু অন্তসত্ত্বা হওয়ার পর ২৪-২৮ সপ্তাহ থেকে গর্ভকালীন ডায়াবেটিস বা GDM দেখা যায়। এই সময় যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে না থাকে তাহলে শিশুর জন্য এবং মায়ের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এমনটি হলে শিশু অনেক সময় গর্ভে মারা যায় অথবা ডেলিভারির পড়ে বিভিন্ন জটিলতা ধারণ করে।
গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস নির্ণয় করার জন্য সাধারণত রক্ত পরীক্ষা করা হয়। ওরাল গ্লুকোজ টলারেন্ট টেস্ট ( OGTT) এই পরীক্ষা সাধারণত গর্ভাবস্থার ২৪ থেকে ২৮ সপ্তাহের মধ্যে করা হয়ে থাকে। ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা না খেয়ে থাকার পর একবার রক্ত পরীক্ষা এবং গ্লুকোজ পান করার পরে রক্ত পরীক্ষা করা হয়।দুই ঘণ্টা বিশ্রামের পর আপনার শরীর কীভাবে গ্লুকোজ পরিচালনা করে তা দেখার জন্য আরেকটি রক্তের নমুনা নেওয়া হয়।
প্লাজমা গ্লুকোজের মাত্রা 5.6mmol/L বা তার বেশি হলে বা ২ ঘণ্টার প্লাজমা গ্লুকোজের মাত্রা 7.8mmol/L বা তার বেশি হলে সাধারণত আপনার গর্ভকালীন ডায়াবেটিস ধরা পড়বে। তাই গর্ভাবস্থায় ডায়াবেটিস সম্পর্কে খুবই সতর্ক থাকতে হবে।
লেখক: ডা. আয়েশা আক্তার
উপপরিচালক, ২৫০ শয্যার টিবি হাসপাতাল।