গুগল অ্যাকাউন্ট এখন আর শুধু ই-মেইল ব্যবহারের উপায় নয়—এটি হয়ে উঠেছে ব্যক্তিগত ও পেশাগত জীবনের ডিজিটাল চাবিকাঠি। অনলাইনে ফাইল সংরক্ষণ, গুগল ম্যাপ, ফটোস, ইউটিউব, ড্রাইভ থেকে শুরু করে নানা আর্থিক লেনদেনেও নির্ভর করি এই একটিমাত্র অ্যাকাউন্টের ওপর। ফলে গুগল অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হলে শুধু ইমেইল নয়, ব্যবহারকারীর ব্যক্তিগত তথ্য, ছবি, যোগাযোগ, এমনকি আর্থিক নিরাপত্তাও মারাত্মকভাবে হুমকির মুখে পড়ে।
তবে সচেতন হলে এ বিপদ এড়ানো সম্ভব। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ নিরাপত্তা ব্যবস্থা মেনে চললেই গুগল অ্যাকাউন্টকে রাখা যায় অনেক বেশি সুরক্ষিত। চলুন জেনে নেওয়া যাক, গুগল অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখতে ঠিক কোন ৬টি বিষয় অবশ্যই অনুসরণ করা উচিত।
১. শক্তিশালী ও আলাদা পাসওয়ার্ড ব্যবহার
গুগল অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখতে প্রথম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো একটি শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা। সহজে অনুমানযোগ্য নাম, জন্মতারিখ বা সাধারণ শব্দের বদলে পাসওয়ার্ডে ছোট ও বড় হাতের অক্ষর, সংখ্যা এবং বিশেষ চিহ্ন ব্যবহার করে জটিলতা বাড়ানো উচিত। একই পাসওয়ার্ড একাধিক অ্যাকাউন্টে ব্যবহার না করে প্রতিটির জন্য আলাদা পাসওয়ার্ড রাখাই নিরাপদ। যদিও এতগুলো পাসওয়ার্ড মনে রাখা কঠিন হতে পারে, তবে সে ক্ষেত্রে নির্ভরযোগ্য কোনো পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের সাহায্য নেওয়া যেতে পারে।
২. দুই স্তরের যাচাইকরণ সুবিধা চালু
শুধু শক্তিশালী পাসওয়ার্ড অ্যাকাউন্টের সুরক্ষায় যথেষ্ট নয়। এ জন্য বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা হিসেবে গুগল অ্যাকাউন্টে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন বা দুই স্তরের যাচাইকরণ সুবিধা চালু করতে হবে। এ সুবিধা চালু থাকলে নতুন কোনো যন্ত্র থেকে গুগল অ্যাকাউন্টে প্রবেশের সময় পাসওয়ার্ডের পাশাপাশি তথ্য যাচাইয়ের প্রয়োজন হয়। ফলে গুগল অ্যাকাউন্ট নিরাপদ থাকে।
৩. অপ্রয়োজনীয় যন্ত্র থেকে সাইন আউট
অনেকেই পুরোনো ফোন, ট্যাবলেট বা অন্য কারও কম্পিউটার থেকে গুগল অ্যাকাউন্টে লগইন করেন, কিন্তু কাজ শেষে সাইন আউট করেন না। এতে নিজের অজান্তেই অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই মাসে অন্তত একবার লগইন করা যন্ত্রগুলো যাচাই করে অপ্রয়োজনীয় বা অচেনা যন্ত্র থেকে গুগল অ্যাকাউন্ট সাইন আউট করতে হবে। গুগল অ্যাকাউন্টে লগইন করা প্রতিটি যন্ত্রের তালিকা গুগল নিজেই সংরক্ষণ করে। তাই ‘ইউর ডিভাইসেস’ অপশন থেকে অ্যাকাউন্টে লগইন করে অচেনা যন্ত্র থেকে গুগল অ্যাকাউন্ট সাইন আউট করতে হবে।
৪. অ্যাপের অপ্রয়োজনীয় অনুমতি বাতিল
অনেকেই বিভিন্ন ওয়েবসাইট বা অ্যাপে ‘সাইন ইন উইথ গুগল’ অপশন ব্যবহার করেন। কিন্তু কিছুদিন পর এসব অ্যাপ আর ব্যবহার করা হয় না। ফলে গোপনে সেই অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করতে পারে হ্যাকাররা। এ সমস্যা সমাধানে গুগল অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সাইন ইন করা অ্যাপের অপ্রয়োজনীয় অনুমতি বাতিল করতে হবে।
৫. পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহারের সময় ভিপিএন ব্যবহার
পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহারের সময় ভার্চ্যুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএনের সাহায্যে তথ্য নিরাপদ রাখা সম্ভব। কারণ, ভালো মানের ভিপিএনে ব্যবহারকারীদের তথ্য কোড যুক্ত বা এনক্রিপ্ট করে বিনিময় করা হয়। এ কারণে সহজে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহ করতে পারে না হ্যাকাররা। তাই গুগল অ্যাকাউন্ট নিরাপদ রাখতে পাবলিক ওয়াই-ফাই ব্যবহারের সময় ভিপিএন ব্যবহার করতে হবে।
৬. অচেনা লিংকে ক্লিক থেকে বিরত থাকা
ফিশিং বা প্রতারণামূলক লিংক হলো হ্যাকারদের সবচেয়ে পুরোনো কিন্তু কার্যকর অস্ত্র। তাই কোনো সন্দেহজনক ই–মেইল বা বার্তায় লিংক দেওয়া থাকলে তাতে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকতে হবে।