মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার ধনকুবের বন্ধু ইলন মাস্কের সম্পর্কের ফাটল নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই বেশ সরগরম গোটাবিশ্ব। এই দুই পরম বন্ধুর সম্পর্ক যে এখন আর বন্ধুত্বের জায়গায় নেই বর্তমানে তা অনেকটাই স্পষ্ট।.
কয়েকদিন আগেও তাদের বন্ধুত্ব ছিল আলোচনার বিষয়। হঠাৎ তাদের মধ্যে দূরত্বের গুঞ্জন ওঠে, এরপর গুঞ্জন মুহূর্তেই বাগযুদ্ধ হিসেবে সবার সামনে আবির্ভূত হলো। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের ওপর ভর করে ইলন মাস্কের যেসব ব্যবসাপাতি চলছে সেগুলো নিয়ে তাকে হুমকিও দিয়েছেন সাবেক বন্ধু ডোনাল্ড ট্রাম্প।
সুতরাং তাদের সম্পর্কে যে বড়সড় ফাটল ধরেছে তা বুঝতে আর কারো বাকি নেই।
এখন ডোনাল্ড ট্রাম্প যদি তার সরকারকে মাস্কের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেন, তাহলে এই টেক বিলিয়নিয়ারের শান্তির ঘুম যে নষ্ট হবে তা বলাই যায়। এরই মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ট্রাম্পের দেওয়া পোস্টের কারণে বেশ ভালো আকারেই ভুগতে হয়েছে ইলন মাস্ককে।
এবার স্টারলিংক নিয়ে হোয়াইট হাউসের কয়েকজন কর্মকর্তা ভয়ংকর তথ্য দিয়ে ইলনকে আরও দুশ্চিন্তায় ফেলে দিয়েছে।
হোয়াইট হাউজের কয়েকজন বিশেষজ্ঞের মতে, ইলন মাস্কের উপগ্রহ-ভিত্তিক ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক স্টারলিংকে নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। আমেরিকার জনপ্রিয় সংবাদপত্র ‘দ্য ওয়াশিংটন পোস্ট’-এ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে তথ্যটি জানানো হয়।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, হোয়াইট হাউসে স্টারলিংকের ইন্টারনেট সংযোগ দেওয়ার সময় এর সঙ্গে সম্পৃক্ত এমন তিনজনের বক্তব্যের ভিত্তিতে খবরটি প্রকাশ করেছে তারা। স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় ওই তিন ব্যক্তি নিজেদের পরিচয় প্রকাশ করেননি বলেও জানিয়েছে মার্কিন পত্রিকাটি।
যদিও ওই তিন ব্যক্তির বক্তব্য, গত ফেব্রুয়ারিতে মাস্কের ডিওজিই প্রতিনিধিরা হোয়াইট হাউজের পাশের আইজেনহাওয়ার এক্সিকিউটিভ অফিস ভবনের ছাদে একটি টার্মিনাল বসান। কিন্তু ঘটনাটি হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ ব্যবস্থার দায়িত্বে থাকা কর্তাব্যক্তিদের আগে থেকে জানানো হয়নি।
তাদের ভাষ্য, এ ধরনের সংযোগের মাধ্যমে সংবেদনশীল তথ্য বাইরে চলে যাওয়া কিংবা হ্যাকারদের অনুপ্রবেশ ঠেকানোর সক্ষমতা হোয়াইট হাউসের যোগাযোগ ব্যবস্থা দেখভালের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের নেই।
হোয়াইট হাউসের ওই ব্যক্তিদের তথ্যানুযায়ী, ফেব্রুয়ারি মাসে হোয়াইট হাউস প্রাঙ্গণে মোবাইল ফোনে ‘স্টারলিংক গেস্ট’ নামে ওয়াই-ফাই নেটওয়ার্ক দেখাতো, যেখানে শুধু পাসওয়ার্ডই চাইতো। ব্যবহারকারীর নাম বা দ্বিতীয় স্তরের যাচাই পদ্ধতি ছিল না। এই ওয়াইফাই নেটওয়ার্কটি গেল সপ্তাহেও হোয়াইট হাউসে পাওয়া গেছে বলে দাবি তাদের।
ওই তিন কর্মকর্তার একজন বলেন, কর্মীরা যেসব কম্পিউটারে কাজ করেন, সেগুলো কঠোর নিরাপত্তা প্রোগ্রাম লক করা থাকে। বাইরের জগতের সঙ্গে তাদের যে কোনো যোগাযোগও নজরদারিতে রাখা হয়। কিন্তু স্টারলিংকে কিছুই লাগে না। এটা আপনাকে এমনভাবে তথ্য পাঠাতে দেয়, যেখানে কোনো রেকর্ড বা ট্র্যাকিংয়ের সুযোগ থাকে না।
তিনি আরও বলেন, নেটওয়ার্কে হোয়াইট হাউসের আইটি সিস্টেমের জোরালো নিয়ন্ত্রণ থাকে। সব সময় পুরোপুরি ভিপিএন টানেলে থাকতে হয়। আপনি ভিপিএনে না থাকলে হোয়াইট হাউসের ডিভাইসগুলো বাইরের ইন্টারনেট সংযোগে কাজ করবে না।
ওই তিনজনের আরেকজন বলেন, স্টারলিংকের সংযোগ হোয়াইট হাউসের ডিভাইসগুলোকে বাইরের নেটওয়ার্কে যেতে বাধা দেয় না। এটি নিরাপত্তা ব্যবস্থা বাইপাস করতে সহায়তা করে।
ওয়াশিংটন পোস্ট বলছে, তারা এ বিষয়ে হোয়াইট হাউসের বক্তব্য চেয়েছিল। কিন্তু তারা বিষয়টি যুক্তরাষ্ট্রের সিক্রেট সার্ভিসে পাঠিয়ে দেয়। সিক্রেট সার্ভিস বলেছে, নিরাপত্তাজনিত কারণে নির্দিষ্ট প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা সম্পর্কে তাদের মন্তব্য করার এখতিয়ার নেই।
সিক্রেট সার্ভিসের মুখপাত্র অ্যান্টনি গুগলিয়েলমি বলেন, আমরা জানতাম ডিওজিই হোয়াইট হাউস কমপ্লেক্সে ইন্টারনেট সংযোগ উন্নত করতে চাচ্ছে এবং আমরা এটিকে নিরাপত্তার জন্য হুমকি বিবেচনা করিনি।
এছাড়া এ বিষয়ে স্টারলিংকের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হয়েছিল বলে দাবি করা হয় ওয়াশিংটন পোস্টের পক্ষ থেকে। তবে স্টারলিংকের তরফ থেকে কোনো সাড়া পাওয়া যাননি বলে জানিয়েছে তারা। যদিও ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠানটি বরাবরই বলে আসছে যে, তাদের স্যাটেলাইট সংযোগগুলো হ্যাক করা তুলনামূলক কঠিন।
সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট